বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে রোবট। তবে, এর জন্য এগুলো দেখতে ‘ঠিকঠাক’ হতে হবে। এমন তথ্যই উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
গবেষণা অনুযায়ী, বিভিন্ন রোবট কতোটা প্রভাবশালী হতে পারে এমন ধারণার অনেকটাই নির্ভর করে এটি দেখতে কেমন, সেটির ওপর।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুটো ভিন্ন সহায়ক রোবট কোচ ব্যবহার করে এক প্রযুক্তি পরামর্শক কোম্পানির জন্য গবেষণা চালিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের গবেষকরা।
এই গবেষণায় রোবটের নেতৃত্বে ২৬জন কর্মী চার সপ্তাহের সাপ্তাহিক সুস্থতা সেশনে অংশ নেন।
রোবট দুটির কণ্ঠস্বর, চেহারার অভিব্যক্তি ও সেশনের স্ক্রিপ্ট একই ছিল। আর নিজেদের বাহ্যিক গঠনের কারণে তাদের সঙ্গে মানুষের আচরণের ধরনেও এর প্রভাব পড়েছে।
এর মধ্যে খেলনা আকৃতির এক রোবটের সঙ্গে এই অনুশীলন চালানো কর্মীরা বলেন, কর্মক্ষেত্রে ব্যবহৃত মানবীয় আচরণ করা রোবটের চেয়ে বরং তারা নিজেদের ‘কোচের’ সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ততা অনুভব করেছেন।
গবেষকরা বলছেন, রোবটের বিভিন্ন ধারণা প্রভাবিত হয় জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাধ্যমে, যেখানে রোবট কী করতে পারে, তা জানার একমাত্র উপায় হলো কল্পনা।
তবে, তারা যখন বাস্তব জগতের রোবটের মুখোমুখি হন, এগুলো অনেক সময়েই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।
গবেষকরা বলছেন, যেহেতু খেলনা আকৃতির রোবট দেখতে তুলনামূলক সহজ, মানুষ হয়তো নিজেদের প্রত্যাশার ভার কমিয়ে এমন এক রোবট দেখেন পায়, যার সঙ্গে সহজেই কথা বলে সম্পৃক্ত হওয়া যায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানবসদৃশ (হিউম্যানয়েড) রোবটের সঙ্গে কাজ করা কর্মীদের প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা এর কারণ হিসেবে আলাপ চালিয়ে নিতে রোবটের অক্ষমতার বিষয়টিকে দেখিয়েছেন।
রোবট ব্যবহার করে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ যাচাইয়ের এই প্রকল্পে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি ‘কেমব্রিজ কনসালটেনটস’-এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেন গবেষকরা।
এই চার সপ্তাহের গবেষণায় ‘কিউটিরোবট (কিউটি)’ ও ‘মিস্টি ২ রোবট (মিস্টি)’ নামের দুটি রোবট কর্মীদের চারটি ভিন্ন ভিন্ন সুস্থতা বিষয়ক অনুশীলন করায়।
এর মধ্যে ‘কিউটি’ হলো শিশুর মতো আচরণ করা মানবসদৃশ রোবট, যার উচ্চতা আনুমানিক ৯০ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে, খেলনা আকৃতির রোবট ‘মিস্টি’র উচ্চতা ৩৬ সেন্টিমিটার।
দুটো রোবটের চেহারাই স্ক্রিনের মধ্যে দেখা যায়। আর এতে ভিন্ন ভিন্ন চেহারার অভিব্যক্তিও প্রোগ্রাম করা ছিল।
এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ড. মিকোল স্পিটেল বলেন, “এটা হতে পারে যেহেতু মিস্টি রোবট দেখতে তুলনামূলক খেলনার মতো, তাই এটি তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে মিলে গেছে।
“তবে কিউটি যেহেতু তুলনামূলক বেশী মানবমদৃশ, তারা এর থেকে মানুষের মতো আচরণ প্রত্যাশা করেছেন। আর সম্ভবত এই কারণেই কিউটি নিয়ে কাজ করা অংশগ্রহণকারীরা কিছুটা হতাশ হয়েছেন।”
বিভিন্ন সুস্থতা বিষয়ক কোচের সঙ্গে কথা বলে গবেষকরা এইসব রোবটে খোলা মনের ব্যক্তিত্ব ও বিবেকবান কোচের মতো ব্যক্তিত্ব প্রোগ্রাম করেন।
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া কেমব্রিজের কম্পিউটার সায়েন্স ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক হেটিস গানস বলেন, “অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে আমাদের পাওয়া সবচেয়ে সাধারণ প্রতিক্রিয়া ছিল, রোবট সম্পর্কে তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
“আমরা স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে রোবটগুলো প্রোগ্রাম করি। তবে, অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যাশা ছিল, এতে ভাববিনিময়ের সুযোগ তুলনামূলক বেশি থাকবে।”
“স্বাভাবিক কথোপকথন করতে পারে, এমন রোবট তৈরি করা বেশ জটিল। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশাল ল্যাংগুয়েজ মডেলে উন্নতি ব্যপক লাভজনক হতে পারে।”
গবেষণার সহ-লেখক মিনজা অ্যাক্সেলসন বলেন, “রোবট দেখতে বা এগুলোর আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ, আমাদের এই ধারণা হয়তো রোবটিক্স খাতের বিভিন্ন এমন উন্নতি আটকে দিচ্ছে, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।”
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে অনুষ্ঠিত ‘এসিএম/আইইইই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন হিউম্যান-রোবট ইন্টার্যাকশন’ নামের আয়োজনে এইসব অনুসন্ধান উপস্থাপিত হয়েছে।