যখন ফল পাওয়া যেত না পাখিরা সম্ভবত তখন পোকামাকড়ের মতো অন্যান্য জিনিসও খেত। এই নতুন তথ্য জীবাশ্মবিদদের পুরানো ধারণাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করেছে।
Published : 12 Sep 2024, 04:22 PM
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন এক আবিষ্কার করেছেন, যেখানে এক প্রাচীন প্রজাতির পাখি সম্পর্কে তাদের ধারণা একেবারেই পাল্টে গেছে।
চীনে পাওয়া জীবাশ্ম থেকে দেখা গেছে, ১২ কোটি বছর আগে এই পৃথিবীতে ছিল ‘লঙ্গিপ্টেরিক্স চাওয়ানজেনসিস’ নামে পাখির একটি প্রজাতি ছিল। নতুন আবিষ্কার বলছে, এটি মাছ নয়, বরং ফল খেত, যা আগের ধারণার বিপরীত।
এসব প্রাচীন পাখির জীবনাচার আর খাদ্যাভ্যাস আরও ভালভাবে বুঝতে গবেষকদের সহায়তা করেছে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার।
প্রাচীনকালে কোনও প্রাণী কী খেত বা কেমন আচরণ করত তা নিশ্চিতভাবে জানা জীবাশ্মবিদদের জন্য প্রায়ই কঠিন হয়ে পড়ে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
হাড়ের জীবাশ্ম থেকে খানিকটা ইঙ্গিত মিললেও প্রাচীন প্রাণী সম্পর্কে পুরো বিষয়টি বোঝা জীবাশ্মবিদদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে ‘লঙ্গিপ্টেরিক্স’-এর প্রাপ্ত নমুনায় এর পেটের ভেতরে জীবাশ্ম বীজ খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি দৃঢ় প্রমাণ দেয় যে এই পাখিরা ফল খেত।
শিকাগোর ‘ফিল্ড মিউজিয়াম’-এর সরীসৃপ জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ জিংমাই ও’কনরের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেছেন। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘কারেন্ট বায়োলজি’তে।
‘লংগিপ্টেরিক্স’-এর জীবাশ্মের প্রথম সন্ধান মেলে ২০০০ সালে। সেই সময় এর দীর্ঘ মাথার খুলি ও ধারালো দাঁত দেখে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন, এরা আধুনিক সময়ের মাছরাঙা পাখিদের মতো মাছ শিকার করে।
তবে এই ধারণাটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ও’কনর এবং অন্যান্য গবেষকরা। বিশেষ করে মাছ খাওয়া পাখিদের দাঁত থাকে সাধারণত এদের চঞ্চু বরাবর। আর ‘লঙ্গিপ্টেরিক্স’-এর কেবল দাঁত ছিল এদের চঞ্চুর ডগায়।
এ যুগান্তকারী সাফল্যটি আসে যখন চীনের একটি জাদুঘর পরিদর্শনের সময় দুটি ‘লঙ্গিপ্টেরিক্স’ জীবাশ্মের পেটে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেন ও’কনর।
জীবাশ্মবিদ ফ্যাবিয়ানি হেরেরাকে এসব জীবাশ্ম পরীক্ষা করতে বলেন ও’কনর। পাশাপাশি তিনি নিশ্চিত করেন, পাখিদের পেটে এমন ক্ষুদ্র গোলাকার বস্তুগুলো ছিল আসলে প্রাচীন ফলের বীজ। এসব ফলের উৎস ছিল ‘জিমনোস্পার্মস’ নামের প্রাচীন গাছ, যা বর্তমানের ‘কনিফার’ ও ‘জিঙ্কগো’র মতো এক ধরনের গাছ।
এ আবিষ্কারটি থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, ‘লঙ্গিপ্টেরিক্স’ প্রজাতির পাখি ফল খেত, যার মানে এরা সম্ভবত আরও বৈচিত্র্যময় খাবার খেত। অর্থাৎ যখন ফল পাওয়া যেত না পাখিরা সম্ভবত তখন পোকামাকড়ের মতো অন্যান্য জিনিসও খেত। এই নতুন তথ্য জীবাশ্মবিদদের পুরানো ধারণাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করেছে।
পাখির এমন দাঁত আসলে কিসের জন্য?
লঙ্গিপ্টেরিক্সের পেটে বীজ পাওয়ার বিষয়টি এর খাবার সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করলেও এক নতুন প্রশ্ন সামনে এনেছে এটি। পাখিটি যদি মাছ শিকার না করে থাকে তবে এদের দাঁত এত শক্ত কেন?
গবেষকদের ধারণা, পাখিটির এমন দাঁত শিকার ধরার জন্য নয়, বরং লড়াইয়ের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য হয়ে থাকতে পারে।
হামিংবার্ডের মতো কিছু আধুনিক পাখির তীক্ষ্ণ চঞ্চু কাঠামো রয়েছে, যার মাধ্যমে এরা একে অপরের সঙ্গে লড়াই করতে এটি ব্যবহার করে। ও’কনর ও তার সহকর্মী অ্যালেক্স ক্লার্কের অনুমান, লঙ্গিপ্টেরিক্স নিজের দীর্ঘ চঞ্চু ও শক্তিশালী দাঁত ব্যবহার করে খাবার বা সঙ্গীর জন্য অন্যান্য পাখির সঙ্গে প্রতিযোগিতাও করতে পারে।
এ আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে ইঙ্গিত মেলে, প্রাণীদের কঙ্কালের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সবসময় প্রাচীন প্রাণীদের জীবনযাত্রার পূর্ণ তথ্য দেয় না।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই গবেষণাটি শুরুর দিকের পাখিদের আচরণ নিয়ে আরও গবেষণা করার বিষয়টিকে উৎসাহিত করবে, যেখানে এরা কি খেত এর বাইরেও এদের জীবনকে আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করবে।