গবেষকরা ভূমি, সমুদ্র, বায়ু ও বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া লাখ লাখ তথ্য সমন্বয় করেছেন। এতে বিভিন্ন বায়ুমণ্ডলীয় মডেল থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা পাওয়া গেছে।
Published : 01 Aug 2024, 03:30 PM
সম্প্রতি পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণতম দিনের খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
দিনটি ছিল ২০২৪ সালের ২২ জুলাই। নাসার বৈশ্বিক তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর আগের বছরের জুলাইয়ে গড়া আগের দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে এ বছরের ২১ ও ২৩ জুলাই।
এই চরম তাপমাত্রা মানুষের কার্যকলাপ থেকে সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদী উষ্ণায়ন প্রবণতার অংশ, যা প্রধানত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের কারণে ঘটেছে।
এ পরিস্থিতি সম্পর্কে নাসা প্রধান বিল নেলসন বলেন, “২০২৪ সাল এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে বিবেচিত, বিশেষ করে গত দুই সপ্তাহের উষ্ণতা একটু বেশিই ছিল।”
কীভাবে আমাদের গ্রহটি পরিবর্তিত হচ্ছে ও কীভাবে বিভিন্ন স্থানীয় সম্প্রদায় এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নিরাপদে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা নিয়ে একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ দিয়েছে নাসা। এজন্য সংস্থাটি দুই ডজনের বেশি ‘আর্থ-অবজার্ভিং’ স্যাটেলাইট ও ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে সংগৃহীত ডেটা ব্যবহার করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
এ অনুসন্ধানের বিভিন্ন ফলাফল উঠে এসেছে নাসা’র ‘মডার্ন-এরা রেটরোস্পেকটিভ অ্যানালাইসিস ফর রিচার্স অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনস’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ বা ‘মেরা ২’ ও ‘গডার্ড আর্থ অবজারভেশন সিস্টেম ফরোয়ার্ড প্রসেসিং (জিইওএস-এফপি)’ সিস্টেম থেকে।
এইসব সিস্টেম ভূমি, সমুদ্র, বায়ু ও বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া লাখ লাখ তথ্য সমন্বয় করেছে, যেখানে বিভিন্ন বায়ুমণ্ডলীয় মডেল থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা পাওয়া গেছে।
‘জিইওএস-এফপি’ সিস্টেম থেকে আবহাওয়ার প্রায় ‘রিয়েল-টাইম’ তথ্য পাওয়া যায়, যেখানে ‘মেরা ২’ সেটি পুনর্বিশ্লেষণ করে উচ্চমানের পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করে। তবে, এ প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
এর মধ্যে মেরা ২’তে ১৯৮০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার মান দেখানো হয়েছে সাদা রঙে। ২০২৩ সালের ক্ষেত্রে তা দেখা গেছে গোলাপী রঙে। আর ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এ মান দেখানো হয়েছে লাল রং দিয়ে।
অন্যদিকে, ‘জিইওএস-এফপি’তে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দৈনিক বৈশ্বিক তাপমাত্রার মান দেখা গেছে বেগুনি রঙে।
এইসব ফলাফলের মিল পাওয়া যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘কোপার্নিকাস আর্থ অবজারভেশন প্রোগ্রাম’-এর স্বাধীন বিশ্লেষণের সঙ্গে। তবে এদের মধ্যে সামান্য পার্থক্য থাকলেও উভয় ক্ষেত্রেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রার স্পষ্ট বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে পৃথিবীর উষ্ণতম দিনগুলোও একই।
নিউ ইয়র্কের ‘গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ’-এ কাজ করা নাসা’র বিজ্ঞানীদের মতে, সাম্প্রতিককালের দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ড হিসাব করলে, টানা ১৩ মাস মাসিক তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙতে দেখা গেছে।
গবেষকদের এ বিশ্লেষণটি ‘জিআইএসটিইএমপি’ রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী ধারণা দেওয়া ভুপৃষ্ঠভিত্তিক যন্ত্রের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, যা শুরু হয়েছিল ১৯ শতকের শেষে।