বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে পুঁজিবাজারে হঠাৎ পতন

বীমা খাতে লেনদেন হয়েছে ২৩০ কোটি টাকার কিছু বেশি; আগের দিন ছিল ২৮৫ কোটি টাকা।

পুঁজিবাজার ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2023, 09:42 AM
Updated : 21 May 2023, 09:42 AM

দীর্ঘদিনের চাপ কাটিয়ে পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসের মধ্যে হঠাৎ দরপতন দেখল বিনিয়োগকারীরা।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স চলতি ২০২৩ সালের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে যাওয়ার পর বিক্রয়চাপ সামলাতে পারেনি পুঁজিবাজার।

শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে সূচক ও লেনদেন কমে যায়। দর হারায় বেশিরভাগ কোম্পানি। যেসব কোম্পানি দর বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল, সেগুলোর অনেকগুলোর দরও কমে যায়।

চলতি বছর বেশ কয়েকবার ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্ট ছুঁই ছুঁই হয়েও সূচক অবস্থান ধরে রাখতে না পেরে নিচে নেমে যায়।

মাসের পর মাস ধরে চলা মন্দার মধ্যে ঈদের আগে থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মধ্যে রোববার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে সূচক উঠে যায় ৬ হাজার ২৯৬.৮০ পয়েন্ট। এর পর কিছুটা কমলেও বেলা ১২টা ২২ মিনিটে আবার তা ৬ হাজার ২৯৬.৩৩ পয়েন্ট হয়।

কিন্তু এরপর দুই ঘণ্টায় টানা পতনে শেষ পর্যন্ত সূচকের ঘরে আগের দিনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট কম নিয়ে শেষ হয় লেনদেন।

গত ২৬ জানুয়ারির ৬ হাজার ২৯৬.২৫ পয়েন্ট ছিল ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগের দিন ৬ হাজার ২৯৩ পয়েন্ট এবং ২ ফেব্রুয়ারি ৬ হাজার ২৯৪ পয়েন্ট ওঠার পর দরপতনে এক পর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল ৬ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে নেমে যায়।

টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের হতাশা চরমে উঠে। তবে পরের দিন থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে সূচক। শুরুর দিকে স্বল্প মূলধনী ও লোকসানি কিছু কোম্পানি, এরপর বহুজাতিক কিছু কোম্পানির লোকসান থেকে বেরিয়ে মুনাফায় ফেরা এবং সবশেষ বস্ত্র এবং সাধারণ বীমা খাতের নিজেকে ফিরে পাওয়ার ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও ফিরতে শুরু করে। নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা বাড়তে থাকে।

২৪ এপ্রিল লেনদেন ৯৬৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর লেনেদেনে আবার ভাটা দেখা দেয়। ১৪ মে ৬৩৬ কোটি টাকায় নেমে তা আবার বাড়তে বাড়তে বৃহস্পতিবার ৯৩২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

সূচক বেড়েও কমে যাওয়ার দিন লেনদেন কমে ১২০ কোটি টাকার বেশি। হাতবদল হয় ৮১১ কোটি ৭৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

৬৫ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ১০৪টি। ১৯২টি হাতবদল হয় আগের দিনের দরে, যেগুলোর সিংহভাগই হাতবদল হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে।

সাতটি কোম্পানির লেনদেন স্থগিত থাকার মধ্যেও ৩৬১টি কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছে এদিন।

বীমা খাতের চিত্র

প্রায় দেড় বছর ধরে চলা সংশোধন কাটিয়ে গত সপ্তাহে বীমা খাতে যে রমরমা দেখা গিয়েছিল, নতুন সপ্তাহের শুরুর দিন তেমনটি দেখা যায়নি। এই খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা।

আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে অনেকটাই, সেই সঙ্গে মোট লেনদেনের মধ্যে কমেছে হিস্যাও।

বৃহস্পতিবার সাধারণ ও জীবন বীমা মিলিয়ে ২৮৫ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়, যা ছিল মোট লেনদেনের ৩৫ শতাংশ। রোববার মোট লেনদেনের ৩১ শতাংশ ছিল এই খাতে। হাতবদল হয় ২৩০ কোটি টাকার কিছু বেশি।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে এ খাতের তিনটি কোম্পানি ছিল, তেমনি দরপতনের শীর্ষ দশেও ছিল দুটি।

সাধারণ বীমার ৪০টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে এদিন। এরমধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির, হারিয়েছে ২০টি আর চারটি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।

দুটি কোম্পানির লেনদেন হয়নি লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে।

এসব কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১২১ কোটি টাকার বেশি যা মোট লেনদেনের প্রায় ১৬ শতাংশ।

জীবন বীমার লেনদেন হওয়া ১৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে দুটির দর, কমেছে ১১টির আর আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে একটি কোম্পানি।

এসব কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ১০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশের কিছু বেশি।

অর্থাৎ এদিন মোট লেনদেনের ৩১ শতাংশ হয় বীমা খাতে, যা আগের দিন ছিল ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। আগের দিন শেয়ার লেনদেন হয় ৫৭ টাকা ২০ পয়সায়, দিন শেষে বেড় হয় ৬২ টাকা ৯০ পয়সা। বাড়ে ৯.৯৬ শতাংশ।

নতুন তালিকাভুক্ত ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর আবার সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে হাতবদল হয়। বাড়ে ৯.৬৫ শতাংশ।

শীর্ষ দশের পঞ্চম স্থানে থাকা গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বাড়ে ৯.০৪ শতাংশ।

এই শীর্ষ দশে ছিল সিএপিএম আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এমারেল্ড অয়েল, ন্যাশনাল টি কোম্পানিও। এগুলোর দরও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে বা কাছাকাছি অবস্থানে থেকে লেনদেন শেষ করেছে। মার্চের শেষে ৩০ টাকায় লেনদেন হওয়া এমারেল্ড অয়েলের দর পৌঁছে গেছে ৯৫ টাকা ১০ পয়সায়।

ওরিয়ন ইনফিউশনের দর ৭.৯১ শতাংশ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৭.৮২ শতাংশ, শ্যামপুর সুগারের দর ৬.৮৪ শতাংশ, জিলবাংলা সুগারের দর বেড়েছে ৬.৫৪ শতাংশ।

আরও একটি কোম্পানির দর ৬ শতাংশের বেশি, তিনটির দর ৫ শতাংশের বেশি, সাতটি করে কোম্পানির দর ৪ ও ৩ শতাংশের বেশি, আটটির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ১১টির দর বাড়ে এক শতাংশের বেশি।

উল্টো চিত্র দেখছে জেমিনি, সি পার্ল, হাইডেলবার্গের শেয়ারে। এক মাসের কম সময়ে ৪৫৬ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর উল্টো রথে থাকা জেমিনি সি ফুড আরও ৫.১৯ শতাংশ দর হারিয়েছে। দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ৬৯৪ টাকা ৮০ পয়সা। কোম্পানিটি দরপতনের পঞ্চম স্থানে ছিল।

দেড় বছরেরও কম সময়ে ৪০ টাকা থেকে ৩২৮ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া সি পার্ল উল্টোরথে এবার নেমেছে ২০০ টাকার নিচে। আগের দিনের চেয়ে ৬.৫২ শতাংশ কমে দর দাঁড়িয়েছে ১৯৭ টাকা ৭০ পয়সা।

দরপতনের শীর্ষে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হল মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, প্রগতি লাইফ, ফার কেমিকেলস, মনোস্পুল পেপার, মেট্রো স্পিনিং মিলস, এপেক্স ফুডস ও আলহাজ্ব টেক্সটাইলস।

দরপতনের তালিকায় ছিল হাইডেলবার্গ সিমেন্টও।

লভ্যাংশ এবং প্রান্তিক প্রতিবেদন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৭৯ টাকা থেকে ৩৪৯ টাকা উঠে যাওয়ার পর কমছে দর।

আগের দিনের চেয়ে ১.৮২ শতাংশ কমে দর দাঁড়িয়েছে ২৬৩ টাকা ৮০ পয়সা।