বড়দিনে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করল জাপানের চন্দ্রযান ‘স্লিম’

এখন মিশনটির পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে মহাকাশযানটি, যার মাধ্যমে এটি নিজের ‘মুন স্নাইপার’ তকমার প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করবে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2023, 10:18 AM
Updated : 26 Dec 2023, 10:18 AM

চন্দ্রপৃষ্ঠে নিজেদের প্রথম সফল অবতরণের মাইলফলক অর্জনের লক্ষ্যমাত্রায় আরও একধাপ এগিয়ে গেল জাপানের মহাকাশযান ‘স্লিম’। বড়দিনেই চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের সুখবর দিয়েছে ‘মুন স্নাইপার’ নামে পরিচিত নভোযানটি।

বড়দিনে (২৫ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় মধ্যরাত ২টা ৫১ মিনিটে (স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৫১ মিনিটে) নভোযানটি চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে জাপানের মহাকাশ সংস্থা ‘জাক্সা’।

“জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাক্সা)’ এ ঘোষণা দিতে পেরে আনন্দিত যে, ‘স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভেস্টিগেটিং মুন (স্লিম)’ সফলভাবে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছেছে।” --আপডেট পোস্টে লেখেন জাক্সা’র কর্মকর্তারা।

প্রযুক্তি সাইট স্পেস ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহাকাশযানটি এমন এক উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আছে, যা চাঁদকে একবার আবর্তনে সময় নেয় ৬ ঘণ্টা ২৪ মিনিট। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে এ কক্ষপথের সর্বনিম্ন দূরত্ব ছয়শ কিলোমিটার, যেখানে সর্বোচ্চ দূরত্ব গিয়ে ঠেকতে পারে চার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।

জাপানের লক্ষ্য, মহাকাশযানটিকে ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করানো। মিশনটি সফল হলে তা জাপানের জন্য ঐতিহাসিক মূহুর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ এখন পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত, এ চার দেশই কেবল চাঁদের পৃষ্ঠে সফলভাবে ‘সফট ল্যান্ডিং’ করেছে।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় নয় ফুট দীর্ঘ স্লিম নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়, যার সঙ্গে ছিল ‘এক্সরিজম’ নামের শক্তিশালী এক্স-রে স্পেস টেলিস্কোপও। পৃথিবীর কক্ষপথেই টেলিস্কোপটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরবর্তীতে, ৩০ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ থেকে বেরিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে শুরু করে নভোযানটি।

বড় দিনে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের মাধ্যমে সে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সুফল পেল স্লিম।

স্পেস ডটকম বলছে, এখন মিশনটির পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে মহাকাশযানটি, যার মাধ্যমে এটি নিজের ‘মুন স্নাইপার’ তকমার প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করবে।

স্লিমের লক্ষ্য, চন্দ্রপৃষ্ঠের ল্যান্ডিং জোনের ৩৩০ ফিট বা এর চেয়ে কম ব্যবধানে নামার চেষ্টা করা। সেটি সম্ভব হলে ভবিষ্যতে আরও উচ্চাভিলাষী অভিযান চালানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে।

“মিশনটির লক্ষ্য, ভবিষ্যতে চাঁদের পৃষ্ঠে অনুসন্ধান চালাতে কী ধরনের অবতরণমূলক প্রযুক্তি লাগবে, তা নিয়ে গবেষণা চালানো।” --মিশনের বিবরণিতে লিখেছেন জাক্সা’র কর্মকর্তারা।

“স্লিম ল্যান্ডারের মাধ্যমে মানুষ যে কোনো জায়গায় অবতরণে সক্ষমতা পাবে। তবে, এর আগে অবতরণের জন্য সহজ জায়গা খোঁজা হতো।”

সংস্থাটি আরও যোগ করে, এ লক্ষ্য অর্জিত হলে চাঁদের চেয়েও বেশি উপাদান থাকা গ্রহেও অবতরণের সম্ভাবনা তৈরি হবে।

সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে, অবতরণের পর চন্দ্রপৃষ্ঠে দুটি ক্ষুদ্রাকৃতির যন্ত্র বসাবে স্লিম। এ যন্ত্রগুলো ছবি তোলার মাধ্যমে মিশনের মনিটরিং দলকে স্লিমের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট দেবে। এর ফলে, পৃথিবীর সঙ্গে নভোযানটি ‘সরাসরি যোগাযোগের’ সুযোগ পাবে বলে মিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছেন জাক্সা’র কর্মকর্তারা।

তবে, চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছানো জাপানী প্রথম নভোযান নয় এটি। ১৯৯০ সালে ‘হিটেন’ ও ২০০৭ সালে ‘সেলিন’ নামের দুটি নভোযান এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছিল।

মার্চে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল টোকিওভিত্তিক কোম্পানি আইস্পেস’র ল্যান্ডার ‘হাকুতো-আর’ । এর মাসখানেক পর নভোযানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের চেষ্টা করলেও সেন্সরে গোলযোগ ঘটায় বিস্ফোরিত হয় এটি।