গবেষকরা প্রতি কেজি অয়েস্টার প্রকৃতির ঝিনুকের মধ্যে ১১ হাজার ২২০টি ফাইবারগ্লাস কণা ও প্রতি কেজি মাসলস শ্রেণীর ঝিনুকের ভেতরে দুই হাজার ৭৪০টি ফাইবারগ্লাস কণা খুঁজে পেয়েছেন।
Published : 04 Jul 2024, 06:10 PM
বিশ্বব্যাপী ছোট নৌকা তৈরিতে ব্যবহৃত ফাইবারগ্লাসের কণা মিলেছে সামুদ্রিক প্রাণীদের ‘পেটে’।
‘ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথ’ ও ‘ব্রাইটন ইউনিভার্সিটি’র বিজ্ঞানীরা ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে ধরা পড়া শেলফিশ বা ঝিনুকের মধ্যে এক মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের কাঁচের কণার সন্ধান পেয়েছেন।
হালকা ও টেকসই হওয়ার কারণে ফাইবারগ্লাস নৌকা তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত উপাদান।
এসব ফাইবারগ্লাস বা ‘গ্লাস রিইনফোর্সড’ প্লাস্টিকের সুই আকৃতির বিভিন্ন টুকরো এত বেশি তীক্ষ্ণ যে এর মধ্যে কিছু বল্লম আকৃতির জৈবিক টিস্যুও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্বাই নিউজ।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও পরিবেশ দূষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফায়ে কুসেইরো বলেছেন, যারা ঝিনুক খেয়ে থাকেন এক্ষেত্রে তাদের ঝুঁকি বোঝার জন্য জরুরি ভিত্তিতে এ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
“গ্লাস ফাইবার পাওয়া গেছে এমন সব জায়গায় অর্থাৎ ঝিনুকের টিস্যুতে এটি ঘাঁ তৈরি করছে।”
“আমরা এখনও জানি না, মানব স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব কী। তবে সম্ভবত টিস্যুতে ঘাঁ তৈরি করার মতো একইরকম কিছু ঘটবে।”
দক্ষিণ ইংল্যান্ডে ‘চিচেস্টার হারবার’-এর একটি ব্যস্ত নৌকা ঘাটের কাছে ধরা পড়া ঝিনুক নিয়ে এ গবেষণা করেছেন গবেষকরা।
উচ্চ ক্ষমতার মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে গবেষকরা প্রতি কেজি অয়েস্টার প্রকৃতির ঝিনুকের মধ্যে ১১ হাজার ২২০টি ফাইবারগ্লাস কণা ও প্রতি কেজি মাসলস শ্রেণীর ঝিনুকের ভেতরে দুই হাজার ৭৪০টি ফাইবারগ্লাস কণা খুঁজে পেয়েছেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঝিনুকের পেটে এই ফাইবারগ্লাস মিলেছে ও ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করার আগে যদি এদের পরিষ্কার পানিতে রাখা হয় তবে এগুলো দূর করা সম্ভব।
তবে ঝিনুকের মাংসের মধ্যে কয়েকশ’ কাঁচের কণা পাওয়া গেছে, যেগুলো শেষ পর্যন্ত মানুষের পেটে যাওয়াও বিচিত্র কিছু নয়।
“ফাইবার গ্লাসের সংখ্যা দেখে আমি অবাক হয়েছি। তবে আমার ধারণা, এখনও এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার সময় আসেনি। ফলে, এখনই এগুলো খাওয়া বন্ধ করার দরকার নেই,” বলেছেন অধ্যাপক কুসেইরো।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ঝিনুক বিক্রেতাদের উচিৎ হবে, খাদ্য হিসাবে বিক্রির আগে যতটা সম্ভব এগুলো কেটে পরিষ্কার করার বিভিন্ন উপায় খুঁজে দেখা।
এরইমধ্যে মানবদেহের টিস্যুতে মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা করার জন্য ঝিনুকের পরিচিতি রয়েছে। এরা খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রতি মিনিটে কয়েক লিটার সমুদ্রের পানি চুষে নেয়।
এছাড়া, উপকূলীয় পানিকে দূষিত করে এমন ফাইবার ও অন্যান্য টুকরাও আটকে রাখে ঝিনুক।
‘ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথ’-এর সামুদ্রিক প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক গর্ডন ওয়াটসন বলেন, “এই ফাইবারের প্রভাব অনেক বেশি।”
“এইসব ঝিনুক অনেক ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। তবে এরা মাছের মতো অন্যান্য প্রাণীও খায় এবং বিভিন্ন কণা এড়িয়ে চলতে পারে, আর এভাবেই এরা খাদ্য শৃঙ্খলে বৃদ্ধি পায় বা বেড়ে ওঠে।”
ইংল্যান্ডের এক নৌ ঘাটে পাওয়া ঝিনুকেেএ সমস্যা দেখা গেলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি আরও অনেক জায়গায় ঘটতে পারে।