৪০টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি, ৭৫টির দরপতনের দিন সূচক কমল ০.১৮ পয়েন্ট। লেনদেন আবার পাঁচশ কোটির নিচে নেমেছে।
Published : 09 Apr 2023, 03:06 PM
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও এ খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ফিরছে না। লোকসানি ও স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারেই ঝুঁকে আছে বাজার।
অন্যদিকে নতুন তালিকাভুক্ত মিডল্যান্ড ব্যাংক দেখিয়েছে চমক। দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। টানা তিন কর্মদিবসে শেয়ারের দর বেড়েছে ২৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা ব্যাংক খাতে গত এক বছরের চিত্রের তুলনায় ব্যতিক্রম।
মিডল্যান্ডের চমক দেখালেও এ খাতের ৩৫টি কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন ১০ কোটি টাকাও ছাড়াতে পারেনি। পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনী ও লোকসানি কোম্পানির প্রাধান্যও কমেনি।
রোববার আবারও একটি সপ্তাহ শুরু হয়েছে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে, তবে পরিমাণ তা সামান্য।
৪০টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি, ৭৫টির দরপতনের দিন সূচক কমেছে ০.১৮ পয়েন্ট। লেনদেন আবার পাঁচশ কোটির নিচে নেমেছে।
হাতবদল হয়েছে মোট ৪৯৮ কোটি ৮১ লাখ ৬৩ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ছিল ৬১২ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
২১৪টি কোম্পানি এদিন লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে, যেগুলো আসলে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। আর ৬২টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।
বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে এদিন তিনটি ব্যাংকের দামে কোনো মূল্যসীমা ছিল না।
এর মধ্যে ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ারের ৩১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ২০ পয়সা, সাড়ে ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা ২০ টাকা ৩০ পয়সার প্রাইম ব্যাংক এবং ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা ১৮ টাকা ৯০ পয়সার শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়ল ১০ পয়সা করে।
অন্যদিকে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে ১ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.৩২ শতাংশ। দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্যাংকটি। আগের দিন শেয়ারদর ছিল ১১ টাকা ৮০ পয়সা। দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৯০ পয়সা।
এরই মধ্যে আগে তালিকাভুক্ত ১২টি ব্যাংককে ছাড়িয়ে গেছে এ কোম্পানির শেয়ার দর।
অথচ গত ২৭ মার্চ লেনদেন শুরু হলে প্রথমে অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে নেমে গিয়েছিল মিডল্যান্ডের দর। লেনদেন হয়েছিল ৯ টাকায়। তবে দিন শেষে ১০ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায় দর। এরপর পাঁচ কর্মদিবস ফ্লোর প্রাইসে আটকা পড়লেও ৫ এপ্রিল ফ্লোর ছাড়িয়ে ১০ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়। পরের দিন দর আরও এক টাকা বাড়ে।
রমরমা লোকসানি ও স্বল্প মূলধনীরই
দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হওয়া চারটি কোম্পানির মধ্যে দুটি লোকসানি।
এদিন দর বৃদ্ধি ও দর হারানোর শীর্ষ তালিকা- দুই ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই কোম্পানিগুলোর পার্থক্য। যেগুলো বেশি দর হারিয়েছে, সেগুলো গত কিছুদিন ধরে বাড়ছিল।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯.৪৫ শতাংশ দর বেড়েছে ২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গত বছর উৎপাদনে ফেরা এমারেল্ড অয়েলের। তবে কোম্পানি এখনও মুনাফার মুখ দেখেছে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়।
বন্ধ থাকা পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। বাকি দুই বছরের এবং চলতি বছরের হিসাব প্রকাশ এখনও বাকি।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯.১৯ শতাংশ দর বেড়েছে এক মাসের কম সময়ে ৪৩ টাকা থেকে ৯০ টাকার ঘর ছাড়িয়ে যাওয়া লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের। অথচ চলতি অর্থবছরের অর্ধবার্ষিক হিসাবে কোম্পানিটি লোকসান দিয়েছে।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের দর বেড়েছে ৮.৭২ শতাংশ। ২৭৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে লাফ দিয়ে দাম ঠিক হয়েছে ৩০৪ টাকায়।
বছরের পর বছর ধরে এ কোম্পানির শেয়ার একশ টাকার নিচে লেনদেন হত। গত জুলাই থেকে অবিশ্বাস্য উত্থানে দর সেপ্টেম্বরে এক হাজার টাকা ছুঁয়ে ফেলে। সম্প্রতি তা আবার দুই শ টাকার ঘরে নেমে আসে।
দিনের দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে এ কোম্পানিগুলো ছাড়াও ছিল সিএপিএম আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, যার দর বেড়েছে ৭ শতাংশ।
এর বাইরে স্বল্প মূলধনী কোহিনূর কেমিকেলসের দর ৬.৪৫ শতাংশ, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দর ৬.২৮ শতাংশ, এসিআই ফর্মুলার দর ৪.৩৪ শতাংশ বেড়েছে।
শীর্ষ দশের নবম স্থানে থাকা বিডিথাই ফুডের দর ৩.৭০ শতাংশ এবং নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও আটটি করে কোম্পানির দর এক ও দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে।
পতনের শীর্ষে যারা
এই তালিকায় সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া আলহাজ টেক্সটাইল মিলস দর হারিয়েছে ৫.৯৯ শতাংশ। স্বল্প মূলধনী এ কোম্পানিটির শেয়ারদর গত কয়েক মাসে বাড়ছিল অস্বাভাবিক হারে।
এছাড়া রহিম টেক্সটাইলের দর ৫.৯৩ শতাংশ, এপেক্স ফুডসের দর ৫.৭৫ শতাংশ, বিডিল্যাপসের দর ৫.৬৬ শতাংশ, এডিএন টেলিকমের দর ৫.৫৪ শতাংশ, এপেক্স স্পিনিং মিলসের দর ৫.০৮ শতাংশ এবং সোনালী আঁশের দর ৫.০৪ শতাংশ কমেছে।
শীর্ষ তালিকায় থাকা জিকিউ বলপেন, বিডি অটোকার এবং ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে চার শতাংশের বেশি।
এর মধ্যে এডিএন টেলিকম ও ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স ছাড়া বাকি সবগুলো স্বল্প মূলধনী কোম্পানি, যেগুলোর শেয়ারদর তার মৌলভিত্তির তুলনায় বেশি কি না, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন।
আরও দুটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৭টির দর ৩ শতাংশের বেশি এবং ১৮টি করে কোম্পানির দর যথাক্রমে এক ও ২ শতাংশের বেশি কমেছে।