সহকর্মীদের রূঢ় ভাষায় ইমেইল পাঠানোর অভিযোগ ছিল লিনাস তোরভাল্ডসের নামে। মাসখানেকের নিবিড় পরিচর্যার পর এবার যেন লিনাক্সের ‘নতুন সংস্করণের’ মতো কাজে ফিরলেন লিনাক্সের এই জনক।
Published : 25 Oct 2018, 12:56 AM
লিনাক্স কারনেল উদ্ভাবনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তোরভাল্ডস। ১৯৯১ সালে এমএস-ডস অপারেটিং সিসটেমে আইবিএমের পারসোনাল কমপিউটার কেনেন তিনি। কিন্তু এমএস-ডসে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাচ্ছিলেন না লিনুস। খুঁজছিলেন ইউনিক্স অপারেটিং সিসটেমের মতো কিছু একটা।
এদিকে ইউনিক্সের সবচেয়ে সস্তা সংস্করণটিও পাঁচ হাজার ডলারের কম ছিল না। পছন্দসই অপারেটিং সিসটেমটি কিনতে না পারাই লিনাক্স উদ্ভাবনের প্রেরণা হয়ে উঠল। একশজন ডেভেলপারকে নিয়ে শুরু হয়ে গেল কাজে লেগে যাওয়া।
১৯৯৪ সালের মার্চে লিনাক্স কারনেলের ১.০ সংস্করণের মুক্তির মধ্যে দিয়ে এই মুক্ত সফটওয়্যারটি ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায়, আর সেই সঙ্গে পরিচিতি পেলেন এর পেছনের কারিগর তোরভাল্ডস।
বাইরের দুনিয়ায় তার পরিচিতি যত প্রেরণাদায়কই হোক না কেন, এই ফিনিশ-আমেরিকান সফটওয়্যার প্রকৌশলীকে কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের কাছে নিজের ‘অপেশাদারি’ আচরণের জন্য ক্ষমা চাইতে হয়েছিল।
গত সেপ্টেম্বরেই লিনাক্স কমিউনিটির সদস্যদের কাছে দীর্ঘ একটি ইমেইলে নিজের ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে কিছু দিনের বিরতি নেওয়ার ঘোষণা দেন তোরভাল্ডস।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি তোরভাল্ডসের সেই চিঠি প্রকাশ করে ১৭ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
সহকর্মীদের উদ্দেশে চিঠিতে তিনি বলেন, “আমার নিজের কিছু আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে, এবং আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী; আমার ব্যক্তিগত আচরণে কারনেল ডেভেলপমেন্ট পুরোপুরি ভিন্নদিকে সরে গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
চিঠিতে তিনি কিছুদিনের জন্য কাজে বিরতি নেওয়ার কথাও জানান দেন।
“আমি বিরতিতে যাচ্ছি এবং কীভাবে মানুষের আবেগকে অনুভব করতে হয় ও সেই অনুযায়ী সাড়া দিতে হয় তা বুঝতে সহায়তা নেব আমি।”
নিজের কঠোর দিকগুলোকে নমনীয় করে আত্মোন্নয়নে এই একমাসের বিরতিতে পরামর্শকের সহযোগিতা নেন তোরভাল্ডস।
বিরতি থেকে ফিরে এসে বিবিসিকে তিনি বলেন, যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে মনোযোগী হয়েছেন যা ‘লিনাক্স ব্যক্তিত্ব’ হয়ে উঠায় জরুরি ছিল।
তোরভাল্ডস তার আগের ব্যক্তিত্বকে ‘মানুষবান্ধব’ বলে মনে করেন না বলেও জানান।
মঙ্গলবার বিবিসির প্রতিবেদনে তার এই প্রত্যাবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, তোরভাল্ডসের এই ফিরে আসা লিনাক্স কোডারদের ‘কোড অফ কনডাক্ট’ চর্চায় উদ্বুদ্ধ করবে।
কর্মক্ষেত্র হিসেবে লিনাক্স ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি রুক্ষ হয়ে উঠেছিল, অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে উঠেছিল ‘নোংরামির আধার’, বিবিসিকে বলেন তোরভাল্ডস।
লিনাক্স কমিউনিটির এখনকার কোড অফ কনডাক্ট অনুযায়ী কর্মীদের প্রেরণামূলক শব্দ ব্যবহার করার পাশাপাশি বিপরীত মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, সমালোচনা গ্রহণ এবং সহকর্মীদের প্রতি সহনশীলতা দেখাতে বলা হয়েছে।
গ্রহণযোগ্য নয় এমন আচরণের একটি তালিকায় করা হয়েছে লিনাক্স কর্মক্ষেত্রে, যেখানে যৌন হয়রানিমূলক ছবি ও শব্দ ব্যবহার এবং ব্যক্তিআক্রমণও রয়েছে।
এই ‘কোড অফ কনডাক্ট’ তদারকির দায়িত্ব থাকবেন খোদ তোরভাল্ডসসহ শীর্ষপদে থাকা ডেভেলপাররা।