দুই দিনে বাজার মূলধন কমল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি এবং ১৪ অগাস্টের পর থেকে বাজার মূলধন কমল ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
Published : 28 Oct 2024, 06:15 PM
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে ‘কারণ’ জানতে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণার পর আরও পতন দেখল বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারানোর মধ্যে তাদের একটি অংশ ফের মতিঝিলের সড়কে নেমেছে।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ১৪৯ পয়েন্টের পর দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক কমল ৬৬ পয়েন্ট।
এই দরপতনে দুই দিনে ২১৬ পয়েন্ট সূচক কমার প্রতিক্রিয়ায় বাজার মূলধন কমল ১৩ হাজার ২৫৪ কোটি ৮১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
এ নিয়ে গত ১৪ অগাস্ট দরপতন শুরুর হওয়ার পর থেকে আড়াই মাসে কমল ৬৮ হাজার ২৫৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
সোমবারের দরপতনে সূচকের অবস্থান নেমেছে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বরের পর সর্বনিম্ন। সেদিন সূচক ছিল ৪ হাজার ৮৬৬ পয়েন্ট, সোমবারের সূচক সেখান থেকে কেবল ৩১ পয়েন্ট বেশি।
হাতবদল হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম কমেছে ২৪৬টির, বেড়েছে ১০৫টির। আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ৪৬টি কোম্পানি।
সূচক পড়লেও লেনদেন কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৩৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চার কর্মদিবসে বাজারে সূচক বেড়েছিল প্রায় আটশ পয়েন্ট। ১২ অগাস্ট থেকে আড়াই মাসে সূচক পড়েছে ১ হাজার ১১৭ পয়েন্ট।
বিশেষ করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জেড শ্রেণিতে ২৮ কোম্পানিকে পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর থেকে বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। নানা সমালোচনার মধ্যে ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানকে আগের শ্রেণিতে ফেরানোর সিদ্ধান্ত দিয়েও সামাল দিতে পারছে না পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
এমন পতনের কারণ খুঁজতে গত রোববার চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সংস্থাটি। কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পতনের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কমিশনের করণীয় বিষয়েও সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসইর পুরনো কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সেই বিক্ষোভে বলা হয়, তারা রাজপথে থাকতে চান না। কিন্তু পতন ঠেকাতে না পারায় রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আনা ও বাজারে তারল্য জোগান দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবিকে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি।
সংস্থাটির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘তিন হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে আইসিবি।’’
বেশিরভাগ শেয়ার এখন ‘আন্ডারভ্যালুড’ (যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে কম) দাবি করে তিনি বলেন, “এখনই বিনিয়োগ করার সময়।”
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে শিগগির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশাবাদী তিনি।
২৫ শতাংশ বড় বাড়ল কেপিসিএলের
সবচেয়ে বেশি ২৫ শতাংশ দর বেড়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি কেপিসিএল এর।
শেয়ারপ্রতি এক টাকা লভ্যাংশ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আগের দিনের ৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে দাম স্থির হয়েছে ১২ টাকা ৬০ পয়সায়।
লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে শেয়ারটির দর হ্রাস-বৃদ্ধির কোনো সীমা ছিল না এদিন।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর আগের দিনের চেয়ে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ টাকা ৪০ পয়সা।
সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি দর বেড়েছে এসকোয়ার নিট অ্যান্ড কম্পোজিটের দর। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ায় ঘোষণায় আগের দিনও দর বেড়েছিল ২২ শতাংশ।
শেয়ারটির দর স্থির হয়েছে ২০ টাকা ৬০ পয়সায়। দুই দিনে দর বেড়েছে ৫ টাকা ২০ পয়সা বা ৩৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জর বিআইএফসির দরও বেড়েছে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে, প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ দর বেড়েছে ডেসকোর।
কেয়া কসমেটিকস ও জুট স্পিনার্সের দর ৮ শতাংশের বেশি, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স ও অলটেক্সের দর ৭ শতাংশের বেশি, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ও কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে প্রায় ১৫ শতাংশ দর হারিয়ে পতনের শীর্ষে ছিল জেনেক্স ইনফোসিস। কোম্পানিটি গত জুনে শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৬২ পয়সা আয় করে ৩০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এই দরপতন ঘটে।
লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা করা দুলামিয়া কটনের দর প্রায় ১৪ শতাংশ, স্যালভো কেমিক্যাল, ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের দর প্রায় ১৩ শতাংশ, সালভো কেমিক্যালসের দর প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ এবং শেয়ার প্রতি ১৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজের দর কমেছে ১০ শতাংশের বেশি।
পতনের শীর্ষ দশে থাকা ইসলামিক ফাইন্যান্স, মালেক স্পিনিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, রূপালী লাইফ ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের দর কমেছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
লেনদেন তথ্য অনুযায়ী, খাতওয়ারি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ব্যাংকে। এই খাতে সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে যা মোট লেনদেনের ২২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
লেনদেনের ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ অবদান রাখে ওষুধ ও রসায়ন খাত, বস্ত্রখাতের অবদান ছিল ১২ শতাংশ।