বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রস্তাবিত দরেই শেয়ার কিনতে হবে নিলামে অংশগ্রহণকারীদের। এছাড়া যে পরিমাণ শেয়ার কেনার জন্য দর প্রস্তাব করা হবে, সেই পরিমাণ শেয়ারই কিনতে হবে।
Published : 16 Jul 2019, 10:59 PM
মঙ্গলবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৬৯৩তম সভায় এই সিদ্ধান্তসহ পাবলিক ইস্যু রুলসের ২২টি সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিএসইসি (পাবলিক ইস্যু) রুলস ২০১৫ এর সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির জমা দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি করা খসড়ার উপর প্রাপ্ত জনমত জরিপের মতামত/পরামর্শ পর্যালোচনা করে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে নিলামে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দকৃত শেয়ার সম্পূর্ণ বিক্রি না হলে, সেই ইস্যু বাতিল করা হবে। এই পদ্ধতিতে বিডারদের নাম ও তাদের প্রস্তাবিত দর প্রদর্শন করানো যাবে না।
আর বিডিংয়ের জন্য নিলামকারীদেরকে শতভাগ অর্থ সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হবে।
এক্ষেত্রে শেয়ার সর্বোচ্চ দর প্রস্তাবকারী থেকে বিতরন শুরু হবে, যা ক্রমানয়ে নিচের দিকে নামবে এবং যে মূল্যে বিতরন শেষ হবে, সেটাই কাট-অফ প্রাইস হবে।
সাধারন বিনিয়োগকারীরা সেই মূল্য থেকে ১০ শতাংশ কমে শেয়ার ক্রয় করবেন। আর কাট-অফ প্রাইসে যদি একাধিক বিডার থাকেন, তাহলে যে বিডার আগে বিড করবেন, তাকে আগে শেয়ার দেওয়া হবে।
কমিশন বুক বিল্ডিংয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কোটা ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সিদ্ধা নিয়েছে।
আর সাধারন বিনিয়োগকারীদের কোটা ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হবে। অন্যদিকে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কোটা ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ এবং সাধারন বিনিয়োগকারীদের কোটা ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
আইপিওতে যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসাবেকোটা সুবিধা পেতে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ থাকতে হবে। এই বিনিয়োগের পরিমাণ কি হবে, কমিশন তা প্রত্যেক পাবলিক ইস্যুর সম্মতিপত্রে উল্লেখ করবে। অন্যথায় সংরক্ষিত শেয়ারের কোটা সুবিধা পাবেন না। পূর্বের ইস্যুকৃত মূলধনের ৮০ শতাংশ ব্যবহার না করে পাবলিক ইস্যুর প্রস্তাব করা যাবে না। আইপিওতের ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা বা পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ উত্তোলন করতে হবে।
এক্ষেত্রে যেটির পরিমাণ বেশি, সেই পরিমাণ তুলতে হবে। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৭৫ কোটি টাকা বা পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ উত্তোলন করতে হবে। এক্ষেত্রেও যেটির পরিমাণ বেশি, সেই পরিমাণ উত্তোলন করতে হবে।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে সম্মিলিতভাবে আবেদন ৬৫ শতাংশের কম হলে ইস্যু বাতিল করা হবে। আর ৬৫ শতাংশের বেশি এবং ১০০ শতাংশের কম হলে, বাকি শেয়ার অবলেখক (আন্ডাররাইটার) গ্রহণ করবে।
এদিকে আইপিও’র আবেদনের সময় ইস্যুয়ারকে পূর্বে নগদে উত্তোলিত মূলধনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের অথবা অডিটরের সার্টিফিকেট এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট দাখিল করতে হবে। আর নগদ ব্যতিত উত্তোলিত মূলধনের ক্ষেত্রে যৌথ মূলধনী কোম্পানির রেজিস্টারের প্রত্যায়িত বিক্রয় চুক্তি (সার্টিফাইড ভেন্ডরস এগ্রিমেন্ট) এবং সম্পদের মালিকানা সংক্রান্ত স্বত্ব কমিশনে জমা দিতে হবে।
লক-ইন সংক্রান্ত সংশোধণী
সভায় আইপিও পূর্ব ইস্যুকৃত শেয়ারে লক-ইন ২ বছর করা হয়েছে। যা প্রসপেক্টাসের সংক্ষিপ্ত সংস্করন প্রকাশের দিনের পরিবর্তে লেনদেন শুরুর দিন থেকে গণনা করা হবে। তবে প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর পরে আইপিও অনুমোদনে ৪ বছরের বেশি সময় লাগা কোম্পানির ক্ষেত্রে ১ বছর লক-ইন করা হয়েছে।
কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক এবং ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি শেয়ারধারনকারীদের জন্য ৩ বছর লক-ইন প্রযোজ্য হবে। এছাড়া উদ্যোক্তা, পরিচালক এবং ১০ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারধারনকারীদের হস্তান্তরকৃত শেয়ারে লক-ইন ৩ বছর, আইপিওর ৪ বছরে পূর্বে ইস্যুকৃত শেয়ারে ১ বছর, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের ক্ষেত্রে ১ বছর এবং বাকি অন্য সব শেয়ারে ২ বছর লক-ইন রাখা হয়েছে।
এর আগে ২৯ এপ্রিল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে এক বৈঠকে আইপিওকালীন সকল শেয়ারে ৩ বছর লক-ইন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএসইসি।
ব্যাংক এশিয়ার ৫০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন
কমিশনের সভায় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক এশিয়ার ৫০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এই বন্ডটি ৭ বছরে পূর্ণ অবসায়ন হবে। যা শুধুমাত্র স্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানী, কর্পোরেট বডি এবং যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে । এই বন্ডের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নন কনভার্টেবল, আনলিস্টেড, ফুল্লি রেডিমেবল, ফ্লোটিং রেটেড, সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড।
এটি ইস্যুর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ উত্তোলন করে ব্যাংক এশিয়া কোম্পানির টিয়ার-২ মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করবে ।
এই বন্ডের প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ১ কোটি টাকা। এই বন্ডের ম্যানডেটেড লিড অ্যারেঞ্জার এবং ট্রাস্টি হিসাবে যথাক্রমে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক এবং গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কাজ করছে।