আগে থেকে চিহ্নিত বিপজ্জনক এলাকায় হাতির বিচরণের ওপর ভিত্তি করে এর শিকারের ঝুঁকি শনাক্ত করতে তথ্য ব্যবহার করবে এআই টুলটি।
Published : 26 Feb 2025, 05:00 PM
এআই কেবল মানব কল্যাণেই নয়, প্রাণীদের জন্যও সহায়ক হতে পারে। সম্প্রতি হাতি শিকার ঠেকাতে নতুন এক এআই টুল তৈরি করেছেন গবেষকরা।
‘পোচনেট’ নামের নতুন এ এআই টুলটিকে হাতির জিপিএস ডেটা ও এদের আচরণগত জ্ঞানকে একসঙ্গে করে তৈরি করেছেন গবেষকরা। তাদের দাবি, মালয়েশিয়ার রাজ্য ‘সাবাহে’ চোরা হাতি শিকারের পূর্বাভাস দিতে ও ঠেকাতে সহায়তা করবে এই টুল।
মেশিন লার্নিং ও স্মার্ট ডেটাবেইজ ব্যবহার করে ‘কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি’র ‘স্কুল অফ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স’ এবং ‘স্কুল অফ বায়োসায়েন্সেস’-এর গবেষকরা এমন এক সিস্টেম তৈরি করেছেন, যা হাতি শিকারের ঝুঁকির বিষয়টি পূর্বাভাস দিতে পারবে।
গবেষকরা বলছেন, পোচনেট তৈরি করা হয়েছে হাতির ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে সহায়তা করার জন্য। আগে থেকে চিহ্নিত বিপজ্জনক এলাকায় হাতির বিচরণের ওপর ভিত্তি করে এর শিকারের ঝুঁকি শনাক্ত করতে এ তথ্য ব্যবহার করবে এআই টুলটি।
“হাতির চলাচলের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য এ জিপিএস ডেটায় বিশেষ ধরনের এআই অর্থাৎ সিকোয়েন্সিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক দিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যেখানে অর্থবহ উপায়ে এআইয়ের নলেজ গ্রাফে যোগ করা হয়েছে এসব পূর্বাভাসকে। তারপরে পোচনেট এক নিয়মমাফিক সিস্টেম ব্যবহার করে শিকারের নিয়ম প্রয়োগ করে ও ডেটাতে লুকানো প্যাটার্ন শনাক্ত করে। আমাদের পরীক্ষায়, অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে আরও নির্ভুল তথ্য দিয়েছে পোচনেট। ধারাবাহিকভাবে এটি আরও ভাল কাজ করেছে এখন,” বলেছেন ‘কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি’র ‘স্কুল অফ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেটিকস’-এর গবেষক ড. নাইমা হামেদ।
হাতি শিকার ঠেকাতে আগের বিভিন্ন পদ্ধতিতে কেবল কয়েকটি নির্দিষ্ট দিকের ওপরই নজর দেওয়া হয়েছে। যেমন– সামাজিক নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ, মাল্টিমিডিয়া ডেটা মাইনিং বা সীমানা টহলের মতো ডেটার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মডেল। তবে পোচনেট পদ্ধতিতে বন্যপ্রাণীদের চলাফেরা বোঝার দিকটিও যোগ করেছেন গবেষকরা।
গবেষকরা বলছেন, সাবাহে হাতির চোরাশিকার বিরোধী অভিযানের কৌশল সম্পর্কে কতৃপক্ষকে জানাতে সাহায্য করবে পোচনেট। এটি এমন এলাকায় ‘মোশন অ্যাক্টিভেটেড ক্যামেরা ট্র্যাপ’ তৈরিতেও সহায়তা করতে পারে, যেখানে হাতির শিকারের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
‘দানাউ গিরাং ফিল্ড সেন্টার’-এর পরিচালক ও ‘কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি’র ‘স্কুল অফ বায়োসায়েন্সেস’-এর অধ্যাপক বেনোইট গুসেনস বলেছেন, “আবাস কমে যাওয়া, মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাত এবং চোরাশিকারের ফলে বোর্নিয়ান প্রজাতির হাতিরা হুমকির মুখে পড়েছে। গোটা বিশ্বে চোরাশিকার ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়ার পরও অবৈধ হাতির দাঁতের ব্যবসা এই শিকারকে বাড়িয়ে চলেছে। ফলে এ প্রজাতির হাতির সংখ্যা দেড়শরও কমে নেমে এসেছে।”
গবেষকরা বলছেন, বন্দুকের গুলি বা গাড়ির শব্দ শনাক্ত করার জন্য অ্যাকিউস্টিক সেন্সর, প্রাণীদের আবাসের পরিবর্তন ও মানুষের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইটের ছবি ও অপরাধ গোয়েন্দা তথ্য একসঙ্গে করে পোচনেট-এর কার্যকারিতা বাড়ানো যেতে পারে।