পুঁজিবাজার টেনে তুলতে ৫ সদস্যের কমিটি

ডুবতে থাকা পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে সরকার।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2020, 01:49 PM
Updated : 8 Jan 2020, 06:15 PM

ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীরই প্রত্যাশা ছিল নতুন বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভালো হবে। কিন্তু তার বদলে বড় পতন হচ্ছে বাজারে।

এই অবস্থায় ফের রাস্তায় নেমেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। বুধবার মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ করেছেন তারা।

সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে সরকার।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নুরকে কমিটির সমন্বয়ক করা হয়েছে। কমিটির তিনজন সদস্য হবেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি’র একজন নির্বাহী পরিচালক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব নাহিদ হোসেন।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও মঙ্গলবার কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

শেয়ার বাজারে টানা দরপতনে ক্ষুব্ধ একদল বিনিয়োগকারী বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার উন্নয়নে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কমালের সঙ্গে পুঁজিবাজারের অংশীজনদের মতবিনিময় সভার প্রস্তাবগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের কাজ সমন্বয় ও তদারকির জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটি যা করবে

>> মতবিনিময় সভার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা প্রণয়নসহ সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করবে।

>> বাস্তবায়ন অগ্রগতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মনিটরিং করবে এবং সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।

>> কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো সংস্থার প্রতিনিধি অথবা ব্যক্তিকে কো-অপ্ট করতে পারবে।

>> পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে পরামর্শ/আলোচনা করতে করতে পারবে।

লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক

দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় বুধবারও বড় ধরনের পতন হয়েছে বাজারে।

এদিন দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২২৮ পয়েন্টে।

টানা চারদিন দরপতনে ডিএসইর প্রধান এ সূচক কমেছে প্রায় ২৩০ পয়েন্ট।

২০১৯ সালের মন্দাভাবেই ২০২০ সাল শুরু হয়েছে। দরপতনের ধাক্কায় ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী হতাশ-ক্ষুব্ধ।

দরপতনের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর পতন আরো বেগবান হয়েছে। রোববার থেকে টানা চারদিন বড় পতন হয়েছে দুই বাজারে।

২০১০ সালে বড় ধসের পর পুঁজিবাজারে সবচেয়ে ‘খারাপ’ অবস্থা গেছে ২০১৯ সাল। ২০১০ এর ধসের পর ২০১৬ সালের শেষ দিকে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। ২০১৭ সাল ভালোই গিয়েছিল।

কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে আবার পতন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। ২০১৯ সালে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও তা স্থায়ী হয়নি। পতনের ধাক্কায় বাজার একেবারে তলানীতে নেমে যায়। সেই মন্দার কবল থেকে বের হতে পারছে না বাজার। টানা পতনে এক বছরের মধ্যে ডিএসই বাজার মূলধন হারিয়েছে ৭১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমতে কমতে চার বছর আগের অবস্থানে চলে গেছে।

পুঁজিবাজারে দরপতনের কারণ খুঁজতে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর  পুঁজিবাজারের সকল অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী।

বৈঠকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপক আবু আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া, বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন, বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সি কিউ কে মুস্তাক আহমদ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মজিব উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন এবং সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও ডিএসই ও সিএসই চেয়ারম্যান ও পরিচালক, ডিএসই ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, অ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডসের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক- সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সেপ্টেম্বরের ওই বৈঠকের পরও বাজার ঘুরে দাঁড়ায়নি; উল্টো আরও খারাপ হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। বাগে আসেনি পুঁজিবাজার।

বৈঠকে ডিএসইসির পক্ষ থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, অগ্রিম আয়কর শিথিল, সরকারি ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, গ্রামীণফোন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্বের দ্রুত নিষ্পত্তিসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সে সব প্রস্তাবের মধ্যে টাকার অবমূল্যায়নের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দেন অর্থমন্ত্রী। অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি মন্ত্রী।

উল্টো পুঁজিবাজারের দরপতনের কারণ হিসেবে গুজবকে চিহ্নিত করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, গুজবের কারণেই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ

এদিকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বুধবার মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কয়েক জন বিনিয়োগকারী মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন।

এ সময় তারা বিএসইসি’র চেয়ারম্যানসহ কমিশনের সদস্যদের অপসারণ দাবি করেন।

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারসাজি করে কয়েকজন বাজারের এই অবস্থা করেছে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সবাই আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এর আগে বিক্ষোভ করায় আমাদের নামে থানায় জিডি করা হয়েছে।

“তারপরও আমরা রাস্তায় নেমেছি। এছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই।”