৯ কোটি বছর আগে অর্থাৎ মধ্য-ক্রিটেসিয়াস যুগে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ কেমন ছিল তার ঝলক মিলেছে অ্যাম্বারের এসব টুকরায়।
Published : 19 Nov 2024, 04:38 PM
প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিক মহাদেশে অ্যাম্বার খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই আবিষ্কার অ্যাম্বারের বৈশ্বিক মানচিত্রে এক বড় শূন্যস্থান পূরণ করেছে বলে দাবি তাদের।
এ বিস্ময়কর আবিষ্কারটি করেছেন গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ‘আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট’-এর গবেষক ড. জোহান পি ক্লেজেস ও বিশ্বের প্রাচীন খনি ও ধাতুবিদ্যাভিত্তিক ইউনিভার্সিটি ‘টিইউ বারকাদেমি ফ্রেইবার্গ’-এর গবেষক ড. হেনি গার্শেলের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল।
২০১৭ সালে জার্মানের গবেষণাধর্মী বরফভাঙ্গা জাহাজ ‘পোলারস্টার্ন’-এর অভিযানের সময় এ অ্যাম্বার খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা।
অ্যাম্বারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরার পলির কোর খুঁজে পাওয়া গেছে আমুন্ডসেন সাগরে অবস্থিত পাইন দ্বীপ উপসাগরের প্রায় ৯৪৬ মিটার গভীরতায়, যেখানে সাগরের নীচের ড্রিল রিগ ব্যবহার করে অ্যাম্বারের এসব টুকরা উদ্ধার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আবিষ্কার স্থানের সঙ্গে মিলিয়ে এই অ্যাম্বারের নাম রাখা হয়েছে ‘পাইন আইল্যান্ড অ্যাম্বার’। সম্প্রতি এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যান্টার্কটিক সায়েন্স’-এ।
গবেষকরা বলছেন, ৯ কোটি বছর আগে অর্থাৎ মধ্য-ক্রিটেসিয়াস যুগে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ কেমন ছিল তার ঝলক মিলেছে অ্যাম্বারের এসব টুকরায়।
ওই সময়ের বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ ও জলাবদ্ধ রেইনফরেস্ট কীভাবে বেড়ে উঠেছে সে সম্পর্কে আরও সূত্র দিতে পারে এ আবিষ্কার, বলেছেন গবেষক ক্লেজেস।
“অ্যান্টার্কটিকা’সহ সাতটি মহাদেশের সবগুলোতেই একসময় গাছের রজন তৈরির মতো জলবায়ু ছিল– এমনটি ভেবেই অবাক হচ্ছি আমি।”
এ আবিষ্কারটি কেবল একটি মাইলফলকই নয়, বরং পৃথিবীর প্রাচীন বাস্তুতন্ত্র গবেষণার এক বিস্ময়কর সুযোগও তৈরি করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ অ্যাম্বার বিশ্লেষণের মাধ্যমে বর্তমানে এও জানা সম্ভব যে, দাবানল বা অন্যান্য প্রাকৃতিক ঘটনার মুখে পড়েছিল কি না বিভিন্ন বন। অ্যাম্বারের ভেতরে আটকে পড়া প্রাচীন প্রাণের চিহ্নে পোকামাকড় বা জীবাণুর খোঁজ পাওয়ার আশা করছেন গবেষকরা। যার মাধ্যমে ক্রিটেসিয়াস যুগে বাস করা প্রাণের এক স্পষ্ট ছবি পাবেন তারা।
বিভিন্ন গয়নায় ব্যবহৃত অ্যাম্বারের তুলনায় অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়া এই অ্যাম্বারের ক্ষুদ্র বিভিন্ন টুকরার আকার এক মিলিমিটার ব্যাসেরও কম।
‘রিফ্লেক্টেড লাইট’ ও ‘ফ্লুরোসেন্স মাইক্রোস্কোপি’র মতো উন্নত বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে অ্যাম্বারের এসব টুকরা সাবধানে কেটে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। কারণ, আকারে ছোট হলেও এসব টুকরা নিজের মধ্যে ধারণ করে আছে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য।
ড. গার্শেল বলেছেন, সম্ভবত গাছের বাকল থেকে তৈরি হয়েছে এই অ্যাম্বার। এর উচ্চ গুণমান থেকে বোঝা যাচ্ছে, ওই সময় গাছের নীচের আশপাশে মাটিতেই লুকিয়ে ছিল এটি। কারণ মাটির অনেক গভীরে থাকলে সেখানের তাপ ও চাপের ফলে ধ্বংস হয়ে যেত এই অ্যাম্বার।
এ অ্যাম্বারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি তৈরি হয়েছে গাছের জৈবিক কারণে। গাছপালা আঘাত পেলে সারিয়ে ওঠার জন্য বাকল থেকে অতিরিক্ত রজন তৈরির সময় এমনটি ঘটে। পরজীবী, দাবানল বা বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে গাছের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও এটি, যেখানে নিজেকে রক্ষার জন্য এক ধরনের রাসায়নিক বাধা তৈরি করে গাছ।
অ্যান্টার্কটিকার প্রাচীন বনের ধাঁধায় নতুন এক টুকরা যোগ করেছে এই আবিষ্কার।
গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল এমন এক সময়কে সামনে এনেছে, যে সময় বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ ছিল অ্যান্টার্কটিকা। ফলে পৃথিবীর জলবায়ু ও পরিবেশগত ইতিহাস সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে গবেষণাটি।