রক্তের অক্সিজেন মাপায় ‘বর্ণবাদী’ অভিযোগে অ্যাপল

বাদীরা বলছেন, জালিয়াতির পাশপাশি জেনেশুনে নিজস্ব পণ্যের সক্ষমতা ভুলভাবে উপস্থাপন করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছে অ্যাপল।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2022, 03:29 PM
Updated : 29 Dec 2022, 03:29 PM

অ্যাপল ওয়াচে ব্যবহারকারীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপক ব্যবস্থায় ‘বর্ণবাদী আচরণের’ অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ক্লাস-অ্যাকশন’ মামলার মুখে পড়েছে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল।

শনিবার নিউ ইয়র্কের অধিবাসী ও অ্যাপল ব্যবহারকারীদের পক্ষে আদালতে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ, ব্যবহারকারীর ত্বকের বর্ণের ভিত্তিতে ফলাফলে হেরফের করে ‘পালস অক্সিমিটার’ প্রযুক্তি। ব্যবহারকারীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপক হিসেবে কাজ করে এটি।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময় পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে পালস অক্সিমিটারের ‘বর্ণবাদী পক্ষপাতের’ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

পরিধানকারীর ত্বকে ‘দৃশ্যমান ও ইনফ্রারেড’ আলো ফেলার পর ওই আলো কতটা শোষিত হয়, সেটির ওপর ভিত্তি করে পালস অক্সিমিটার কাজ করে। বেশ কয়েক শ্রেণির সেন্সর ব্যবহারের মাধ্যমে লোহিত রক্তকণায় অক্সিজেনের শতকরা হিসাব অনুমান করে এটি।

মামলায় উল্লেখ আছে, চিকিৎসকদের ব্যবহৃত প্রথাগত ‘ফিঙ্গারটিপ পালস অক্সিমিটার’ আঙ্গুলের ডগা থেকেই রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা ও হৃদস্পন্দন পরিমাপ করতে পারে। তবে, অ্যাপল ওয়াচের ‘দ্য প্রোডাক্ট’-এর মতো বিভিন্ন ডিভাইস রক্ত পরিমাপ করে ব্যবহারকারীর কব্জি থেকে।

অ্যাপলের দাবি, কব্জি পরিমাপক ব্যবস্থার তুলনায় ‘ফিঙ্গারটিপ সেন্সিং’ ব্যবস্থার অ্যালগরিদম ‘অনুপযুক্ত’। অ্যাপল আরও যোগ করে, এটি ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রেই অব্যবহারযোগ্য হতে পারে।

“সাম্প্রতিক এক গবেষণায় চিকিৎসায় ব্যবহৃত পালস অক্সিমিটারের চেয়ে ‘দ্য প্রোডাক্ট’-এর তুলনামূলক কম রক্তের ‘অক্সিজেন স্যাচুরেশন’ শনাক্তের বিষয়টি উঠে এলেও, বিভিন্ন গাত্রবর্ণের ব্যক্তির বেলায় এর সক্ষমতার ঘাটতি অ্যাপল তুলে ধরতে পারেনি।” - উল্লেখ রয়েছে মামলার অভিযোগে।

অভিযোগ বলছে, ‘ব্লাড অক্সিজেন’ অ্যাপের মতো ফিচারের কারণে অ্যাপল ওয়াচের সর্বশেষ সংস্করণ কিনতে খরচ পড়ে চারশ থেকে আটশ ডলারের মতো, যা একটি ‘প্রিমিয়াম’ মূল্য হিসেবে বিবেচিত।

এই মামলার বাদী অ্যালেক্স মোরালেস বলেছেন, এর সত্য ঘটনা সম্পর্কে জানলে তিনি কখনওই এতো অর্থ খরচ করে ‘প্রোডাক্ট’ কিনতেন না।

ব্যবহারকারীর ত্বকে ট্যাটুর মতো ‘স্থায়ী বা অস্থায়ী পরিবর্তন’ সম্পর্কে অ্যাপল নিজস্ব ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে, পণ্যে থাকা রক্তের অক্সিজেন পরিমাপক ব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে, ব্যবহারকারীর প্রাকৃতিক ত্বকের রঙে কীভাবে প্রভাব পড়বে, তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেনি কোম্পানিটি।

“অ্যাপল ওয়াচের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বাতিল করার পাশাপাশি এর গুণাবলী ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে অ্যাপল। আর গাঢ় ত্বকের লোকজনের বেলায় এটি পালস অক্সিমেট্রির পক্ষপাত ও বিভিন্ন ত্রুটির বিষয়টিও উল্লেখ করেনি।”

এই 'জালিয়াতি'র বিরুদ্ধে বিচারের আহ্বান জানিয়ে বাদীরা বলছেন, জালিয়াতির পাশপাশি জেনেশুনে নিজস্ব পণ্যের সক্ষমতা ভুলভাবে উপস্থাপন করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছে অ্যাপল।