মার্চের তৃতীয় সপ্তাহেও পুঁজিবাজারে দেখা নেই ‘সুখবরের’

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন ‘মার্চে সুখবর আসছে’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2023, 09:56 AM
Updated : 19 March 2023, 09:56 AM

মার্চের তৃতীয় সপ্তাহেও ‘সুখবর’ পেল না পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। ‘সুখবর’ আসছে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে আশ্বাস আসার পর এক সপ্তাহ সূচক ও লেনদেনে ঊর্ধ্বগতি থাকলেও বিনিয়োগকারীরা নতুন করে লোকসানে পড়েছেন।

গত সপ্তাহের মতই আবার দরপতনের মধ্য দিয়ে নতুন সপ্তাহ শুরু হয়েছে পুঁজিবাজারে। ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে দর বেশি, এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাড়ল কেবল ১৯টির দাম, বিপরীতে কমেছে ৮৫টি। ২১৩টি কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে, তবে খুব কম সংখ্যক শেয়ারই হাতবদল হয়েছে।

রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২ পয়েন্ট পড়ে গেছে। যেসব কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, শতকরা হিসেবে বেড়েছে সামান্যেই। তবে যেগুলো কমেছে, তাতে বিনিয়োগকারীর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।

আগের সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসও লেনদেন শুরু হয়েছে ২৫ পয়েন্ট পতনের মধ্য দিয়ে। পরের দিন কিছুটা বেড়ে এরপর দুই কর্মদিবস আবার পতনের পর বৃহস্পতিবার সূচক খানিকটা বেড়ে লেনদেন শেষ হলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিল অস্বস্তি। কারণ, দুই দিন পতন, একদিন বৃদ্ধি, এভাবে চলছে লেনদেন।

টানা দরপতনের মধ্যে থাকা পুঁজিবাজারের জন্য মার্চ ‘ভালো হবে’ বলে ফেব্রুয়ারির শেষ দিন আশা দেখিয়েছিলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে ব্রোকারেজ হাউজ ট্রাস্ট রিজিওনাল ইকুইটি লিমিটেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “মার্চ থেকে মে জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ডিভিডেন্ড চলে আসবে। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের হাজার হাজার কোটি টাকার সক্ষমতা বেড়ে যাবে। ঠিক কত হাজার কোটি টাকা বাড়বে এর সংখ্যাটা না বলতে পারলেও এটা অনেক বড় হবে। মার্চে অনেক সুখবর আসা শুরু হবে।”

এরপর ৫ থেকে ৯ মার্চ বাজারে তারল্য বাড়ে, বাড়ে শেয়ারদর। আর শেয়ারদর বাড়তে থাকলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রবণতাও দেখা দেয়। এই সপ্তাহের চার কর্মদিবসে গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় অনেকটা বেড়ে ছাড়ায় সাড়ে শয় শ কোটি টাকা। সূচক বাড়ে ৪৬ পয়েন্ট।

কিন্তু এই ‘শুভ ইঙ্গিত’ পরের সপ্তাহেই মিইয়ে যায়। ওই সপ্তাহে গড় লেনদেন নেমে আসে ৫০৮ কোটি টাকায় আর সূচক কমে ৩৯ পয়েন্ট।

রোববার আরও ১২ পয়েন্ট কমে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের সূচকের অবস্থান নেমে এসেছে ৬ হাজার ২০৭ পয়েন্টে, যা গত ২৩ ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্ন। সেদিন সূচক ছিল এখনকার চেয়ে দুই পয়েন্ট কম।

ডিএসই স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমদ রশীদ লালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “কেবল আজকের লেনদেন বলে তো কথা নেই। বাজারে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে সকালের দিকে ভালো থাকে, বিকালে কমে যায়। এর কারণ হলো বড় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ না থাকা।”

তিনি বলেন, “বড় বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তারা না থাকলে বাজারে শক্তি থাকে কম।”

বিশ্বে ব্যাংক খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার প্রভাবও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে থাকতে পারে বলেও মনে করছেন অভিজ্ঞ এই বিনিয়োগকবারী। তিনি বলেন, “হয়ত এ রকম থাকবে না, সামনে হয়ত পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। এখন দেখা যাক।” 

বৃদ্ধির তুলনায় দরপতনের হার বেশি

দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা আরডি ফুডের শেয়ারদর বেড়েছে ৪.১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩.৫৭ শতাংশ বেড়েছে ইউনিলিভারের দর। মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩.১১ শতাংশ।

আরও পঁচটি কোম্পানির শেয়ারদর ২ শতাংশের বেশি, চারটি কোম্পানির দর ১ শতাংশের বেশি আর বাকি কয়েকটি কোম্পানির দর বেড়েছে এক শতাংশেরও কম।

বিপরীতে সবচেয়ে বেশি দর হারানো বেঙ্গল উইন্ডসর ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৯ শতাংশের বেশি। ৮ শতাংশের বেশি কমেছে তিনটি কোম্পানির দর।

দুটি কোম্পানির দর ৭ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৫ শতাংশের বেশি, ৯টির দর চার শতাংশের বেশি, আরও নয়টির দর ৩ শতাংশের বেশি কমেছে।

দুই থেকে তিন শতাংশ দর হারিয়েছে আরও আটটি কোম্পানির দর, এক থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে ১৭টি। বাকিগুলো দর হারিয়েছে এক শতাংশের কম।

শেয়ারদর ও সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেনও। হাতবদল হয়েছে ৪৫২ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৪৮৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।