২০২৩ সালের জুনে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে মহাসাগরে নামে টাইটান। তবে নামার দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে গভীর সমুদ্রে বিস্ফোরিত হয় ডুবোযানটি।
Published : 18 Sep 2024, 04:34 PM
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুব দেওয়া পর্যটকবাহী ডুবোযান টাইটানের খোঁজ এখনও মেলেনি। টাইটান যে ধ্বংস হয়ে গেছে, তা নিশ্চিত। পাঁচ আরোহী যে আর বেঁচে নেই, তা নিয়েও নেই সংশয়। সম্প্রতি এ নিয়ে শুরু হয়েছে শুনানি।
শুনানিতে জানা গেছে, টাইটান বিস্ফোরিত হওয়ার আগে পাঁচ সদস্যের ক্রুদের কাছ থেকে আসা শেষ বার্তার মধ্যে একটি ছিল ‘সব ঠিকঠাক আছে’।
মার্কিন কোস্টগার্ডের তদন্তকারীরা বলেছেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে টাইটান ও এর মাদার শিপ অর্থাৎ কানাডার পতাকাবাহী জাহাজ ‘পোলার প্রিন্স’-এর সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে এটিই ছিল শেষ বার্তা।
এ ছাড়াও শুনানিতে এই প্রথম উঠে এসেছে একটি ছবি, যা তোলা হয়েছে দূরবর্তী কোনো যান থেকে। ছবিটিতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পরে সমুদ্রের তলায় পড়ে আছে টাইটান ডুবোযানটির লেজের শঙ্কু।
২০২৩ সালের জুনে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে মহাসাগরে নামে টাইটান। তবে নামার দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে গভীর সমুদ্রে বিস্ফোরিত হয় এটি।
এ ঘটনার সত্যতা উন্মোচন ও এ ধরনের ট্র্যাজেডি প্রতিরোধে সুপারিশ দেওয়ার লক্ষ্যে কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা সোমবার দুই সপ্তাহের তদন্ত শুরু করেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এজন্য টাইটান ও এর মাদার শিপ ‘পোলার প্রিন্স’-এর মধ্যে পাঠ্য বার্তাসহ যাত্রার একটি বিবরণ উপস্থাপন করেছেন তদন্তকারীরা।
স্থানীয় সময় ০৯:১৭ টার দিকে যাত্রা শুরু করে টাইটান। এ সময় ডুবোযানটির গভীরতা ও ওজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন মাদার শিপে থাকা সহায়তা কর্মীরা। পাশাপাশি ডুবোযানটি এখনও তাদের অনবোর্ড ডিসপ্লেতে দেখতে পারছেন কিনা তাও জিজ্ঞাসা করেছিলেন তারা।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হলেও পানির নীচে নামার প্রায় এক ঘণ্টা পরে টাইটান বার্তা পাঠায়, ‘সব ঠিকঠাক আছে’।
এই শেষ বার্তাটি স্থানীয় সময় ১০:৪৭ এ পাঠানো হয়েছিল, সে সময় পানির ৩,৩৪৬ মিটার গভীরতায় ছিল টাইটান। এরপরই একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
টাইটানের একটি ঐতিহাসিক ওভারভিউ উপস্থাপন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তারা উল্লেখ করেছেন, টাইটানের হালটি কখনও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়নি এবং স্টোরেজে থাকাকালীন আবহাওয়া ও অন্যান্য উপাদানের সংস্পর্শে রেখে দেওয়া হয়েছিল এটিকে।
এ ছাড়া, এই ঘটনার আগে হওয়া বিভিন্ন অভিযানে ডুবোযানটির গুরুতর সমস্যার নানা দিক উঠে আসে। ২০২১ ও ২০২২ সালে টাইটানিকের উদ্দেশ্যে হওয়া ১৩টি যাত্রার সময় ১১৮টি যন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয় ডুবোযানটির।
সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে সমুদ্র থেকে বের করে আনার সময় ডুবোযানটির সামনের গম্বুজটি পড়ে যাওয়া, বিভিন্ন থ্রাস্টার পানির ৩,৫০০ মিটার নীচে কাজ করতে ব্যর্থ হওয়া, পানিতে নামার সময় একবার এর ব্যাটারি সক্ষমতা হারিয়ে ফেলা ও এর ভেতরে ২৭ ঘণ্টা ধরে যাত্রীদের আটকে থাকার মতো ঘটনা।
টাইটান বিস্ফোরণের পর ডুবোযানটির নির্মাতা কোম্পানি ‘ওশনগেট’ তাদের সব ধরনের অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
বর্তমানে কোম্পানিটিতে কোনো পূর্ণকালীন কর্মী না থাকলেও এই তদন্তের জন্য একজন আইনজীবী তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন, বলেছে ওশনগেট।
টাইটানে আরোহী হিসেবে ছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের ও বিমান সংস্থা ‘অ্যাকশন এভিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানের অ্যাংরো কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ, ফরাসি পর্যটক পল অঁরি নারজিলে।
এ ছাড়াও ছিলেন ওশনগেইটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ।