পেরেগ্রিন মিশনে একটি কার্গোও বহন করা হচ্ছে, যেখানে মানব শরীরের অবশিষ্টাংশের পাশাপাশি জন এফ কেনেডি’সহ বেশ কয়েকজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডিএনএ রয়েছে।
Published : 09 Jan 2024, 03:03 PM
অ্যাপোলো মিশনের পর চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া প্রথম মার্কিন রকেটটি ‘সম্ভবত ব্যর্থ’ হয়েছে --এমনই জানালেন মিশনের প্রকৌশলীরা।
ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয় সোমবার সকালে। আর এ মিশনের নাম ‘পেরেগ্রিন-১’। তবে, উৎক্ষেপণের প্রায় সাত ঘণ্টা পর কারিগরি ত্রুটির মুখে পড়ে রকেটটি, যার ফলে এই মিশনটি সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এ উৎক্ষেপণে নিজেদের মুন ল্যান্ডার পাঠানো কোম্পানি অ্যাস্ট্রবটিক বলেছে, নভোযানটিতে থাকা সোলার প্যানেল সূর্যের দিকে ‘ঠিক মতো তাক করা’ সম্ভব হয়নি। এর মানে, রকেটের সোলার প্যানেলে সূর্যরশ্মি পৌঁছাতে না পারায় এর ব্যাটারি বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে মিশনটি সম্ভবত বিপদের মুখে পড়েছে।
পরবর্তীতে মিশনের প্রকৌশলীরা বেশ কয়েকবার কমান্ড পাঠালে এক সময় নভোযানটির সোলার প্যানেল সঠিক অবস্থানে বসানো সম্ভব হয়। সে সময় অ্যাস্ট্রবটিক বলেছে, রকেটের ব্যাটারি সফলভাবেই চার্জ হচ্ছে।
তবে, পরবর্তীতে নিজেদের বক্তব্য থেকে সরে এসে কোম্পানিটি জানায়, রকেটের প্রোপালশন সিস্টেমে একটি ত্রুটি ধরা পড়েছে। এর মানে হচ্ছে, মহাকাশযানটির ‘প্রোপেলান্ট’ বা চালক যন্ত্ৰ বড় ব্যর্থতার মুখে পড়েছে। তবে, মিশনের প্রকৌশলীরা বলেছেন, তারা এ ব্যর্থতা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি রকেটকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে অ্যাস্ট্রবায়োটিক ইঙ্গিত দিয়েছে, মিশনটি সম্ভবত ব্যর্থ হয়ে গেছে।
“এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আমরা রকেট থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক ডেটা সংগ্রহের দিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।” --বলেছে কোম্পানিটি।
“পাশাপাশি মিশনটি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কী ধরনের বিকল্প উপায় থাকতে পারে, সে বিষয়টিও এ মুহুর্তে মূল্যায়ন করে দেখছি আমরা।”
পেরেগ্রিন-১ মিশনে বেশ কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প ও যন্ত্রাংশ বহন করা হচ্ছে, যেগুলো বানিয়েছেন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বিজ্ঞানীরা।
মিশনের লক্ষ্য ছিল, চাঁদকে আরও ভালোভাবে বোঝা। এর মধ্যে রয়েছে নাসার আর্টেমিস প্রকল্পের জন্য চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিও।
নাসার লক্ষ্য হল, আগামী বছর নাগাদ চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষের প্রত্যাবর্তন ঘটানো। এ ছাড়া, চাঁদের পৃষ্ঠে একটি ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির, যা পরবর্তীতে মঙ্গল গ্রহে যাত্রার ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
পেরেগ্রিন মিশনে একটি কার্গোও বহন করা হচ্ছে, যেখানে মানব শরীরের অবশিষ্টাংশের পাশাপাশি জন এফ কেনেডি’সহ বেশ কয়েকজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডিএনএ রয়েছে।
তবে, এমন পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা করেছেন ‘স্বদেশি আমেরিকানদের শহর’ হিসেবে পরিচিত ‘নাভাজো নেশন’-এর নাগরিকরা, যারা চাঁদকে ব্যাখ্যা করেন ‘আদিবাসী সংস্কৃতির আধ্যাত্মিকতা ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ’ হিসেবে।
তাদের দাবি, চাঁদের পৃষ্ঠে মানব শরীরের অবশিষ্টাংশ সমাহিত করলে তা ‘মানুষের স্বর্গীয় দেহে গভীর অপবিত্রতা’ সৃষ্টি করবে।
মিশনটি সফল হলে, চাঁদের পৃষ্ঠে কোনো মার্কিন বাণিজ্যিক রকেটের সফট ল্যান্ডিংয়ের প্রথম ঘটনা হতো এটি। পাশাপাশি, অ্যাপোলো মিশনের প্রায় ৫০ বছর পর চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের কৃতিত্ব অর্জন করা প্রথম মার্কিন মহাকাশযানও হতো এটি। এখন পর্যন্ত কেবল চারটি দেশ এ কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছে।
এ ছাড়া, টেক্সাসের হিউস্টন শহরভিত্তিক আরেক কোম্পানির তৈরি ল্যান্ডার উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা রয়েছে সামনের মাসে।
উভয় কোম্পানিকে লুনার ল্যান্ডার তৈরির জন্য লাখ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে নাসা। সংস্থাটির লক্ষ্য ছিল, নভোচারীদেরকে চাঁদে পাঠানোর আগে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির ল্যান্ডারের মাধ্যমে চাঁদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। এ ছাড়া, নাসার পাশাপাশি অন্যান্য দেশ ও ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানোর ক্ষেত্রেও মিশনটি গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাঁদে অবতরণের সর্বশেষ মিশনটি পরিচালিত হয়েছিল ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে। অ্যাপোলো ১৭ নামের ওই মিশনে চাঁদে পা রাখা ১১তম ও ১২তম ব্যক্তি হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন মার্কিন নভোচারী জিন কারন্যান ও হ্যারিসন স্মিট, যা চাঁদে মানুষ পাঠানোর ক্ষেত্রে নাসার সর্বশেষ সাফল্য।
গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর জমজ বোন ‘আর্টেমিস’-এর নামে নিজেদের নতুন প্রকল্পের নামকরণ করেছে নাসা। এর লক্ষ্য, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চাঁদের পৃষ্ঠে নভোচারীদের প্রত্যাবর্তন ঘটানো। তবে, প্রাথমিকভাবে এ বছর শেষ হওয়ার আগে চাঁদের কাছাকাছি কক্ষপথে নভোচারী পাঠানোর লক্ষ্যস্থির করেছে সংস্থাটি।