সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম বদলে ডিএসইএক্স বাড়ল ১০.২৯%

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কের মধ্যে চার দিন দরপতনের পর সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন আনায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক এক লাফে বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2020, 08:58 AM
Updated : 19 March 2020, 10:24 AM

সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন আনতে গিয়ে বৃহস্পতিবার তিন দফা সময় পিছিয়ে লেনদেন শুরু হয় বেলা ২টায়; চলে মাত্র আধা ঘণ্টা।

বেলা আড়াইটায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন শেষ হয় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এর ঘরে ৩৯৭৪ পয়েন্ট নিয়ে যা, আগের দিনের চেয়ে ৩৭১ পয়েন্ট বা ১০.২৯ শতাংশ বেশি। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ডিএসইর নতুন সূচক চালু হওয়ার পর এটাই সবচেয়ে বড় উত্থান।

এর আগে সূচকে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির ঘটনাটি ছিল চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির। সেদিন ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার অল্প সময়ের ওই লেনদেনে ঢাকার বাজারে ৪৯ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়। লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে ১৪১টির দাম বাড়ে, কমে ৪৯টির। তবে ১৫২টি শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থাকে। 

দেশের পুঁজিবাজারে আগে থেকেই আস্থার অভাব ছিল। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারীতে আতঙ্ক শুরু হলে পুঁজিবাজারে নতুন করে ধস নামে। বুধবার পর্যন্ত  চার কার্যদিবসে ডিএসইএক্স কমে যায় প্রায় ৬২৮ পয়েন্ট বা ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

এর মধ্যে বুধবার ডিএসইএক্স ১৬৮ দশমিক ৬০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০৩ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে গিয়ে ঠেকে, যা ৮২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষতি কমানোর চেষ্টায় বুধবার রাতে দেশের দুই শেয়ারবাজারে লেনদেনের সময় ১ ঘণ্টা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। জানানো হয়, নতুন সূচিতে লেনদেন চলবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।

কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু না করে তিন দফা সময় পেছানোর পর তৈরি হয় বিভ্রান্তি। প্রথমে বেলা সাড়ে ১১টা, পরে বেলা ১টা এবং এরপর আবার পিছিয়ে বেলা ২টায় লেনদেন শুরুর সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং-এর সিনিয়র অফিসার তানিয়া বেগম দুজনেই ‘অনিবার্য’ কারণে লেনদেন বিলম্বিত হওয়ার কথা বলেন।

কিন্তু অনিশ্চয়তার মধ্যে বাজার বন্ধের দাবি জানিয়ে মীর রায়হান সিদ্দিক নামের একজন বিনিয়োগকারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা চাই এ অবস্থায় পুঁজিবাজার বন্ধ থাকুক। কারণ যত দিন যাচ্ছে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমাদের টাকা সব পয়সা হয়ে যাচ্ছে।”

লেনদেন শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করে  বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সার্কিট ব্রেকার রুলে কিছু পরিবর্তন আনছি। সেটার ডিরেক্টিভ রেডি করছি। সে জন্য দেরি হচ্ছে।”

আর ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন যে রুলটি হয়েছে সেটা সমন্বয় করতে সময় লাগছে। এটা ডিএসই সূচকে সমন্বয় করা একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।”

বাজার শেষ পর্যন্ত কখন শুরু হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যেই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সার্কিট ব্রেকারের নতুন আদেশ জারি করে।

সেখানে বলা হয়, ১৯ মার্চের আগের পাঁচ দিন প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইসের গড় হবে ওই কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস। ওই দরেই বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হবে এবং ওই শেয়ারের জন্য তা ‘সার্কিট ব্রেকার’ হিসেবে গণ্য হবে।

নতুন আদেশের ব্যাখ্যা দিয়ে ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, পাঁচদিনের গড় দামের নিচে কোনো শেয়ার লেনদেন হবে না।

যেমন, কোনও একটি কোম্পানির শেয়ার গত পাঁচ দিনে হয়ত ১০ থেকে ১২ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়েছে। পাঁচ দিনে গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা। তাহলে ১১ টাকাই হবে ওই শেয়ারের ওপেনিং ও ফ্লোর প্রাইস। এর চেয়ে নিচে নামতে গেলেই সার্কিট ব্রেকার চালু হয়ে ওই শেয়ারের লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে।

তবে দর বৃদ্ধিসহ অন্য ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের আগের নিয়মই অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয় বিএসইসির আদেশে।

বর্তমান সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী ২০০ টাকার নিচে যে কোনো শেয়ার দিনে ১০ শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারে। এরপর ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পযন্ত ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পযন্ত ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০০০ টাকা পযন্ত ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ৫০০০ টাকা পযন্ত ৫ শতাংশ  এবং ৫০০০ টাকার পরে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারে।

রকিবুর রহমান বলেন, “বিএসইসির সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, করোনাভাইরাসসহ সবকিছু মিলিয়ে মানুষ হতাশ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে বাজার বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।”  

বিএসইসির আদেশের পর দেখা যায়, আধা ঘণ্টার লেনদেনে বাজারে অধিকাংশ শেয়ারের ক্রেতা নেই। বিক্রেতারা শেয়ার বেচার জন্য বসে আছে। যেহেতু টানা পতনের পর গড় হিসাবে শেয়ারের মূল্য বেড়ে সার্কিট ব্রেকারে রয়েছে তাই সূচকও বেড়েছে লাফিয়ে।

যেমন- বাজারের সবেচেয়ে বড় মূলধনের কোম্পানি গ্রামীণফোনের শেয়ার বুধবার সর্বশেষ দাম ছিল ২১৯ টাকা ৫০ পয়সা। পাঁচ দিনের গড় লেনদেনে মূল্য হিসাবে গ্রামীণের শেয়ারের লেনদেন শুরু হয় ২৩৫ টাকা ৫০ পয়সায়। কিন্তু সেখান থেকে দাম এক পয়সাও বাড়েনি। কেনার জন্য কোনো ক্রেতা শেয়ার দাম বসায়নি। বরং বিক্রির জন্য বসে থাকতে দেখা গেছে অসংখ্য ক্রেতাকে।

একই অবস্থা দেখা যায় ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোবাকো, স্কয়ার ফার্মাসহ বাজারের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের।

এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে রকিবুর রহমান বলেন, “বাড়বে। বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত হয়েছে যে, এর নিচে শেয়ারের দাম আসবে না। এছাড়া ব্যাংকগুলো বাজারে বিনিয়োগ শুরু করছে। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে।”