বীমার সংশোধন, ক্রেতা পেল আর্থিক খাত, মিউচ্যুয়াল ফান্ডও

সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৩৮০টি কোম্পানির। ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন এটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2023, 10:31 AM
Updated : 29 May 2023, 10:31 AM

পুঁজিবাজারে বহু মাস ঘুমিয়ে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেল এবার। কেবল ক্রেতা ফেরেনি, দর বৃদ্ধির শীর্ষে দেখা গেছে তিনটি ফান্ডকে।

খাতওয়ারী লেনদেনের শীর্ষে উঠতে না পারলেও অবশেষে এ খাতের ইউনিটের চাহিদা দেখা দেওয়াটা পুঁজিবাজারে স্বস্তি ফেরার ইঙ্গিত স্পষ্ট করল।

এতদিন তলানিতে পড়ে থাকা আর্থিক খাতেও সোমবার আগ্রহ বেড়েছে। তবে ব্যাংক খাত এখনও তলানিতে।

লেনদেনের শীর্ষে যথারীতি বীমা খাত। তবে টানা দর বাড়তে থাকা খাতটিতে দেখা গেছে সংশোধন।

আগের দিন গা ঝাড়া দেওয়া প্রকৌশল খাতের লেনদেন একদিন যেতে না যেতেই অর্ধেকের নিচে নেমেছে।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সব মিলিয়ে দর বাড়ার তুলনায় পতন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ছিল বেশি। সূচক কমেছে ৭ পয়েন্ট। তবে লেনদেনে চাঙ্গাভাব বজায় আছে। টানা চতুর্থ দিন হাজার কোটি টাকার বেশির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

দিনভর হাতবদল হয়েছে এক হাজার ১৭৪ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার। আগের দিন সূচক ১৪ পয়েন্ট বৃদ্ধির দিনও লেনদেন ছিল প্রায় একই রকম।

৭২টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১১১টির দর। ১৯৭টি কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছে আগের দিনের দরে। সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৩৮০টি কোম্পানির। বাকি ১৩টি কোম্পানির মধ্যে তিনটির লেনদেন স্থগিত। অর্থাৎ কেবল ১০টি কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়নি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার পর পুঁজিবাজারে যে মন্দা দেখা দেয়, তারপর থেকে এক দিনে এত বেশি কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হওয়ার বিষয়টি এই প্রথম দেখা গেল।

বিপুল লেনদেন নিয়ে বীমায় দর সংশোধন

মোট লেনদেনের প্রায় ৩৩ শতাংশই হয়েছে এই একটি খাতে। এর মধ্যে সাধারণ বীমায় হাতবদল হয়েছে ১৬৬ কোটি ৭২ টাকার শেয়ার, জীবন বীমায় ১৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এই একটি খাতের লেনদেন হয়েছে ২৯৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৩৭৮ কোটি টাকার বেশি।

প্রায় তিনশ কোটি টাকা লেনদেন হলেও বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে।

সাধারণ বীমার ৪৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯টির, আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে দুটি আর ৩২টি কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে।

জীবন বীমায় একটির দর বেড়েছে, কমেছে ১২টি কোম্পানির।

সাধারণ বীমার একটি করে কোম্পানি ৬ ও ৫ শতাংশের বেশি, ৫টি কোম্পানি চার শতাংশের বেশি, আটটি কোম্পনি ৩ শতাংশের বেশি, নয়টি কোম্পানি ২ শতাংশের বেশি, সাতটি কোম্পানি এক শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।

জীবন বীমার যেসব কোম্পানি দর হারিয়েছে তার মধ্যে ছয়টি ৫ শতাংশের বেশি, একটি চার শতাংশের বেশি, তিনটি কোম্পানির দুই শতাংশের বেশি এবং দুটি কোম্পানির এক শতাংশের বেশি দর কমেছে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা তথ্য প্রযুক্তি এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৬০ কোটি টাকার বেশি, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং খাদ্য খাতে ৫০ কোটি টাকার বেশি, বস্ত্র, প্রকৌশল এবং ভ্রমণ খাতে ৪০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও আর্থিক খাতে হঠাৎ চাহিদা

গত কয়েক মাস ধরে এই দুটি খাত বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের একেবারে তলানিতে ছিল। পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করার পর প্রথমবারের মত দুটি খাতেই ক্রেতার সন্ধান মিলল।

এর মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে চমক হিসেবে ধরা যায়। মন্দা পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ ফান্ডই লোকসান দিচ্ছে। এ কারণে এসব ফান্ডের ইউনিটের ক্রেতার খোঁজ মিলছিল না ছয় মাসের বেশি সময় ধরে।

ফান্ডের সংখ্যা ৩৬টি হলেও এক কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছিল না। আবার যে লেনদেন হচ্ছিল, তার মধ্যে এক দুটির লেনদেন ছিল খাতের ৫০ শতাংশ।

সকাল থেকে দুটি ফান্ডের ইউনিট দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় দেখা যায়। দুই ঘণ্টা পর অন্যান্য ফান্ডগুলোরও ক্রেতা আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এই খাতে হাতবদল হয় ২৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এসইএমএল লেকচার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সবচেয়ে বেশি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ইউনিট হাতবদল হয়। গত দুই বছরেও কোনো দিন এত বেশি ইউনিটের লেনদেন হয়নি। গত এক মাসে কোনো দিন একটি, কোনোদিন পাঁচটি, কোনোদিন একটি ইউনিটেরও ক্রেতা ছিল না।

সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৫৩ লাখ ৪৭ হাজার, এসইএমএলএফবিএসএল গ্রোথ ফান্ডের ৪৯ লাখেরও বেশি, ইউনিট হাতবদল হয়েছে।

১০ লাখের বেশি ইউনিট লেনদেন হয়েছে আরও চারটি ফান্ডের। আরও ১১টি ফান্ডে এক লাখ ১৫ হাজার থেকে ৯ লাখ ৭ হাজার ইউনিট পর্যন্ত হাতবদল হতে দেখা গেছে।

আর্থিক খাতের ২২টি কোম্পানির মধ্যে ক্রেতা ফিরেছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিংসহ বেশ কিছু কোম্পানির।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা

সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর বেড়েছে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের দরও বেড়েছে কাছাকাছি।

সিএপিএম আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, মাইডাস ফাইন্যান্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফার্স্ট প্রাইম ফাইন্যান্স, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ন্যাশনাল টি কোম্পানি, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও দেশবন্ধু পলিমার ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে।

সব মিলিয়ে ছয়টি কোম্পানির দর ১০ শতাংশের কাছাকাছি, একটি করে কোম্পানির দর যথাক্রমে ৯, ৮ ও ৭ শতাংশের বেশি দুটির দর ৬ শতাংশের বেশি, একটির ৫ শতাংশের বেশি, ৫টির চার শাতংশের বেশি, ৯টির তিন শতাংশের বেশি, ১৩টির দুই শতাংশের বেশি, ১৭টির এক শতাংশের বেশি দর কমেছে 

পতনের শীর্ষে যারা

ওয়াইম্যাক্স, মিডল্যান্ড ব্যাংক, রেনউইক যগেশ্বর, শ্যামপুর সুগার, বিজিআইসি, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা লাইফ, পদ্মা লাইফ এবং প্রাইম লাইফ ছিল দরপতনের শীর্ষে।

সব মিলিয়ে দুটির দর ৭ শতাংশের বেশি, দুটির ৬ শতাংশের বেশি, আটটির ৫ শতাংশের বেশি, ১০টির ৪ শতাংশের বেশি, ১৫টির ৩ শতাংশের বেশি, ১৯টির ২ শতাংশের বেশি এবং ২৫টি কোম্পানির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।