পুঁজিবাজার: লভ্যাংশ ঘোষণায় নিয়ম রক্ষা, বিতরণের বেলায় নিয়ম উধাও

২০২২ সালের জুনে এমনকি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও বেশ কিছু কোম্পানি এখনও তা বিতরণ করেনি।

ওয়াসেক বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2023, 06:04 AM
Updated : 20 March 2023, 06:04 AM

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। পরের বছর ২৮ জানুয়ারি বিনিয়োগকারীদেরকে কুরিয়ার সার্ভিসে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট পাঠানোর কথা জানায়; কিন্তু আসলে লভ্যাংশ পাঠানো হয়নি।

অভিযোগ পেয়ে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি এ ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ওই বছরের ৩ অক্টোবর প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্তও নেয় তারা।

মামলার পর কী হয়েছে, সে বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে পারেননি সংস্থাটির মুখপাত্র রেজাউল করিম।

এ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করাও কঠিন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে কোম্পানির যে মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া আছে, সেটি চালু নেই। টেলিফোন নম্বরেও কল ঢোকে না। কোম্পানি সচিবের নাম বা ফোন নম্বর, কিছুই দেওয়া নেই।

দেশের পুঁজিবাজারে লভ্যাংশ ঘোষণা করে বিতরণ না করার ঘটনা এটিই একমাত্র নয়। আরেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওয়েন্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এমন ঘটনা ঘটিয়েছে দুইবার।

২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করলেও ২৩ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। কিন্তু সেই লভ্যাংশ বিতরণ করার কোনো ঘোষণা পরে আর আসেনি।

এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, এ ঘটনা আগের বছরও ঘটায় কোম্পানিটি। ওই বছর ৩ শতাংশ নগদ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ৩০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও তা বিতরণ করা হয়নি।

পরপর দুই বছর একই ঘটনা ঘটানোর পরও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা আসেনি।

কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- এ বিষয়ক প্রশ্নে বিএসিইসি মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, “আমরা তখনই ব্যবস্থা নিতে পারি, যদি কোনো বিনিয়োগকারী অভিযোগ দেয়।”

কেউ অভিযোগ দেয়নি?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।”

সুহৃদের মতোই ওয়েস্টার্ন মেরিনেরও কোম্পানি সচিবেন নাম বা ফোন নম্বর দেওয়া নেই ডিএসইর ওয়েবসাইটে। কোম্পানির যে ফোন নম্বর দেওয়া আছে সেটিতে ফোন করে শোনা গেল, “দুঃখিত আপনার ডায়াল করা নম্বরটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না।”

আইন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা চূড়ান্ত হয় বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম)। এ সভায় তা অনুমোদন হলে এক মাসের মধ্যে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর হিসাবে পাঠাতে হয়।

২০২২ সালের জুনে এমনকি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে এখনও বেশ কিছু কোম্পানি তা বিতরণ করেনি।

অপরদিকে আরও কিছু কোম্পানি নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর তা বিতরণ করেছে। তবে দেরির জন্য জরিমানার বিধান থাকলেও তা আদায় করা হয়েছে কি না, তা জানানো হয়নি।

বিনিয়োগকারীদের আর্থিক লাভক্ষতির বিষয়টি এতে বারবার উপেক্ষিত হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে, এমন উদাহরণও নেই। বিশ্লেষকদের মতে যে কারণে গড়িমসি বা দেরি নিয়ে কোম্পানিগুলোর গা ছাড়া ভাব রয়েই গেছে।

ডিএসই স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমদ রশীদ লালী বিষয়টিকে দেখছেন পুঁজিবাজারের সুশাসনের অভাব হিসেবে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গভর্নেন্সের দিক দিয়ে একেবারে বাজে অবস্থায় পড়ে গেছে। ৭ থেকে ৮টা কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা পরিশোধ করছে না। কিছু কোম্পানি তা দিচ্ছে ভেঙে ভেঙে। এটা কোনো কথা? বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাসটা আসবে কোত্থেকে?”

কারা ব্যবস্থা নেবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ডিএসই তো তদন্ত করবে। তারপর তারা সেটা বিএসইসিতে পাঠাবে। বিএসইসি পরে ব্যবস্থা নেবে।

“কিন্তু ডিএসই কী করছে? ধরলাম তারা লভ্যাংশ বিতরণ না করায় প্রতি দিন ৫ হাজার টাকা করে পাচ্ছে। কিন্তু তাতে বিনিয়োগকারীর কী? তারা তো তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের সাবেক গবেষণা প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার মনে করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে গাফিলতি আছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটা ঠিক এখানে লোকবলের অভাব আছে। তারপরও এসব তো মানা যায় না।”

তিনি বলেন, “লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য। এই কমিশন নগদ লভ্যাংশকে উৎসাহ দিয়েছে। এর আগে বোনাস শেয়ার দিত। ভাবটা এমন ছিল, যে ‘আমরা শেয়ার দিলাম, তোমরা বিক্রি করে টাকা নিয়ে নাও’। কিন্তু এতে লাভ হয়নি। শেয়ারের দাম পড়ে যেত। কিন্তু এখন যদি ঘোষণা দিয়ে লভ্যাংশ বিতরণ না করে, তাহলে তো কোনো লাভ হল না।”

দেবব্রত মনে করেন, যে জরিমানার কথা আইনে বলা আছে, তা যেন পরিচালকদের কাছ থেকে আদায় করা হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যদি কোম্পানির কাছ থেকে আদায় করা হয়, তাহলে তার টাকা তো শেয়ারহোল্ডারদের ওপরই বর্তায়।

তিনি বলেন, “প্রয়োজনে ইনডিপেনডেন্ট পরিচালকদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ, তাদেরকে তো বসানো হয়েছে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায়।“

গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের ল্যভাংশ বিতরণে সময় চেয়ে কোনো কোম্পানি আবেদন করেছে কি না, এমন প্রশ্নে রেজাউল বলেন, “এ বিষয়ে আমার জানা নেই। এমন কোনো আবেদন পড়েছে বলে মনে হয় না।

“কেউ আবেদন করলে যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে তাদের এক্সটেনশন দেওয়া হয়। তবে সচরাচর এটা দেওয়া হয় না।” 

আইন কী বলে

ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ এর ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, বার্ষিক সাধারণ সভায় লভ্যাংশ অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে তা বিতরণ করতে হবে। এ লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে হবে। তবে মার্জিন অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে ল্যভাংশ বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে পাঠাতে হয়।

যদি কোনো কোম্পানি এই সময়ের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সেই কোম্পানির পরিচালকদের প্রতি দিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পরেও লভ্যাংশ বিতরণ না করার পরও এ জরিমানা আরোপ না হওয়ার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন একটি কোম্পানির সচিব।

সময় পেরিয়ে গেলেও ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, “কাগজপত্র না দেখে কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে কী হয়েছে, সেটি বলা সম্ভব নয়।”

লভ্যাংশ বিতরণের প্রতিবেদন দেয়নি যারা

সুহৃদ ও ওয়েস্টার্ন মেরিনার ছাড়াও আরও বেশ কিছু কোম্পানি লভ্যাংশ বিতরণে গড়িমসি করছে।

২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য লুব রেফ লভ্যাংশ ঘোষণা করে গত বছরের ৩১ অক্টোবর। শেয়ার প্রতি এক টাকা লভ্যাংশের জন্য রেকর্ড ডেট ঠিক করা হয় ২০ নভেম্বর। লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে এজিএম হয় ২৭ ডিসেম্বর।

আইন অনুযায়ী ২৬ জানুয়ারির মধ্যে বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশের টাকা পৌঁছে যাওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। লভ্যাংশ বিতরণ করে কোম্পানিটি প্রতিবেদন দেয়নি।

কোম্পানি সচিব মশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আংশিক পরিশোধ করেছি।”

এজিএমের ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা। কেন আপনারা দিতে পারলেন না?- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “সেটা নিয়ে ডিএসই ব্যাখ্যা চেয়েছিল, আমরা দিয়েছি।”

কী সেই ব্যাখ্যা- তা জানাতে রাজি জননি মশিউর। বলেন, “এটা কনফিডেনশিয়াল (গোপন।) আমাদের কিছু ইস্যু তাদেরকে জানিয়েছি।”

নির্ধারিত সময়ে লভ্যাংশ না দিলে যে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়, সেটি তাদের ওপর আরোপ হয়নি বলেও নিশ্চিত করেন কোম্পানি সচিব। বলেন, “এ ধরনের কোনো আদেশ এসেছে বলে আমি জানি না, আমাদের ম্যানেজমেন্টও জানে না।”

গত বছরের ২৪ অক্টোবর লাভেলো আইসক্রিমের পরিচালনা পর্ষদ ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এ লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ছিল ১৪ নভেম্বর। আর লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে এজিএম ডাকা হয় গত ১২ ডিসেম্বর। এর ৩০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে শেয়ারপ্রতি এক টাকা ২০ পয়সা হারে লভ্যাংশ জমা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এখনও দেওয়া হয়নি।

গত ১২ মার্চ ডিএসই বিজ্ঞপ্তিতে বিনিয়োগকারীদেরকে জানায়, লাভেলো এখনও লভ্যাংশ বিতরণ করে প্রতিবেদন দেয়নি।

কেন লভ্যাংশ বিতরণ করা হচ্ছে না তা জানতে কোম্পানি সচিব দিদারুল আলমের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করলে তিনি ধরেননি।

ফরচুন সুজ লভ্যাংশ ঘোষণা করে গত বছরের ৩০ অক্টোবর। শেয়ারপ্রতি এক টাকা নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার। নগদ লভ্যাংশের জন্য রেকর্ড ডেট ঘোষণা করা হয় ২৪ নভেম্বর, এজিএম ৮ ডিসেম্বর। ফলে ৭ জানুয়ারির মধ্যে এ লভ্যাংশ ব্যাংক হিসাবে ঢোকার কথা। এরপর পেরিয়ে গেছে আরও সোয়া দুই মাস। কিন্তু কোনো টাকা আসেনি।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাগাদার পর দুটি কোম্পানি তাদের লভ্যাংশ বিতরণ করেছে। তবে ফরচুর এখনও করেনি।

এ কোম্পানির সচিব রমিজ উদ্দিন ভুঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা লভ্যাংশ দেইনি বিষয়টা এমন নয়। তবে পুরোপুরি দিতে পারছি না কিছু সমস্যার কারণে।”

কী সেই সমস্যা- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এগুলো তো কোম্পানির তথ্য। সব গণমাধ্যমে আসলে কেমন দেখায়। তবে আমাদের কিছু আর্থিক সমস্যা ছিল। সেটা আমরা ডিএসইকে জানিয়েছিল।”

সঠিক সময়ে লভ্যাংশ বিতরণ না করলে যে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হওয়ার কথা, সেটি কি আরোপ হয়েছে?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এমন কোনো আদেশ হয়েছে বলে তো ম্যানেজমেন্ট বা আমার জানা নেই।”

অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন লভ্যাংশ ঘোষণা করে গত বছরের ৮ নভেম্বর। শেয়ারপ্রতি এক টাকা লভ্যাংশের রেকর্ড ডেট ঠিক করা হয় ৩০ নভেম্বর, এজিএম ২৮ ডিসেম্বর। বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশ পেয়ে যাওয়ার কথা ছিল ২৭ জানুয়ারি। কিন্তু তা বিতরণ করে এখনও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।

জিএসপি ফাইন্যান্স ২০২১ সালের লভ্যাংশ ঘোষণা করে অর্থবছর শেষ হওয়ার আট মাস পর। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত আসে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট। শেয়ারপ্রতি ২৫ পয়সা নগদের পাশাপাশি সাড়ে ৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেওয়ার ঘোষণা করা হয়।

নতুন ব্যবস্থাপনায় বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া বোনাস শেয়ার বিতরণ করা যায় না। জিএসপি ফাইন্যান্সের এ বোনাস নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

তবে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর এজিএমে নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করে জিএসপির শেয়ারধারীরা। সেই লভ্যাংশ ব্যাংক হিসাবে চলে যাওয়ার কথা ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে। এরপর আরও প্রায় চার মাস হয়ে গেলেও সেটি আর পাঠানো হয়নি। এরমধ্যেই ২০২২ সালের ডিসেম্বর সমাপ্ত সময়ের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা শুরু হয়েছে।

লভ্যাংশ বিতরণে দেরির বিষয়ে জিএসপির বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কারণ, কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান টানা দুই দিন ফোন ধরেননি।

এডভেন্ট ফার্মা লভ্যাংশ ঘোষণা করে গত বছরের ৩০ অক্টোবর। শেয়ারপ্রতি ২০ পয়সা লভ্যাংশের জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয় ১৭ নভেম্বর। এ লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে এজিএম করা হয় ১২ ডিসেম্বর। সে হিসাবে ১১ জানুয়ারির মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যাওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। সেটি পাঠিয়ে এখন পর্যন্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির সচিব ইকরামুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা লভ্যাংশ বিতরণ করে ডিএসইকে প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বলেছে, নতুনভাবে দিতে। সেটা দিয়ে দেব।”

প্রায় ১০ মাস পর বিতরণ

তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করে কে অ্যান্ড কিউ। লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ছিল ২৫ মে।

অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের জন্য এজিএমে পাসের প্রয়োজন নেই। ফলে রেকর্ড ডেটের এক মাস পরেই তা বিতরণ করার কথা। কিন্তু ২০২২ সাল শেষ হলেও সেই লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়নি।

এ ঘটনায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসই এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কোম্পানিটি তার ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ করেনি।

সেদিনের সেই তাগাদার পরে গত ১৪ মার্চ কে অ্যান্ড কিউয়ের পক্ষ থেকে লভ্যাংশ বিতরণ করার কথা জানানো হয়। অর্থাৎ রেকর্ড ডেটের প্রায় ১০ মাস পর লভ্যাংশ পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এনার্জিপ্যাক পাওয়ার গত বছরের ৩০ অক্টোবর ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে এজিএমের তারিখ জানানো হয় ১৭ নভেম্বর।

অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করার কথা ছিল।

তবে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসই এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কোম্পানিটি লভ্যাংশ বিতরণ করেনি। এরও তিন দিন পর ৯ ফেব্রুয়ারি এনার্জিপ্যাক জানায়, তারা নগদ লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছে।

নিয়ম না মানার এ প্রবণতা থেকে বাদ নেই সরকারি কোম্পানিও।

বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ডেসকো গত বছরের ১৬ অক্টোবর শেয়ারপ্রতি এক টাকা হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করে। লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ছিল ১৭ নভেম্বর। তা চূড়ান্ত করতে এজিএম ডাকা হয় ১৪ জানুয়ারি। ফলে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু এরও এক মাস পর ১৬ মার্চ কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে ল্যভাংশ জমা দেওয়া হয়েছে।