এক দিনে সর্বোচ্চ দরপতনের সীমা ১০ শতাংশ থেকে নামানো হয়েছে ৩ শতাংশে।
Published : 24 Apr 2024, 09:15 PM
আড়াই মাসেরও কম সময়ে পুঁজিবাজারে প্রায় ১৩ শতাংশ বা ৮১৫ পয়েন্ট সূচক পতনের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হস্তক্ষেপ করল।
এক দিনে শেয়ার দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে নামানো হয়েছে ৩ শতাংশে। তবে ফ্লোর প্রাইসে থাকা তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে পারবে না।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র হতাশার মধ্যে বুধবার এক নির্দেশনায় এই তথ্য জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।
বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
২০২২ সালের ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর শ্রীলঙ্কায় আর্থিক বিপর্যয় এরপর বাংলাদেশে রিজার্ভ ক্ষয়ে আতঙ্কে পুঁজিবাজারে ধস পরিস্থিতি শুরু হয়।
এই অবস্থায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়। এতে লেনদেন কমে আসে। তবে শেয়ারদর ধরে রাখায় বিনিয়োগকারীদের আর্থিক লোকসান ছিল তুলনামূলক কম।
বিএসইসির ঘোষণা ছিল, বাজার স্বাভাবিক গতিতে ফিরলে ফ্লোর প্রত্যাহার করা হবে।
তবে ফ্লোর প্রত্যাহারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন দাবি জানিয়ে আসছিল।
গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বাজারে গতি বাড়ছিল, লেনদেনও বাড়ছিল, সেই সঙ্গে বাড়ছিল শেয়ারদর। এর মধ্যে ১৮ জানুয়ারি হুট করেই এক বিজ্ঞপ্তিতে গত ২১ জানুয়ারি থেকে ৩৫টি বাদে বাকি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়।
এরপর কয়েকদিন দরপতন হলেও বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। এরপর ধাপে ধাপে তিনটি ছাড়া বাকি সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়।
তাৎক্ষণিক ধাক্কা সামলে বাজারে ছিল ঊর্ধ্বগতি। লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সূচক ছুঁয়ে ফেলে ৬ হাজার ৩৯৪ পয়েন্টে। এরপর থেকে যে দরপতন শুরু হয় তার যেন কোনো শেষ নেই।
লেনদেন হাজার কোটির ঘর থেকে চারশ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। এই পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে বিএসইসি বাজার সংশ্লিষ্টদেরকে ডেকে বৈঠক করে ২২ এপ্রিল। কিন্তু এরপর আরও টানা দুই দিন বড় দরপতন দেখল বিনিয়োগকারীরা।
এই দরপতন শুরু হওয়ার আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৯৪ পয়েন্ট। ৪৩ কর্মদিবস পর ২৪ এপ্রিল তা নেমেছে ৫ হাজার ৫৭৮ পয়েন্ট।
এই কয় দিনে সূচক কমেছে ৮১৫ পয়েন্ট বা প্রায় ১৩ শতাংশ।
অথচ এই সময়ে যেসব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে মহামারী ও ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে ডলার সংকট কাটিয়ে অনেকগুলোরই আর্থিক অবস্থা ভালো হচ্ছে।
নানা সংকট কাটিয়ে ব্যাংকগুলো গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে, সেখানেও দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ কোম্পানিই আগের বছরের চেয়ে ভালো করে আকর্ষণীয় লভ্যাংশই দিচ্ছে।
এই দরপতন নিয়ে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির নতুন নির্দেশনায় ‘বিনিয়োগকারী ও বাজারের স্বার্থ’ এবং ‘স্বল্প মেয়াদে’ শব্দগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে কতদিন এ নির্দেশনা বজায় থাকবে তা স্পষ্ট না করে জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা চলবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অস্বাভাবিক লেনদেন ঠেকানো, বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারে উন্নয়নের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।"