Published : 22 Aug 2024, 07:12 PM
টানা পাঁচ কর্মদিবস কমার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক বাড়ল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে। তবে যত কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে তার চেয়ে বেশি।
সাত বছর ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠনের ঘোষণার পর ব্যাংক খাতে একটি ছাড়া বেড়েছে সব কটি কোম্পানির দর, সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় এই খাতের পাশাপাশি ছিল বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণ ফোন ও ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে টানা পাঁচ কর্মদিবসে সূচক কমেছিল ৩৪৫ পয়েন্ট। ঘুরে দাঁড়িয়ে এখান থেকে বাড়ল ৯২ পয়েন্ট।
তবে এই উত্থানেও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারধারীরা আরও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ১৫১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২১০টির দর। আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ৩৩টি কোম্পানি।
লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে ৭৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। আগের দিন লেনদেন ছিল ৫৩৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
অথচ গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চার কর্মদিবসে ৭৮৬ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর বিনিয়োগকারীরা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। এরপর ৮ কর্মদিবসে সূচক পড়ল ৪০৮ পয়েন্ট। ফলে বাজার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা। এবার সূচক বাড়লেও এই হতাশা থেকে বের হতে পারছেন না বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী।
সকাল বেলা সূচক চালু হওয়ার পর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন করে প্রধান সূচক। প্রথম পৌনে এক ঘণ্টায় আগের দিনের চেয়ে ৫০ পয়েন্ট যোগ হয়।
এর পর খানিকটা সময়ে দর সংশোধনে গিয়ে বেলা ১২টা থেকে উত্থানে ফেরে ক্রয় চাপ বাড়লে। সেই উত্থান প্রবণতায় পরের আড়াই ঘণ্টা লেনদেন চলে শেষ সময় পর্যন্ত।
ডিএসইএক্সের পাশাপাশি শরিয়া সূচক ১৭ পয়েন্ট এবং সেরা ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই ৩০ সূচক বেড়েছে ৪২ পয়েন্ট।
ব্যাংক খাতের প্রাধান্য
২০১৭ সালে পুঁজিবাজার থেকে ৭টি ব্যাংকের শেয়ার কিনে এস আলম গ্রুপ সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় এই খাতের শেয়ারদর লাফ দিয়েছিল। কিন্তু পরের টানা সাত বছর খাতটি টানা মন্দার মধ্য দিয়ে গেছে।
এই সময়ে খেলাপি ঋণ, মন্দ ঋণ নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। বিনিয়োগকারীরাও এই খাতের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধনের খাত হলেও লেনদেনে এই খাতের অবদান ছিল কম।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ফিরে আসার ইঙ্গিত মিলেছে।
টানা দুই দিন ডিএসইর লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্যাংক খাত। বুধবার মোট লেনদেনের ৪০ শতাংশ আর বৃহস্পতিবার ছিল ২৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংক লেনদেনে অংশ নিলে শেয়ার দর বেড়েছে ৩৪টির, কমেছে একটির। লেনদেনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ অবদান রেখে এগিয়ে এসেছে টেলিকম খাত। এরপরই রয়েছে একমাসের বেশি সময় ধরে শীর্ষে অবদান রাখা ওষুধ ও রসায়ন খাতটি।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই ছিল ব্যাংক খাতের। এর মধ্যে পাঁচটির দর এক দিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে।
এর মধ্যে আছে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হতে যাওয়া এসআইবিএল, ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। অপর ব্যাংকটি হল এনবিএল, যেটির পরিচালনা পর্ষদে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু আসার পর টানা দুই দিন দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করল।
শীর্ষ দশে ব্যাংক খাতের বাইরে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হল অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, নুরানী ডায়িং, ফারইস্ট লাইফ ও কে অ্যান্ড কিউ।
এর মধ্যে কে অ্যান্ড কিউ বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর মালিকানাধীন কোম্পানি। সরকার পতনের পর তার বন্ধ কোম্পানি দুলামিয়া কটনের দরও বাড়ছে।
সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় ছিল অবশ্য গ্রামীণ ফোন। কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩.৬৫ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ১৯ দশমিক ১৯ পয়েন্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৭৫ পয়েন্ট যোগ গয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর কারণে।
ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ওয়ালটন, অলিম্পিক, স্কয়ার ফার্মা, রেনাটা, এনবিএল ও ডাচ বাংলা ব্যাংক সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে।
এই ১০টি কোম্পানিই সূচকে যোগ করেছে ৫৯ দশমিক ১৯ পয়েন্ট।
দরপতনের শীর্ষ দশের সবগুলো কোম্পানিই পতনের সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে। এগুলো হল প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার, সালভো ক্যামিকেলস, লিবরা ইনফিউশন, এএফসি অ্যাগ্রো, পেপার প্রসেসিং, ওরিয়ন ফার্মা, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স এবং ওরিয়ন ইনফিউশন।
৫০টিরও বেশি কোম্পানি শেয়ার তার সার্কিট ব্রেকার ৩ শতাংশের কাছাকাছি দর হারিয়েছে।