এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে মহাকাশে নিয়ে গিয়েছে মার্কিন বিলিয়নেয়ার ও ই কমার্স কোম্পানি অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী বেজোসের কোম্পানিটি। যার মধ্যে তিনিও ছিলেন।
Published : 13 Apr 2025, 05:34 PM
বিশ্বে প্রথমবারের মতো ক্রু মিশনে মহাকাশে যাচ্ছেন ছয়জন নারী। এর আগে ১৯৬৩ সালে একক মিশনে মহাকাশে ৭০ ঘণ্টারও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন রাশিয়ার নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা।
এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। সোমবার জেফ বেজোসের মহাকাশ কোম্পানি ব্লু অরিজিন-এর তৈরি সাবঅরবিটাল রকেটে করে পপ তারকা কেটি পেরি, লেখক ও বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজ, সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক গেইল কিং, নাগরিক অধিকার কর্মী আমান্ডা এনগুয়েন, নাসার সাবেক রকেট বিজ্ঞানী আয়িশা বোয়ে এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা কেরিয়ান ফ্লিন মহাকাশে যাবেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
কোম্পানিটির ‘নিউ শেপার্ড’ প্রোগ্রামের সর্বশেষ ফ্লাইট এটি, যার নাম ‘এনএস-৩১’। এর লক্ষ্য হচ্ছে, “দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তৈরি করা, যা প্রজন্মকে মহাকাশে যেতে অনুপ্রাণিত করবে”। প্রথমবারের মতো কেবল নারী ক্রু নিয়ে এ ফ্লাইটটি তৈরি করেছে কোম্পানিটি।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাসের ‘লঞ্চ সাইট ওয়ান’ থেকে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় পুনরায়ব্যবহারযোগ্য এ স্বচালিত এ রকেটটি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে শুরু হবে ছয় নারীর এই যাত্রা, যা কেবল ১১ মিনিট স্থায়ী হবে।
পৃথিবী থেকে সর্বোচ্চ একশ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছাবে রকেটটি, যেখানে ক্যাপসুলটি ‘কারমান লাইন’ অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে কার্যত মহাকাশে প্রবেশ করবেন নারীরা। আন্তর্জাতিকভাবে মহাকাশের সীমানা হিসাবে স্বীকৃত ‘কারমান লাইন’।
তবে মহাকাশে ভ্রমনকারী এ পাঁচজন নারীকে নভোচারী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করবে না যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফএএ, মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও মার্কিন সামরিক বাহিনী। কারণ, তাদের সবারই নভোচারী হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাব রয়েছে।
মহাকাশে থাকাকালীন ক্রুরা প্রায় চার মিনিটের মতো ওজনহীনতায় মহাকাশে ভেসে বেড়াবেন ও ক্যাপসুলের বড় জানালা থেকে পৃথিবীর দৃশ্য উপভোগ করবে। এরপর তিনটি প্যারাসুট ব্যবহার করে পৃথিবীতে ফিরে আসবে ক্রু ক্যাপসুলটি।
‘নিউ শেপার্ড’ প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে মহাকাশে নিয়ে গিয়েছে মার্কিন বিলিয়নেয়ার ও ই কমার্স কোম্পানি অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী বেজোসের কোম্পানিটি, যার মধ্যে তিনি নিজেও ছিলেন। ২০২১ সালে নিউ শেপার্ডের প্রথম যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন বেজোস।
এর আগে, ৯০ বছর বয়সে মিশনে যোগ দিয়ে মহাকাশে যাওয়া সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন স্টার ট্রেক অভিনেতা উইলিয়াম শ্যাটনার।
যেভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ক্রুরা
এ মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেজোসের বাগদত্তা সানচেজ। তিনি বলেছেন, তার সহকর্মী ক্রু সদস্যদের বেছে নিয়েছেন তিনি নিজেই। কারণ প্রত্যেকেই “অন্যদের অনুপ্রাণিত করার সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন”।
সানচেজ বলেছেন, মহাকাশে ভ্রমণের সময় তাদের অনুভূতির কথা ছড়িয়ে দিতে পারবেন মিশনে অংশ নেওয়া প্রত্যেক নারীই এবং এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের মহাকাশ অভিযাত্রীরা কেমন হবে সে সম্পর্কেও নানা ধারণা বাড়াতে পারবেন তারা।
সফল সংগীত শিল্পীদের মধ্যে একজন কেট পেরি। তিনি বলেছেন, প্রায় ২০ বছর ধরে মহাকাশে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার। তাই যখন তিনি এ মিশনের জন্য ডাক পান তখন তিনি কোনও চিন্তাভাবনা করেননি হ্যাঁ বলার জন্য।”
পেরি বলেছেন, “প্রথমবারের মতো যখন ব্লু অরিজিন মহাকাশে বাণিজ্যিক ভ্রমণের কথা বলছিল তখনও আমি বলছিলাম, ‘আমাকে এ মিশনে নিন’। আমিই প্রথম আগ্রহী হই। তারপর তারা আমাকে ডাকে ও আমি তাদের বলি, “সত্যিই কি আমি এই আমন্ত্রণ পাচ্ছি?।”
এদিকে, মহাকাশে ভ্রমণের সিদ্ধান্তটি খুব একটা সহজ ছিল না মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস-এর ‘সিবিএস মর্নিংস’ শোয়ের সহ হোস্ট হিসাবে পরিচিত গেইল কিংয়ের জন্য।
তিনি বলেছেন, “লরেন ও জেফের কাছ থেকে ফোন পাওয়ার সময় আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, না।” মহাকাশ ভ্রমণের বিষয়ে এখনও ‘অনেক ভয়’ রয়েছে তার।
নাসার সাবেক রকেট বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তি কোম্পানি স্টেমবোর্ডের প্রধান নির্বাহী আয়িশা বোয়ে বলেছেন, “সারাজীবন এই মুহুর্তটির জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছি ও অপেক্ষা করেছি আমি”।
অন্যদিকে, নাগরিক অধিকার কর্মী এনগুয়েন ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ফ্লিন উভয়ই বলেছেন, এ সুযোগটির মাধ্যমে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।
ফ্লিন বলেছেন, “পৃথিবীতে ফিরে আসার পর আমরা যা নিয়ে আসবো তা বিশ্বের সবার সঙ্গে শেয়ার করার জন্য আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”