সবচেয়ে বেশি দর বাড়া ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ২৮টিই সাধারণ ও জীবন বীমা খাতের।
Published : 19 Jun 2023, 03:02 PM
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে যে ‘চাপ’ দেখা দিয়েছিল, তার অবসান হয়েছে।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচঞ্জের সাধারণ সূচক বেড়েছে ৩৩ পয়েন্ট। ২৯টি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৪৬টির দর। ১৮০টি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
উত্থানের এই দিনটিতে সবচেয়ে খুশি ছিলেন বীমা খাতের বিনিয়োগকারীরা। খাদ্য, ওষুধ, প্রকৌশলসহ আরও বেশ কিছু খাতেও শেয়ারধারীরাও হাসিমুখে দিন শেষ করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানির ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকার চিত্র পাল্টায়নি।
মুদ্রানীতিতে অর্থনীতি বা পুঁজিবাজারের জন্য নেতিবাচক কিছু থাকতে পারে, এই ধারণা থেকে আগের সপ্তাহে হয় দরপতন। রবি থেকে বুধবার পর্যন্ত চার দিনে ৭৮ পয়েন্ট সূচক পতনের পর বৃহস্পতিবার ৬ পয়েন্ট বাড়ে। তবে সেদিন লেনদেন দুই মাসের মধ্যে প্রথমবারের মত নামে পাঁচশ কোটি টাকার নিচে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার মুদ্রানীতি ঘোষণার পর লেনদেন নামে চারশ কোটি টাকার কাছাকাছি। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনায় সতর্ক হয়ে ওঠার পর সূচক আগের দিনের কাছাকাছি থাকে।
সেদিন লেনদেনের শেষে যে মুদ্রানীতি ঘোষিত হয়, তাকে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”
মুদ্রানীতিতে ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের দেওয়া ব্যাংকের শ্রেণিবদ্ধ ঋণের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত সঞ্চিতি ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ না নিয়ে বন্ড ইস্যু করে অর্থের সংস্থান করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে।
মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এ দুটো বিষয়ের ওপর ডিএসইও দেশের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে বলেও জানান সংস্থার চেয়ারম্যান।
সোমবার লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তা। শেষ পর্যন্ত তা আবার ৬ হাজার তিনশ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। দিন শেষে ডিএসইএক্সের অবস্থান হয় ৬ হাজার ৩১৪ পয়েন্ট।
আগের সপ্তাহে হারিয়ে ফেলা সূচকের প্রায় অর্ধেকটা ফিরে এলেও লেনদেনের গতি এখনও আসেনি। এক সপ্তাহ পরেই ঈদুল আজহা। এই অবস্থায় নতুন বিনিয়োগে না গিয়ে অনেকেই অপেক্ষায় আছেন।
আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়ে লেনদেন দাঁড়ায় ৫৩৩ কোটি ২২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৪১১ কোটি টাকার কিছু বেশি।
বীমা খাতের দল বেঁধে উত্থান
আগের সপ্তাহের দরপতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বীমা খাতের বিনিয়োগকারীরা এদিন সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলেন। লেনদেনের শীর্ষে কেবল নয়, দর বৃদ্ধির শীর্ষেও দেখা গেছে এই খাতটিকে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানির ৯টিই বীমা খাতের। আর সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাওয়া ৩০টি কোম্পানির ২৮টিই হয় সাধারণ নয় জীবন বীমা কোম্পানি।
বীমা খাতের দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে জীবন বীমার দিনটি তুলনামূলক বেশি ভালো গেছে। মোট লেনদেনের প্রায় ২৫ শতাংশ বা ১১৪ কোটি টাকার বেশি হাতবদল হয়েছে এই খাতের ১৫টি কোম্পানিতে। এগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪টির, একটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানির দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি, তিনটি করে কোম্পানির ৭ ও ৬ শতাংশের বেশি, একটির ৫ শতাংশের বেশি এবং দুটির দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।
সাধারণ বীমার ৪২টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হওয়া ৪১টির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭টির, তিনটি ছিল আগের দিনের দরে, একটির দর কমেছে।
এসব কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের প্রায় ১১ শতাংশ। আগের দিন মোট লেনদেনে সাধারণ বীমার হিস্যা ৪ শতাংশও ছিল না।
এসব কোম্পানির মধ্যে পাঁচটির দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি, দুটির ৮ শতাংশের বেশি, ছয়টির ৭ শতাংশের বেশি, চারটির ৬ শতাংশের বেশি, তিনটির ৫ শতাংশের বেশি, সাতটির ৪ শতাংশের বেশি, চারটির ৩ শতাংশের বেশি, একটির দর বেড়েছে দুই শতাংশের বেশি।
লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ৪৮ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। ১১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৫টির দর।
তৃতীয় স্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতে হাতবদল হয়েছে ৪৪ কোটি টাকার বেশি। ১১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে দুটির দর।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা
এই তালিকায় ছিল মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম লাইফ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স সোনালী লাইফ, সিএপিএম আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।
এর মধ্যে দশম স্থানে থাকা পূরবীর দর বেড়েছে ৮.৯৮ শতাংশ। বাকিগুলোর দর ৯.১৬ শতাংশ থেকে ৯.৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
উত্থানের দিনে পতনের শীর্ষে যারা
এই তালিকার প্রথমেই ছিল লোকসানি কোম্পানি খুলনা পেপার মিলস, যেটির শেয়ারদর গত সপ্তাহে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ৪.৭২ শতাংশ।
তিন শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে এপেক্স ট্যানারি, মিডল্যান্ড ব্যাংক ও খান ব্রাদার্স পিপিওভেন। দুই শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে মেট্রো স্পিনিং মিলস।
দরপতনের শীর্ষে থাকা বাকি পাঁচ কোম্পানির মধ্যে এপেক্স স্পিনিং মিলস, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ১ শতাংশের বেশি এবং সিমটেক্স ও সোনালী আঁশের দর কমেছে এক শতাংশেরও কম।