তারা কি এইসব ধারাল পাথরের সঙ্গে বল্লম জুড়ে দিয়ে তা নিক্ষেপ করত? বা এইসব প্রাণীকে চারপাশ থেকে ঘিরে এদের খুঁচিয়ে হত্যা করত? অথবা তারা কি এরইমধ্যে আহত প্রাণীর ওপর স্রেফ নিজেদের হাত বসাতো? সেটাই বড় প্রশ্ন।
Published : 03 Sep 2024, 12:23 PM
সিনেমায় যে দেখা যায়, আদিম মানবরা ম্যামথ শিকারের জন্য বর্শা নিক্ষেপ করছে, ধারণাটি আসলে ভুল।
এর বদলে, ‘আইস এইজ’ যুগের এইসব বিশালাকায় প্রাণী শিকারের জন্য তারা এক ধরনের স্মার্ট ও কৌশলী পদ্ধতি ব্যবহার করত বলে দাবি গবেষকদের।
দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্নতাত্ত্বিকদের প্রশ্ন হল, মানুষ কীভাবে ১৩ হাজার বছর আগে ‘ক্লভিস’ পয়েন্ট নামের ধারাল পাথর ব্যবহার করে ম্যামথ ও মাস্টডনের মতো বিশাল প্রাণী শিকার করত।
তারা কি এইসব ধারাল পাথরের সঙ্গে বল্লম জুড়ে দিয়ে তা নিক্ষেপ করত? বা এইসব প্রাণীকে চারপাশ থেকে ঘিরে এদের খুঁচিয়ে হত্যা করত? অথবা তারা কি এরইমধ্যে আহত প্রাণীর ওপর স্রেফ নিজেদের হাত বসাতো? সেটাই বড় প্রশ্ন।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কেলে’র নতুন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, এর মধ্যে কোনো তত্ত্বই সঠিক নয়। এর বদলে, আদিম মানবরা হয়ত এমন এক ধরনের কৌশল ব্যবহার করত, যেখানে বর্শাকে ওপরের দিকে তাক করে মাটির মধ্যে গেড়ে রাখা হতো।
এ প্রক্রিয়ার সহায়তায় প্রাণীর নিজস্ব শক্তি থেকেই মারাত্মক আঘাত হানার সুযোগ পেত শিকারি, যা বর্শা নিক্ষেপ করে অর্জন করা কিছুটা জটিল।
ম্যামথের মতো বিশালাকায় প্রাণী নিজের পূর্ণশক্তি ব্যবহার করে এইসব বল্লমের দিকে দৌড় দিতো, যার ফলে বর্শার ধারাল অংশটি তাদের শরীরের গভীর পর্যন্ত ঢুকে যেতো বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ ধারণাটি তদন্ত করতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা গোটা বিশ্বের এমন ঐতিহাসিক প্রমাণাদি খতিয়ে দেখেছেন, যেখানে একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।
এমনকি বিভিন্ন পাথুরে অস্ত্র দিয়েও তারা কিছু পরীক্ষা চালিয়েছেন। এর লক্ষ্য, পূর্ণশক্তির প্রাণীর গতিবিধি ঠেকাতে এইসব বর্শা কতোটা কার্যকর? তা দেখা।
এর ফলাফলে দেখা গেছে, একবার বর্শার ধারাল অংশটি প্রাণীর মাংস ভেদ করে চলে গেলে সেটা অনেকটা আধুনিক যুগের ‘হলো-পয়েন্ট’ বুলেটের মতো কাজ করে, যা প্রাণীর দেহে গুরুতর ক্ষত তৈরি করত।
“শিকার কৌশল হিসেবে এই প্রাচীন নেটিভ আমেরিকান নকশাটি খুবই রোমাঞ্চকর এক উদ্ভাবন ছিল,” বলেন বার্কেলে’র ‘আর্কিওলজিকাল রিসার্চ ফ্যাসিলিটি’র গবেষক ও এ গবেষণার প্রধান লেখক স্কট বাইরাম।
তার গবেষণা দলের বিভিন্ন অনুসন্ধান প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লস ওয়ান’-এ।
এ গবেষণা প্রত্নতত্ত্বের বহুকাল পুরোনো এক রহস্য সমাধানের হাতছানি দিচ্ছে। তা হল, উত্তর আমেরিকার আদিম মানবরা এইসব ক্লভিস পয়েন্টকে কীভাবে ব্যবহার করত, যেটি আইস এইজ যুগ থেকে খুঁজে পাওয়া অন্যতম সাধারণ নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত।
এর নামকরণ হয়েছে নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের ক্লোভিস শহরের ভিত্তিতে, যেখানে এইসব পাথরের প্রথম খোঁজ মিলেছিল। আর এদের প্রান্তগুলোও খুব ধারাল।
মাটিতে গেড়ে রাখা ক্লভিসওয়ালা বল্লম কতোটা ভয়াবহ, আসন্ন মাসগুলোয় ম্যামথের রেপ্লিকা তৈরি করে তা সিম্যুলেট করার পরিকল্পনা করছে বাইরাম ও তার গবেষণা দল।