অফিশিয়াল ভিডিও কলের একটি অলিখিত নিয়ম আছে - এমন কোনো ফাইল পিসিতে খুলে রাখবেন না, যেটি আপনি অন্যদের দেখাতে চান না।
Published : 25 Nov 2023, 03:36 PM
অফিশিয়াল ভিডিও কলের একটি অলিখিত নিয়ম আছে - এমন কোনো ফাইল পিসিতে খুলে রাখবেন না, যেটি আপনি অন্যদের দেখাতে চান না। এনভিডিয়ার এক জ্যেষ্ঠ কর্মী ঠিক এই ভুলটিই করে বসেছেন।
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান নামের ওই কর্মকর্তার ভুলে ফেঁসে গেছে চিপ নির্মাতা কোম্পানি এনভিডিয়া। আদালতে উঠেছে কোটি ডলারের মামলা।
মনিরুজ্জামান তারই সাবেক কর্মস্থান ভ্যালেও’র একটি দল-কে অনলাইন উপস্থাপনা দিচ্ছিলেন। ভ্যালেও’র দাবি, ওই সময়ে তিনি ভুল করে এমন একটি ফাইল খুলে ফেলেন যেটি প্রমাণ করে যে তিনি ওই কোম্পানির গোপন ফাইল চুরি করে নিয়ে এসেছেন।
এর পরপরই এনভিডিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে বসে ফরাসি গাড়ির জন্য প্রযুক্তি নির্মাতা কোম্পানি ভ্যালেও।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের আদালতে দায়ের করা মামলায় ভ্যালেও বলেছে, তিনি যে ফাইল চুরি করেছেন সেটি পার্কিং এবং ড্রাইভিংয়ে সহায়ক সফটওয়্যারের ‘সোর্স কোড’। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এনভিডিয়া নিজেই এ প্রযুক্তি তৈরির চেষ্টা করছে।
ভ্যালেও বলছে, মনিরুজ্জামানের কাজটি এতটাই লজ্জাজনক যে, তার স্ক্রিনে ‘ভ্যালেওডকস’ নামক একটি ফোল্ডার দেখা গেছে, যা থেকে ধারণা করা যায় সেখানে ভ্যালেও থেকে নেওয়া নথিপত্র আলাদাভাবে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন তিনি।
ফরাসি কোম্পানিটি এখন বলছে, ২০২১ সালে তাদের জার্মান শাখায় কর্মরত অবস্থায় কয়েকশ গিগাবাইট ডেটা চুরি করেছেন মনিরুজ্জামান। ওই বছরের শেষেই তিনি এনডিভিয়াতে যোগ দেন।
কেলেঙ্কারি ঘটানো এই ভিডিও কলটি ঘটেছিল ২০২২ সালে। সে সময় কোম্পানি দুটি একটি যৌথ প্রকল্পে কাজ করছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
মামলায় দেওয়া বর্ণনা অনুসারে, মনিরুজ্জামান একটি ‘স্লাইড প্রেজেন্টেশন’ দেওয়ার মধ্যে স্ক্রিন শেয়ার বন্ধ না করেই তার ব্যবহৃত অ্যাপটি থেকে বের হন এবং চোরাই ফাইলগুলো সবার সামনে এসে পড়ে। মনিরুজাজামান ততক্ষণাৎ ফাইল বন্ধ করেন বটে, তবে ভ্যালেও থেকে যোগ দেয়া অংশগ্রহণকারীরা ততক্ষণে স্ক্রিনশট নিয়ে ফেলেছেন।
গত সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে মনিরুজ্জামান দোষী সাব্যস্ত হন, এবং তিনি ভ্যালেও থেকে ডেটা চুরি ও পরবর্তীতে এনভিডিয়াতে কাজ করার সময় সেগুলি ব্যবহার করার কথা স্বীকার করে নেন। তদন্তের অংশ হিসেবে মোনিরুজ্জামানের এনভিডিয়া-মালিকানাধীন কম্পিউটার জব্দ করে নেয় জার্মান পুলিশ।
ওই রায়ের ওপর ভিত্তি করে নতুন মামলা করেছে ভ্যালেও। তাদের দাবি এই গোপন তথ্য থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে এনভিডিয়া।
ভ্যালেও জার্মান শাখার দায়ের করা এই মামলার দাবি, এনভিডিয়া ওই চুরির মাধ্যমে কোটি কোটি ডলারের লাভ করেছে। পাশাপাশি, এ ঘটনায় ভ্যালেও’র ব্যবসায়িক গোপন প্রযুক্তির অবমূল্যায়ন ঘটেছে।
কোম্পানিটি মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে, একইসঙ্গে এ সকল কোড ব্যবহারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা চাইছে তারা।
ওই ভিডিও কলের পরে ভ্যালেও তাদের সিস্টেম অনুসন্ধান করে দেখতে পায়, ‘হাজার হাজার ফাইল’ ও তাদের মালিকানাধিন বিভিন্ন তথ্য কপি করেছেন মনিরুজ্জামান।
তবে, মনিরুজ্জামান বলেন, এসব কোড তার ল্যাপটপেই কেবল সংরক্ষিত ছিল, সেখানে কোম্পানির অন্য কর্মীদের প্রবেশাধিকার ছিল না।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এনভিডিয়া বলছে, ‘ভ্যালেও’র কোড বা কথিত ব্যবসায়িক গোপন তথ্যের ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই এনভিডিয়ার, এবং ভ্যালেও’র অধিকার রক্ষায় তারা কঠোর ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে।’
এনভিডিয়ার দাবি, এ পরিস্থিতিতে কোম্পানিটি ভ্যালেওকে “পূর্ণ সহযোগিতা” করেছে।
বিবিসি’র যোগাযোগে এ ঘটনার বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি এনভিডিয়া।