কৃষ্ণগহ্বরের ‘তারা গিলে খাওয়ার’ ছবি দেখালো হাবল

কোনো ছায়াপথে এই ধরনের ঘটনা প্রতি এক লাখ বছরে অল্প কয়েকবার ঘটে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ধরা পড়েছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2023, 05:22 AM
Updated : 20 Jan 2023, 05:22 AM

কিছু সংখ্যক নক্ষত্র বিশাল সুপারনোভায় বিস্ফোরিত হলেও বেশিরভাগ নক্ষত্র শীতল হওয়ার আগে নিজের সকল উপাদান ত্যাগ করে ছোট একটি কোর-এ সংকুচিত হয়ে নিজের জীবনাবসান ঘটায়। তবে, ক্ষুধার্থ কৃষ্ণগহ্বরের নক্ষত্র গিলে খাওয়ার দৃশ্য মহাবিশ্বে খুবই বিরল।

কোনো ছায়াপথে এই ধরনের ঘটনা প্রতি এক লাখ বছরে অল্প কয়েকবার ঘটে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ধরা পড়েছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপে। বিষয়টি উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের প্রতিবেদনে।

‘এটি২০২২ডিএসবি’ নামে ডাকা এই ঘটনায় গবেষকরা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের এক কৃষ্ণগহ্বরে একটি নক্ষত্রের জীবনের কিছু মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, নক্ষত্র গ্রাস করে এটি আলোর বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে।

কোনো কৃষ্ণগহ্বরের প্রভাবে নক্ষত্রের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার ঘটনা ‘টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্ট’ নামে পরিচিত। আর এটি ঘটে থাকে কোনো বিশালাকৃতির কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ শক্তির কারণে।

এইসব বিশালাকৃতির কৃষ্ণগহ্বর ছায়াপথের কেন্দ্রে লুকিয়ে থাকে। আর বেশি কাছাকাছি থাকা কোনো নক্ষত্র থেকে এগুলো বিভিন্ন গ্যাসের স্তর নিজের দিকে টেনে আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ভার্জ।

নক্ষত্র পুরোপুরি টুকরা টুকরা হওয়ার পর এর অবশিষ্টাংশ চলে যায় কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে থাকা ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’ নামে পরিচিত এক গোলাকৃতির বলয়ে। আর এই জায়গা থেকেই কৃষ্ণগহ্বর তা গিলে ফেলে।

“কৃষ্ণগহ্বর খুবই অগোছালো ভক্ষক।” -- ‘আমেরিকান অ্যাস্ট্রনমিকাল সোসাইটি’র বৈঠকে বলেছেন ‘হার্ভার্ড অ্যান্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিসিক্স’র গবেষক এমিলি এঙ্গেলথালার।

“তারা ভেতর থেকে এই ‘ডোনাট’ আকৃতির অ্যাক্রিশন ডিস্ক খেয়ে ফেলছে। আর তারা এতটাই খেয়ে বিকিরণ ঘটাচ্ছে, যার ফলে ওই ডিস্ক বড় ও সুন্দর স্থুলাকৃতির ডোনাটে পরিণত হচ্ছে।”

এইসব ঘটনা থেকে পাওয়া কিছু সংখ্যক বিকিরণ ‘জেট’ আকারে দূরে সরে যায়। তবে, এই গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া হয়েছে খোদ অ্যাক্রিশন ডিস্কের মধ্য দিয়ে আসা বিকিরণের ওপর।

নক্ষত্র থেকে নির্গত অতিবেগুনী রশ্মি দেখতে গবেষকরা হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ‘স্পেকট্রোকপি’ বা ‘বর্ণালীবিদ্যা’ নামে পরিচিত কৌশল। ওই আলোকে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ভেঙে এতে কী ধরনের পদার্থ শোষিত হয়েছে, তা দেখার উদ্দেশ্যে। এটি তাদের কী ধরনের উপাদান ছিল তা নির্ধারণ করতে এবং ব্ল্যাক হোলের চারপাশে উজ্জ্বল, গরম বিশৃঙ্খলার অভ্যন্তরে কী ঘটছে সে সম্পর্কে ধারণা দেয়।

অতিবেগুনী রশ্মিতে এমন ঘটনা সব সময় দেখা যায় না কারণ এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য সহজেই আটকে দেওয়া যায়। ফলে, ডেটা সংগ্রহ করাও জটিল হয়ে ওঠে। আর এগুলো সংগ্রহ করতে প্রয়োজন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে থাকা কোনো টেলিস্কোপ।

“অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের বেলায় অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এটা আমাদের জন্য ভালো হলেও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণে ভালো ফল দেয় না। এ কারণে, আমাদের মহাকাশে বসানো হাবলের মতো টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে হয়।” --বলেন এঙ্গেলথালার।