বৈঠকেও বাগে আসেনি পুঁজিবাজার

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠকেও কাজ হয়নি, সপ্তাহের শুরুতেই বড় দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2020, 10:45 AM
Updated : 5 Jan 2020, 11:12 AM

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩২ শতাংশ কমেছে।চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে প্রধান সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৬৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২ শতাংশ।সেইসঙ্গে লেনদেনও কমেছে দুই বাজারে।

(ফাইল ছবি)

পুঁজিবাজারে পতন ঠেকাতে বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টকেএক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র চেয়ারম্যানসহ অন্য কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ডিএসইসির পক্ষ থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, অগ্রিম আয়কর শিথিল, সরকারি ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, গ্রামীণফোন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্বের দ্রুত নিষ্পত্তিসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দেন।

সে সব প্রস্তাবের মধ্যে টাকার অবমূল্যায়নের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দেন অর্থমন্ত্রী। অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি মন্ত্রী।

উল্টো পুঁজিবাজারের দরপতনের কারণ হিসেবে গুজবকে চিহ্নিত করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, গুজবের কারণেই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

বৈঠকের পর মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “এই যে রিউমার ছড়িয়ে যে সমস্ত কাজগুলো করা হয়… এখন পুঁজিবাজার চালাচ্ছে রিউমার। এই রিউমারের কারণেই পুঁজিবাজারটি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।”

গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন অর্থমন্ত্রী।

“এই রিউমারগুলো বন্ধ করার জন্য যে প্রচলিত আইন আছে, তা যেন স্ট্রিক্টলি কমপ্লায়েন্স হয়। বিদ্যমান আইনগুলোকে আমরা ফুললি এনফোর্স করব।”

২০১০ সালে বড় ধসের পর এখনই সবচেয়ে বেশি মন্দা চলছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে।

২০১৬ সালের শেষ দিকে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ২০১৮ সাল থেকে আবার পতনের ধারা শুরু হয়। ২০১৯ সালে বাজার আরও খারাপ হয়ে সূচক ফিরে গেছে সাড়ে তিন বছরের আগের অবস্থানে।

বাজারের দুরাবস্থায় হতাশা প্রকাশ করে বাজার বিশ্লেষক ডিএসই’র সাবেক সহ-সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠক করে বাজার ঠিক হবে না। বাজার স্বাভাবিক করতে হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সেটা অর্থমন্ত্রী বা সরকার নয়, ডিএসইকেই করতে হবে।”

“বাজারে কোনো ধরনের ভয় বা আতংক সৃষ্টি করা যাবে না। করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ডিএসইকে আন্তর্জাতিক মানের ভালো একটি রিসার্স সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। যে রিসার্সের ভিত্তিতেই বাজার পরিচালিত হবে। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবে।”

“এ সব কাজ করার দায়িত্ব ডিএসই’র। অর্থমন্ত্রীর নয়। এগুলো না করে বৈঠক করে কোনো লাভ হবে না,” বলেন লালী।

শাকিল রিজভী। ফাইল ছবি

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন আরেক বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজাভী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সোমবার এডিএস টেলিকমের লেনদেন শুরু হবে। সে কারণে অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে এই শেয়ারটি কেনার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। আবার অনেক বিনিয়োগকারী এডিএনের শেয়ার কিনবে বলে আজ (রোববার)  বাজারে কোনো শেয়ার কিনেনি।সে কারণেই দরপতন হয়েছে।”

নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল বলেছেন, সব শেয়ারের দাম অনেক পড়ে গেছে। এখন বাজার তার নিজম্ব শক্তিতেই ভালো হবে।

“বাজারে শেয়ারের দাম পড়তে পড়তে একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। আর কমবে না। এখন ঘুরে দাঁড়াবেই। যারা বাজার একটু বোঝে তারা এই সর্বনিম্ন প্রাইসে বিনিয়োগ করতে আসবেই। তখন অন্যরাও আসবে। তারল্য সংকট কেটে যাবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। বাজার ভালো হবে।”

“এবং খুব শিঘগিরই সেটা হবে।”

বাজার পরিস্থিতি

বিদায়ী বছরের মন্দাভাবেই ২০২০ সাল শুরু করে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার।

নতুন বছরের প্রথম দিন বুধবার ঢাকায় ডিএসইএক্স এবং শরীয়াহ সূচক তেমন হেরফের না হলেও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে ভালো মানের বাছাই করা ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকটি প্রায় ১২ পয়েন্ট পড়ে যায়।

লেনদেন হয় ৩০০ কোটি টাকার কম; ২৯৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

পরের দিন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর বৈঠককে ঘিরে বাজারে কিছুটা ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যায়। ঔ দিন ডিএসইএক্স ৬ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৪৫৯ দশমিক ২৯ পয়েন্টে অবস্থান করে।লেনদেন হয় ৩৮৭ কোটি টাকা।

রোববার সেই সূচক ৫৯ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৪০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯৯৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৮০ পয়েন্টে।

২৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারের চেয়ে ৯৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা কম।

রোববার ডিএসইতে ৩৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫২টির, কমেছে  ২৬৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির দর।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৩ হাজার ৩৮১ পয়েন্টে। লেনদেন নেমে এসেছে ৯ কোটি ১৪ লাখ টাকায়। শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

২২০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৩৭টির, কমেছে  ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির দর।