দেহের প্রাকৃতিক বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার পাশাপাশি মানুুষের ওজন বৃদ্ধির স্বাভাবিক ভারসাম্যকে নষ্ট করছে এসব ওবেসোজেন।
Published : 15 Dec 2024, 04:18 PM
স্থূলতা বা দেহে মেদ বেড়ে যাওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, ১৯৭৫ সাল থেকে গোটা বিশ্বে স্থূল মানুষের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ হয়েছে। এই সংখ্যা বিস্ময়করভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অসংখ্য কারণ। আর এসব কারণ নিয়ে আছে বিতর্কও।
দেহে মেদ বেড়ে যাওয়ার জন্য অনেকে উচ্চ ফ্যাটওয়ালা, ভারী ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বা জীবনধারাকে দোষ দেন। এসব নিঃসন্দেহে শরীরে মেদ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। তবে বিশ্বজুড়ে লোকজনের মেদ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মহামারীর আকারে পৌঁছানোর মূল কারণ এখনও অনিশ্চিত রয়ে গেছে বিজ্ঞানীদের কাছে।
সম্প্রতি ‘ইউনিভার্সিটি অফ বস্টন’-এর ড. বারবারা ই কর্কি এবার নতুন এক তত্ত্ব সামনে এনেছেন। যেখানে মানুষের খাবারের ওপর থেকে মনোযোগ সরে গিয়ে গুরুত্ব পেয়েছে তার আবাসস্থলের পরিবেশের ওপর।
কর্কি বলেছেন, আমাদের আশপাশে থাকা ‘ওবেসোজেন’ নামের রাসায়নিক উপাদান শরীরের প্রাকৃতিক বিভিন্ন সিস্টেমকে ব্যাহত করতে পারে। আর এসব প্রাকৃতিক সিস্টেমই দেহের ক্ষুধা ও চর্বি জমার মতো বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে।
পরিবেশে এসব রাসায়নিক উপাদানের পরিসর গত ৫০ বছরে আরও বড় হয়ে উঠেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। এসব উপাদান শরীরে ভুল সংকেত পাঠাতে পারে। যেমন– ক্ষুধা না পেলেও মানুষকে ক্ষুধার্ত অনুভব করাতে পারে বা প্রয়োজনের চেয়ে দেহে বেশি চর্বি সঞ্চয় করায় প্ররোচিত করতে পারে।
দেহের প্রাকৃতিক বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার পাশাপাশি মানুুষের ওজন বৃদ্ধির স্বাভাবিক ভারসাম্যকে নষ্ট করছে এসব ওবেসোজেন, বলেন কর্কি। আধুনিক বিশ্বের প্লাস্টিক, সার, কীটনাশক, বায়ু দূষণ, এমনকি অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার’সহ অনেক উৎস থেকেই আসতে পারে এসব ওবেসোজেন।
ড. কর্কির অনুমান সঠিক হলে, স্থূলতা সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন আনবে এই গবেষণা। বর্তমানে মেদ বেড়ে যাওয়ার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নজর থাকে ব্যক্তির নিজের অভ্যাসের উপর। যেমন– স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও ব্যায়াম করার মতো বিষয়ের উপর।
তবে স্থূলতার সংকট ঠেকানোর জন্য এসব রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করতে হবে এবং এসব উপাদান পরিবেশ থেকে কমিয়ে আনারও প্রয়োজন হতে পারে।
স্থূলতা বিভিন্ন পরিবেশগত কারণেও হতে পারে– এমন ধারণাটি মেদ নিয়ে কথা বলার জন্য এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, স্বাস্থ্যকর ওজন পাওয়ার বিষয়টি কেবল ব্যক্তিগত পছন্দের ওপরই নির্ভর করে না, বরং আমরা যে পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছি তার ওপরও নির্ভর করে।
তবে এর মানে এই নয় যে, জীবনযাত্রা পরিবর্তন করলেই মেদ বেড়ে যাওয়া থেকে মুক্তি মিলবে। একটি সুষম খাদ্যাভাস ও নিয়মিত ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।