অ্যাকুয়াফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই ভয়ের কারণে পানি এড়িয়ে চলেন। এ ভয় কখনও এতো তীব্র হয় যে এরা পানিতে ডুবে যাওয়ার মতো ভয়ে আক্রান্ত হন।
Published : 07 Oct 2024, 05:03 PM
অনেকেরই পানির প্রতি আলাদা ভীতি বা আতঙ্ক কাজ করে। এমন ব্যক্তিদের এই ভয় কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে সম্প্রতি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এজন্য ভার্চুয়াল রিয়ালিটি বা ভিআর ও ‘ফ্লোটেশন ট্যাংক’ ব্যবহার করে একটি নতুন সিস্টেম তৈরি করেছেন ‘মোনাশ ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা, যা মানুষের পানির প্রতি ভয় কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে বলে দাবি তাদের।
পানির প্রতি এমন ভয় ‘অ্যাকোয়াফোবিয়া বা হাইড্রোফোবিয়া’ নামে পরিচিত। ‘এক্সটেন্ডেড রিয়ালিটি বা এক্সআর’ নামে পরিচিত এ সিস্টেমটি তৈরি হয়েছে ‘এক্সারশন গেমস ল্যাবে’, যেটি ‘মোনাশ ইউনিভার্সিটি’র তথ্যপ্রযুক্তি অনুষদের অংশ।
এ গবেষণাটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘এসিএম বা অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি’।
গবেষণায় ভিআর হেডসেটের সঙ্গে পানিতে ভরতি একটি চৌবাচ্চাকে সমন্বয় করে ‘এক্সআর’ সিস্টেমটি তৈরি করেছেন গবেষকরা, যা অংশগ্রহণকারীদের পানির নীচের মতোই শান্ত ও নিমগ্ন অবস্থার অভিজ্ঞতা দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
ট্যাংকে ভেসে থাকা অবস্থায় হেডসেটটি পরেন অংশগ্রহণকারীরা। এ সময় ভার্চুয়াল পরিবেশের সঙ্গে অংশগ্রহণকারীদের মানিয়ে নিতে সহায়তার লক্ষ্যে তাদের হার্টরেট, শ্বাস প্রশ্বাস ও মস্তিষ্কের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এই ভিআর সিস্টেমটি।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক মারিয়া মন্টোয়া বলেছেন, অ্যাকুয়াফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই ভয়ের কারণে পানি এড়িয়ে চলেন। এ ভয় কখনও এতো তীব্র হয় যে এরা পানিতে ডুবে যাওয়ার মতো ভয়ে আক্রান্ত হন।
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এক্সপোজার থেরাপি যেভাবে কাজ করে সে বিষয়টি এই এক্সআর সিস্টেমটি ডিজাইনে বিবেচনায় ছিল, যাতে করে এটি মানুষকে ধীরে ধীরে নিরাপদ ও উপভোগ্যভাবে পানির প্রতি ভয় কাটাতে সাহায্য করবে।
অংশগ্রহণকারীরা এ যাত্রায় অভিজ্ঞতা পেয়েছেন ধাপে ধাপে, যেখানে বিভিন্ন সহজ কাজ দিয়ে শুরু করে আরও জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান তারা। যেমন অংশগ্রহণকারীদের ন্যাভিগেট করতে হয়েছে ভার্চুয়াল সাইক্লোন বা ঝড়ের মধ্য দিয়ে।
এই পরীক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে, অংশগ্রহণকারীদের হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে গাইড করার মাধ্যমে তাদের পানির প্রতি ভয় বা উদ্বেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করা, যার ফলে থেমে যায় ভার্চুয়াল ঝড়।
গবেষণায় অংশ নেন পানিকে ভয় পান এমন ১২ জন অংশগ্রহণকারী।
বেশ কয়েকটি ধাপে এ সিস্টেমের অভিজ্ঞতা নেন অংশগ্রহণকারীরা। এর মধ্যে হৃদস্পন্দন পরিমাপ করার কাজটি তারা শুরু করেন এক্সারসাইজ ম্যাটের ওপর শুয়ে। এরপর প্রযুক্তি ছাড়াই ট্যাংকে ভাসমান অবস্থায় ও অবশেষে পানিতে ভাসমান অবস্থায় এক্সআর সিস্টেম ব্যবহার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
এ গবেষণার সহ-লেখক অধ্যাপক ফ্লোরিয়ান মুলারের মতে, গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলে উঠে এসেছে, এক্সআর সিস্টেমটি ব্যবহারের ফলে অন্য সময়ের তুলনায় ট্যাংকে ভাসমান থাকা অবস্থায় পানির প্রতি কম ভয় কাজ করেছে অংশগ্রহণকারীদের।
গবেষকদের দাবি, কেবল অ্যাকোয়াফোবিয়াই নয়, বরং সম্ভাব্য অন্যান্য ফোবিয়াও দূর করতে এ নতুন পদ্ধতিটি সহায়তা করবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।