এআইয়ের বিপদ থেকে বিশ্বকে রক্ষা করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ এআই যত বেশি ক্ষমতাধর হয়ে উঠবে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগও ততটাই কমতে থাকবে।
Published : 13 Feb 2024, 04:43 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ উদীয়মান প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও গবেষণা। তবে এআই নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা এর ব্যবহার নিরাপদ– এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।
সম্প্রতি ‘ইউনিভার্সিটি অফ লুয়িভিল’-এর রুশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী রোমান ভি ইয়ামপোলস্কি দাবি করেছেন, এআইয়ের ওপর আংশিক নিয়ন্ত্রণও এআইকে সমাজের নতুন আকার দেওয়া থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখতে যথেষ্ট হবে না।
“বরং এতে আরও খারাপ কিছুও হতে পারে।”
ইয়ামপোলস্কির যুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেন মানুষকে ঝুঁকিতে না ফেলে তা নিশ্চিত করতে এ প্রযুক্তির সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক সাহিত্য পর্যালোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ইয়ামপোলস্কি, যা প্রকাশ পাবে তার আসন্ন বইতে।
ইয়ামপোলস্কি বলেছেন, “আমরা এমন একটি নিশ্চিত ঘটনার সামনে এগিয়ে যাচ্ছি যা আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেকে যে এআইকে মানবতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করছেন, সেটিও অবাক করার মতো বিষয় নয়।”
“এর ফলাফল হতে পারে সমৃদ্ধি অথবা বিলুপ্তি এবং এখানে মহাবিশ্বের ভাগ্যের ভারসাম্য ঝুলে আছে।”
গবেষণাটির জন্য ইয়ামপোলস্কি যে বইয়ের সহায়তা নিয়েছেন, তার নাম ‘এআই: আনএক্সপ্লেইনএবল, আনপ্রেডিক্টএবল, আনকন্ট্রোলএবল’। এতে দেখা যায়, এআইয়ের অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার সমস্যাটি কোনোভাবে যে সমাধান করা সম্ভব, এর ‘কোন প্রমাণ’ নেই।
ধারণা করা হচ্ছে, কোনো এআই ব্যবস্থাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, তাই এ প্রযুক্তিকে যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখতে একটি ‘অর্থপূর্ণ নিরাপত্তা প্রচেষ্টা’ চালু করা গুরুত্বপূর্ণ।
তবুও এআইয়ের বিপদ থেকে বিশ্বকে রক্ষা করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ এআই যত বেশি ক্ষমতাধর হয়ে উঠবে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগও ততটাই কমতে থাকবে। তাই এআইয়ের সব ধরনের বিপদ সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে না।
এর মধ্যে অনেক এআই ব্যবস্থার নির্মাতাই ব্যাখ্যা করতে পারেননি যে, প্রযুক্তিটি কীভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এরইমধ্যেই স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যাংকিংয়ের মতো খাতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা গেছে – তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসলে কীভাবে নেওয়া হয়েছিল, তা হয়ত কখনওই জানা সম্ভব হবে না।
“আমরা যদি ব্যাখ্যা ছাড়াই এআইয়ের বিভিন্ন জবাব গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি ও এআইকে যদি একটি ‘ওরাকল সিস্টেম’ হিসাবে বিবেচনা করা যায়, তবে আমরা এটা বুঝতে পারব না যে এটি ভুল জবাব দিচ্ছে কি না,” বলেছেন ইয়ামপোলস্কি।
এমনকি মানুষের নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য তৈরি ব্যবস্থাও সমস্যার মুখে পড়তে পারে বলে দাবি করেছেন ইয়ামপোলস্কি। তার মতে, সেইসব নির্দেশনাতেও একে অপরের বিরোধিতার প্রবণতা দেখা যেতে পারে, সিস্টেমটি ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারে এমনকি বিভিন্ন ক্ষতিকারক কাজও এর মাধ্যমে হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
তবে, সেই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব যদি মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এআইকে উপদেষ্টা হিসাবে ব্যবহার করা যায়, যে মানুষকে সম্মান করবে ও প্রয়োজনে পরামর্শ দেবে। তবে, মানবজাতিকে পরামর্শ দিতে গেলে উচ্চস্তরের মূল্যবোধ থাকা লাগবে এআইয়ের নিজেরও।
“এআইয়ের কাছে মানবতা হয় সুরক্ষা নয়তো সম্মান পাবে। তবে দুটি বিষয় কখনওই একত্রে করা সম্ভব হবে না,” বলেছেন ইয়ামপোলস্কি।