এমারেল্ড অয়েল: ২০১৭ সালের ধাক্কার প্রভাব যতটা পড়ল

২০১৭ সালে ঘোষণা ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া কোম্পানিটি চালু করেছে নতুন পর্ষদ। একসঙ্গে তিন বছরের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা।

পুঁজিবাজার ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2023, 06:24 AM
Updated : 26 Feb 2023, 06:24 AM

উৎপাদনে ফেরার পর বন্ধ থাকার প্রথম তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য খাতের কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল।

২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই তিন বছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ প্রস্তাব করা হয়নি। তালিকাভুক্ত হওয়ার তৃতীয় বছরে কারখানা বন্ধ করে মালিকপক্ষের আত্মগোপনে যাওয়ার ওই সময়টায় ব্যাপক লোকসানও হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির নতুন পরিচালনা পর্ষদ ওই আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে। রোববার ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে তা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালে ঘোষণা না দিয়ে কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার বছরে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। প্রায় ৬০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানি ওই বছর লোকসান দিয়েছে ২০৫ কোটি ৫ লাখ ৬১ হাজার ৫৯০ টাকা। তাতে শেয়ার প্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৩৪ টাকা ৩৪ পয়সা।

যদিও ওই বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এমারেল্ড অয়েল শেয়ার প্রতি ৯ পয়সা আয়ের কথা জানিয়েছিল। অর্থাৎ, শেষ তিন মাসে মালিকপক্ষের কারণে এত লোকসান হয়।

ওই লোকসানের কারণে শেয়ার প্রতি সম্পদ কেবল শূন্যে নয়, নেতিবাচক অবস্থানে চলে যায়। আগের বছর শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ছিল ১৭ টাকা ২৩ পয়সা। পরের বছর শেয়ার প্রতি দায় দাঁড়ায় ১৭ টাকা ৪৬ পয়সা।

২০০৯ সালে জামালপুরের সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিব শেরপুর শহরের শেরীপাড়ায় গড়ে তোলেন এমারেল্ড অয়েল কারখানা। ২০১১ সালে স্পন্দন-ব্র্যান্ডেড রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন শুরু করে। ২০১৪ সালে কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা তোলে।

২০১৬ সালে এমারেল্ড অয়েল ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা লাভ করে এবং ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ওই বছরই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দুদকের মামলায় জেলে যেতে হয় গণিকে। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশের বাইরে চলে যান তিনি। বন্ধ হয়ে যায় স্পন্দনের কারখানা। 

২০১৮ ও ২০১৯ সালে তুলনামূলক কম লোকসান

বন্ধ থাকা অবস্থায় এই দুই বছরে এমারেল্ড অয়েলের লোকসান হলেও তা ছিল বেশ কম।

২০১৮ সালে কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ১ টাকা ৯৭ পয়সা। শেয়ার প্রতি দায় দাঁড়ায় ৩৪ টাকা ৩৪ পয়সা।

পরের বছর শেয়ার প্রতি লোকসান আরও কমে দাঁড়ায় ১ টাকা ১৪ পয়সায়। সম্পদমূল্যের হিসাবে শেয়ার প্রতি দায়ও কমে। ওই বছর প্রতি শেয়ারের বিপরীতে দায় দাঁড়ায় ১৯ টাকা ৪৩ পয়সা।

এখন চলছে ২০২২-২৩ অর্থবছর। অর্থাৎ এমারেল্ডকে আরও তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে দুটি পুরো অর্থবছরের, আর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের।

এমারেল্ডের হালচাল

বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর পর গত বছর উৎপাদনে ফেরা এ কোম্পানি জাপানে রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের এই উদ্যোগও বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বস্তির খবর।

বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে অনিশ্চয়তায় পড়েন বিনিয়োগকারীরা। শেয়ার দর নেমে আসে ১০ টাকার নিচে।

২০২০ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তনের পর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলো নতুন করে চালু করতে পর্ষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়।

এর মধ্যে এমারেল্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয় মিনোরি বাংলাদেশ নামে জাপান প্রবাসী এক বাংলাদেশির কোম্পানির কাছে।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্রুড অয়েল উৎপাদন শুরু হলেও গ্যাস কম থাকায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। এই ক্রুড অয়েল খুলনায় মাছ ও মুরগির খাদ্য তৈরি করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে কারখানার সব যন্ত্রপাতি মেরামত করে তেল উৎপাদন শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

২০২২ সালের ২৮ জুন রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নতুন করে স্পন্দন রাইস ব্র্যান অয়েলের যাত্রা ‍শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়।

Also Read: পাঁচ বছর পর উৎপাদনে এমারেল্ড অয়েল

সেদিন এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, তাদের কারখানায় দুটি ইউনিটের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ৩৩০ টন। গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে শুধু ১৮০ টনের ইউনিটটি সচল আছে।

ওই ইউনিটে ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করে ৩৫ টনের মত অপরিশোধিত তেল পাওয়া যায়। সেখান থেকে দৈনিক পরিশোধিত তেল পাওয়া যায় প্রায় ২৬ টন।

গত ৪ অক্টোবর ওই কোম্পানি জানায়, তারা জাপানে রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে। এই লক্ষ্যে টোকিওতে একটি শাখা খোলা হয়েছে। গত ২০ অগাস্ট ওই শাখা খোলা হয়।

কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়াতে মিনোরি বাংলাদেশের পক্ষে নতুন শেয়ার ইস্যুরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএসইসির অনুমোদন পেলে এই শেয়ার ইস্যু করে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দাম ৩০ টাকা ১০ পয়সা। এ কোম্পানিকে উৎপাদনে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়ার আগে শেয়ার দর ছিল ১০ টাকার নিচে। গত বছর এক পর্যায়ে তা ৪৬ টাকা ৬০ পয়সায় উঠে যায়।