কোভিডের কারণে ধস ঠেকাতে প্রায় ১৫ মাস আগে চালু করা ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় গত বৃহস্পতিবার।
রোববার সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে তা কার্যকর হলে বিনিয়োগকারীদের বড় অংশের মধ্যেই এ নিয়ে দ্বিধা থাকায় শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল বেশি। এতে প্রায় সব খাতের বেশির ভাগ শেয়ার দর হারালে সূচক কমতে থাকে।
তবে পরে অনেক শেয়ার হারানো দর ফিরে পেতে সূচক বাড়তে থাকে; শেষ পর্যন্ত দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিন থেকে ১৬ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৬৯ দশমিক ৪১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এনিয়ে ডিএসই সূচক টানা চার দিন বাড়ল। চার দিনে ঢাকার পুঁজিবাজারে মোট ৫৫ দশমিক ৮০ পয়েন্ট সূচক যোগ হয়েছে। এর আগের দুই দিন ৫৩ পয়েন্ট কমেছিল।
সূচক বাড়লেও ডিএসইতে এদিন লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ১১ কোটি ৯১ লাখ টাকা কমে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ২৫ লাখ টাকায় নেমেছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
রোববার এই বাজারে লেনদেন হয়েছে ৩৭৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৬টির এবং কমেছে ১৭৯টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির দর। দিন শেষে ৪৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।
এদিন ব্যাংক বাদে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা খাতের শেয়ারের দাম কমেছে। সঙ্গে কমেছে বস্ত্র খাতের শেয়ারের দামও।
এদিন বাজারে ভালো করেছে প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং ওষুধ খাত।
এদিন ব্যাংক খাতের ৬৫ শতাংশ শেয়ারের দাম বেড়েছে। এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খাতের ৪৩ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে। লেনদেনে এই খাতের অংশ ছিল মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এদিন বীমা খাতে ৮৪ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে। লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ২৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
এদিন বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ৩১টির শেয়ারের দাম কমেছে, শতকরা হারে যা ৫৩ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
প্রকৌশল খাতে ৬০ শতাংশ শেয়ারের দাম বাড়ে। আর মোট লেনদেনে এ খাতের অংশ ছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এদিন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও আগের দিনের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় ছিল। এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ১১ শতাংশ।
অন্যদিকে ওষুধ খাতে ৫২ শতাংশ শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
ঢাকার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৫ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৯৬ দশমিক ৬০ পয়েন্টে।
ডিএস৩০ সূচক ১০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২ হাজার ২০৭ দশমিক ২৯ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, বেক্সিমকো লিঃ, অরিয়ন ফার্মা, ন্যাশনাল ফিড মিল, বেক্সিমকো ফার্মা, ফরচুন সুজ, সামিট পাওয়ার, কনফিডেন্স সিমেন্ট, লুব-রেফ ও এনআরবিসি ব্যাংক।
দাম বাড়ার শীর্ষ ১০টি কোম্পানি
ন্যাশনাল ফিড মিল, স্যালভো কেমিক্যাল, ইনডেক্স এগ্রো, ইউনিক হোটেল, আমান ফিড, ফরচুন সুজ, সাফকো স্পিনিং, খান ব্রাদর্স পিপি, রানার অটোকারস ও এনআরবিসি ব্যাংক।
দাম কমার শীর্ষ ১০টি কোম্পানি
সি পার্ল বীচ, এসকে ট্রিমস, সমতা লেদার, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ১ম মিঃ ফাঃ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, নূরানী ডাইং, মুন্নো এগ্রো অ্যান্ড জেঃ মেশিনারি, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ও রিং শাইন টেক্সটাইল।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে তবে বেড়েছে সূচক।
এই বাজারের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১২ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৭ হাজার ৫৮৩ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।
ডিএসইতে কমলেও রোববার এই বাজারে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ৪৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ বা ৪৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বেড়েছে।
মোট ১৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ১০৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
সিএসইতে ৩০৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৭টির, কমেছে ১৫১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির দর।
ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারদর সামান্য কমেছে
ঢাকা ব্যাংকের ভল্ট থেকে পৌনে চার কোটি টাকা লোপাটের খবরের পর প্রথম লেনদেনে আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়সা দর কমে ব্যাংকটির শেয়ারদর নেমেছে ১৩ টাকা ২০ পয়সায়।
গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির বংশাল শাখার ভল্ট থেকে পৌনে চার কোটি টাকার বেশি লোপাটের ঘটনা ধরা পড়ে। এই ঘটনায় ব্যাংকটির দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং তাদের আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর পরে রোববার ছিল ঢাকা ব্যাংকের প্রথম লেনদেন। সকাল থেকেই দাম কমে লেনদেন হয় শেয়ারটির। এক পর্যায়ে তা আগের দিনের চেয়ে ৫০ পয়সা কমে ১২ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছিল।
পরে ব্যাংক খাতের অন্যান্য শেয়ারের দাম বাড়লে এটির দরও ঘুরে দাঁড়ায়, দিন শেষে মূল্য ছিল ১৩ টাকা ২০ পয়সা।