Published : 15 Apr 2024, 06:03 PM
এক যুগান্তকারী গবেষণায় খোঁজ মিলেছে এমন এক ছায়াপথের, যা এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে ছোট ও ক্ষণস্থায়ী ছায়াপথ হতে পারে।
গবেষণাটি চালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়েল’ ও কানাডার ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভিক্টোরিয়া’র জোতির্বিদরা।
ছায়াপথটিকে ডাকা হচ্ছে ‘Ursa Major III/UNIONS 1 (UMa3/U1)’ নামে, যার অবস্থান মিল্কিওয়ের একেবারে কাছাকাছি।
ছায়াপথটি এতটাই ছোট যে এর দুই প্রান্তের মধ্যে দূরত্ব কেবল ২০ আলোকবর্ষ, যা ৯৪ ট্রিলিয়ন কিলোমিটারের সমান।
এতে ৬০টি পুরোনো তারা আছে, যেগুলোর প্রতিটির বয়স এক হাজার কোটি বছরের বেশি। এখন পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে খর্বাকৃতির ছায়াপথটিও এর চেয়ে ১৫ গুণ।
বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছায়াপথটি খুঁজে পাওয়া গেছে কানাডা-ফ্রান্স-হাওয়াই টেলিস্কোপ ও হাওয়াইতে অবস্থিত ‘ডব্লিউ.এম কেক অবজারভেটরি’র মতো শক্তিশালী টেলিস্কোপ ও যন্ত্রের সহায়তায়।
এইসব যন্ত্রের সহায়তায় গবেষণা দলটি এ ছায়াপথে থাকা বিভিন্ন তারার খুঁটিনাটি নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছেন, যা থেকে প্রমাণ মেলে, এইসব তারা কোনো আগোছালো দলের অংশ নয়, বরং এগুলো মহাকাশে একত্রেই চলাফেরা করে। আর এগুলোর রাসায়নিক গঠন প্রক্রিয়াও একই রকম।
এখন বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন, ‘উমা৩/ইউ১’ কী ছোট একটি ছায়াপথ, না এটি আসলে একগুচ্ছ তারা।
এ অনিশ্চয়তা উঠে আসার কারণ হল, এ সিস্টেমে ‘ডার্ক ম্যাটার’-এর মতো রহস্যময় বা অদৃশ্য বস্তুর উপস্থিতি আছে কি না, তা বলা জটিল। প্রচলিত ধারণায়, ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্ব গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচিত।
এ ছোট সিস্টেম কীভাবে মিল্কিওয়ে’র মাধ্যাকর্ষণের টান এড়িয়ে যেতে পেরেছে, এতে ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি থাকলে সে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
আর যদি এটি আসলেই একটি ছায়াপথ হয়ে থাকে, তার সম্ভাব্য মানে দাঁড়ায়, এখনও এ ধরনের অনেক ক্ষণস্থায়ী ছায়াপথ খোঁজা বাকি।
পাশাপাশি, ছায়াপথ ও এদের বিভিন্ন উপগ্রহের গঠনপ্রক্রিয়া ও বিবর্তন নিয়ে মানুষের প্রচলিত ধারণাকেও চ্যালেঞ্জ জানাবে বিষয়টি।
উমা৩/ইউ১ একটি ডার্ক ম্যাটার অধ্যুষিত ছায়াপথ হলে তা বিশেষ কৌতুহলের জায়গা হতে পারে। আর এ প্রচলিত ধারণাটি নিশ্চিত বা নাকচ করতে সহায়ক হতে পারে কেক টেলিস্কোপের বিশ্লেষণ।
এ গবেষণায় যুক্ত ইয়েল ইউনিভার্সিটি’র স্নাতকোত্তর ছাত্র উইলিয়াম সার্নিও অনুসন্ধানটির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন।
উমা৩/ইউ১’এ যদি বিশাল পরিমাণ ডার্ক ম্যাটার থেকে থাকে, তবে এর থেকে এমন অসংখ্য ক্ষণস্থায়ী নক্ষত্র ব্যবস্থার উপস্থিতি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, যেগুলো এখনও শনাক্ত হয়নি। আর তা হবে যুগান্তকারী এক সাফল্য, যেখান থেকে পুরোপুরি নতুন শ্রেণির ক্ষুদ্র নক্ষত্র ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে, যা এতদিন মানুষের চোখের আড়ালে ছিল।
নোরিজ বলছে, এ অনুসন্ধান শুধু প্রচলিত মহাজাগতিক মানচিত্রে আরেকটি ছায়াপথ বা তারাগুচ্ছ যোগ করার মতো বিষয় নয়।
এটি মহাবিশ্ব সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এ বিষয়ে সম্ভাব্য বোঝাপড়ার পরিধি বাড়িয়ে দেবে। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, সুবিশাল মহাবিশ্বে হয়ত এমন অসংখ্য অদেখা ক্ষুদ্রাকৃতির প্রতিবেশী থাকতে পারে, যা পৃথিবী যে ছায়াপথে অবস্থিত অর্থাৎ মিল্কিওয়ে’কে প্রদক্ষিণ করছে।