পোষা প্রাণীদের মধ্যে ক্যান্সার খুব সাধারণ বিষয়। তবে ক্যান্সার ছাড়াও আরও অনেক কিছু শনাক্ত করতে সহায়তা করেছে এআই।
Published : 01 Aug 2024, 04:22 PM
পোষা প্রাণী যাদের বাসায় আছে, তাদের কাছে প্রাণীটি তাদের সন্তানের মতোই। আর যাদের জগত তৈরি হয় পোষা প্রাণীদের ঘিরে, এর ব্যতিক্রম নন অ্যান্থিয়া স্লেড।
ইংল্যান্ডের ‘রয়স্টন ভেটেরিনারি সেন্টার’-এর ওয়েটিং রুমে সাত বছর বয়সী বেড়াল ‘ব্লসম’কে আঁকড়ে ধরে স্লেড বলেন, “ও আমার দুনিয়া।”
ক্যান্সারে নিজের পোষা প্রাণীকে হারানোর দ্বারপ্রান্তে এসে শ্লেড বুঝতে পারেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বেড়ালটিকে বাঁচাতে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
“ওর নাক দিয়ে পানি পড়ছিল। আমি ভেবেছিলাম ওর বোধহয় ঠাণ্ডা লেগেছে। এরপর রক্তপাত শুরু হল। আমি বুঝতে পারি ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। তাই আমি ও’কে ভেটেরিনারি সেন্টারে নিয়ে আসি।”
“কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তাররা বুঝতে পারেন কী হয়েছে এবং তারা তাদের কাজ শুরু করে দেন। ব্লসম এখনও ভেটেরিনারি সেন্টারে রয়েছে।”
‘রয়স্টন ভেটেরিনারি সেন্টারে’ যেসব প্রাণীদের ওপর অপারেশন করা হয়, তাদের রোগ নির্ণয়ে এআইয়ের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
“এআই ওর জীবন বাঁচিয়েছে। আমি নিশ্চিত, ঠিক তা-ই হয়েছে। ডাক্তাররা বলেছিলেন, এ অপারেশন না করলে ওকে বাঁচনোই প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত।”
‘রয়স্টন ভেটেরিনারি সেন্টার’-এর ক্লিনিক্যাল ডাইরেক্টর ড. ডেভিড হোয়াইটের দাবি, “রোগ নির্ণয়কে আরও নিখুঁত করে তুলবে এআই প্রযুক্তিটি। গতকালই এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমি একটি কুকুরের দেহে জঘন্য এক টিউমার দেখেছি।”
“এআই ছাড়া এই টিউমারের কারণে কুকুরের পায়ের আঙ্গুলের কিছু অংশ সম্ভবত আমাকে কেটে ফেলতে হত। এআই আমাকে দেখতে সহায়তা করেছে এটি একটি টিউমার ও তা নিজ থেকেই ভাল হয়ে যাবে। তাই অস্ত্রোপচারের চাপ ও ব্যয় উভয়ই বাঁচিয়েছে এআই।”
এআই কিভাবে কাজ করে?
ভেটেরিনারি বা পশু চিকিৎসকরা পোষা প্রাণীর দেহ থেকে নমুনা স্লাইডে নিয়ে তা মাইক্রোস্কোপ লেন্সের নিচে রাখেন। সেখানে নমুনাটিকে গতানুগতিক উপায়ে পরীক্ষার বদলে এআইয়ের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। এআই এটি স্ক্যান করে জানায় এতে উদ্বেগের কোনও কারণ আছে কি না।
এতে কোনও চিকিৎসকের ব্যাখ্যার দরকার হলে তাদের সবসময়ই নাগালে পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
ডা. হোয়াইট বলেছেন, এ প্রযুক্তির ফলে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যায়… যার জন্য আগে কম করে হলেও একদিন, কখনও কখনও চার দিন পর্যন্ত সময় লাগত।”
পোষা প্রাণীদের মধ্যে ক্যান্সার খুব সাধারণ বিষয়। এটি বংশগত হতে পারে বা মেদ, সূর্যের আলো ও মালিকদের ধূমপানের অভ্যাসের মতো বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
ভেটেরিনারি নার্স জর্ডান মামফোর্ড বলেন, প্রাণীদেহের ক্যান্সার ছাড়াও আরও অনেক কিছু শনাক্ত করতে সহায়তা করেছে এআই।
“পোষা প্রাণীর দেহে কৃমি আছে কি না তা জানতে মলের নমুনা বিশ্লেষণ করতে পারে ‘ভেটস্ক্যান ইমাজিস্ট’ প্রযুক্তিটি। এটি রক্তের নমুনাও দেখতে পারে এবং প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যে আমাদের ফলাফলও দেয়। এমনকি এটি পোষা প্রাণীর প্রস্রাবে ক্রিস্টাল ও সংক্রমণ রয়েছে কিনা তাও শনাক্ত করতে পারে।”
এ প্রযুক্তিটি প্রাণীর ত্বকও বিশ্লেষণ করতে পারে, যা ১৩ বছর বয়সী ‘ইংলিশ স্প্রিংগার’ জাতের ‘স্কুবি ডু’ নামের কুকুরের জন্য বিশেষভাবে কাজ করেছে।
“এ কুকুরটি হঠাৎ পাগলের মতো নিজেকে চাটতে শুরু করে ও আঁচড় দেয়। দ্রুতই এর দেহের ও চোখের আশপাশের লোম পড়ে গেল। সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য!” বলেছেন, ওই কুকুরটির মালিক মেলবোর্নের বাসিন্দা জেন গ্রিন।
এ ক্ষেত্রে কুকরের দেহে ব্যাকটিরিয়া ও অ্যালার্জির সমস্যা খুঁজে পেয়েছে এআই, যা চুলকানির কারণে হয়েছে। এ সমস্যাটি শনাক্ত করার মাধ্যমে প্রাণীদের দেহে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তাকেও কমিয়ে এনেছে এআই।
“এআইয়ের মাধ্যমে আমরা এত দ্রুত ফলাফল পেয়েছি যে, কয়েক দিনের মধ্যেই স্কুবি অনেক ভাল হয়ে উঠেছে,” বলেন গ্রিন।