প্রস্তুতিতে প্রাণবন্ত ব্রাজিল

আল আরাবি স্পোর্ট ক্লাব মাঠে খোজমেজাজে অনুশীলন সেরেছে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের অভিযানে কাতারে আসা ব্রাজিল।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরদোহা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2022, 05:12 PM
Updated : 20 Nov 2022, 05:12 PM

অনুশীলন শুরুর নির্ধারিত সময়ের মিনিট বিশেক আগে মাঠ ‘রেকি’ করে গেলেন তিতে। আল আরাবি স্পোর্টস ক্লাব মাঠে চক্কর দিলেন। এর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর প্রস্তুতি নামলেন নেইমার, রিশার্লিসন, আলভেসরা। কাতারে আসার পর প্রথম অনুশীলন বলেই হয়তো শিষ্যদের তেমন একটা চাপ দিলেন না তিতে। রানিং, স্ট্রেচিং, শুটিং প্র্যাকটিসের মতো নিয়মিত কাজগুলো নিয়ে পার করলেন ব্যস্ত সময়। মাঠের দুই প্রান্তে প্রস্তুতি সারল ব্রাজিল। নেইমার, আলভেসদেরও দেখা গেল প্রাণোচ্ছল, প্রাণবন্ত।

কৌতুহলী চোখ ছিল দানি আলভেসের দিকে। ৩৯ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারকে বিশ্বকাপ দলে রেখে বড়সড় একটা চমক উপহার দিয়েছেন তিতে। তবে এ দিনের প্রস্তুতিতে ঠিকই ঝলক দেখালেন আলভেস। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি ওভার ল্যাপ করে উইং ধরে উপরে উঠে এসে বক্সে ক্রস বাড়ানোর কাজটি দীর্ঘদিন ক্লাব ফুটবলে, জাতীয় দলের জার্সিতে দারুণভাবে করে আসছেন তিনি। এদিন অবশ্য তেমন করে ছুটলেন না, গতি দিয়ে কাউকে পেছনে ফেলার তাড়াও দেখালেন না, কিন্তু বেশ কয়েকটি অসাধারণ ক্রস বাড়িয়ে ঠিকই যেন ইঙ্গিত দিলেন বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখানোর।

সেট-পিসের অনুশীলন হলো মূলত আলভেসের বাড়ানো ক্রস দিয়েই। অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডারের পা ছুঁয়ে বেরিয়ে যাওয়া বল কখনও সোজা, কখনও বাঁক খেয়ে ঠিকই ছুঁটল গোলমুখে কিংবা ছোট ডি’র আশা-পাশের বিপজ্জনক এলাকায়। লাফিয়ে উঠে কখনও রিশার্লিসন, কখনও মার্কিনিয়োসকে দেখা গেল হেডে কিংবা শটে জাল খুঁজে নিতে।

শুরুর দিকের অনুশীলনে নেইমার অবশ্য স্কোরিংয়ে অতটা মনোযোগী হলেন না। ড্রিবলিংয়ের জাদু ছড়াতে ছড়াতে চকিত চমকে দুই সতীর্থের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার কসরত বেশ কয়েকবার দেখালেন ৩০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। এবং যথারীতি অনুশীলনে সেই চেনা আমুদে, একটু আয়েশী নেইমারের দেখা মিলেছে।

আলভেসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্রাজিলের রক্ষণ সামলানোর মহাভার থাকবে চিয়াগো সিলভার কাঁধে। দেশের হয়ে ১০৯টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ৩৮ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারকে অবশ্য দেখা গেল না তেমন একটা ঘাম ঝরাতে। মাঝমাঠে জেসুসদের সঙ্গে আয়েশী ভঙ্গীতে বসে, খোশগল্পে মশগুল থাকলেন প্রায়ই।

অনুশীলনের শেষ দিকে শুটিং অনুশীলনে মনোযোগী হলেন তিতে। কেবল নেইমার, ভিনিসিউস জুনিয়র নয়, মোটামুটি ১৪ জনকে বক্সের ঠিক উপরে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। রিশার্লিসনের প্রথম শটটি বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফেরালেন ওয়েভেরতন। তাতে যেন একটু হাসির রোল পড়ে গেল! ওয়েভেরতন যে এই দলের তৃতীয় গোলরক্ষক!

তিতের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক আলিসন। লিভারপুলের এই গোলরক্ষক অনেক দিন ধরেই ব্রাজিলের পোস্টের নিচে বিশ্বস্ত নাম। কোনো কারণে না পাওয়া গেলে পোস্ট সামলানোর দায়িত্ব বর্তাবে ম্যানচেস্টার সিটির এদেরসনের কাঁধে। কিন্তু ওয়েভেরতন যেন ওই দারুণ সেভ করে দাবি জানিয়ে রাখলেন।

শুটিং প্র্যাকটিস চলল মোটামুটি আধ ঘণ্টার মতো। কারো শট খুঁজে পেল ঠিকানা, কোনোটা গেল বাইরে। তিন গোলরক্ষক নিয়ে মাঠে এক কোণে অনুশীলন চললেও এই পর্বে মূলত ওয়েভেরতনকেই পরখ করেছেন তিতে। ঝাঁপিয়ে, লাফিয়ে, কখনও আঙুলের টোকায় বল ক্রসবারের বাইরে দিয়ে বের করে দিয়ে সতীর্থদের বাহবাও কুড়িয়েছেন পালমেইরাসের এই ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা এই গোলরক্ষক।

এক ঘণ্টার একটু বেশি সময়ের খোশ-মেজাজের প্রস্তুতি শেষে হঠাৎই মাঠে দেখা গেল সাদা গেঞ্জি পরা এক দল শিশুদের ঢুকতে। তাদের সঙ্গে শিশুতোষ আনন্দে মেতে উঠলেন নেইমার, রিশার্লিসনরা।

প্রায় আধ ঘণ্টার মতো সময় শিশুদের সঙ্গে সময় কাটালেন নেইমরা। প্রিয় তারকাকে দেখার উচ্ছ্বোসে সবাই যখন ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে, সেখানে শিশুগুলো ফুটবল খেলতেই ছিল মনোযোগী। নিজেদের পায়ের কারিকুরি দেখাতে সবার যেন প্রাণান্ত চেষ্টা! তাই দেখে ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়, স্টাফদের চোখে-মুখেও ফুটে উঠল মুগ্ধতা। শিশুদের আদর করলেন নেইমাররা, ছবিও তুললেন জড়িয়ে ধরে, জার্সি উপহার দিলেন। আনন্দে, হাসিতে, মাঝেমধ্যে ভিনদেশি ভাষায় চিৎকার করে কিছু বলতেও শোনা গেল। দূর থেকে সে ভাষা পরিষ্কার বোঝা গেল না বটে, কিন্তু তা যে আনন্দের রেণুতে ভরা, শিশুদের মতো খেলোয়াড়দের হাসিমুখেই ফুটে উঠছিল।

স্থানীয় সময় সাড়ে সাতটার দিকে অনুশীলনের ভেন্যু ছাড়লেন নেইমাররা। বেশ আয়েশী মেজাজে। কাতার বিশ্বকাপের মাঠের লড়াই শুরুর অবশ্য দেরি নেই। আগামী ২৪ নভেম্বর সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ‘জি’ গ্রুপে ব্রাজিলের বাকি দুই প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড ও ক্যামেরুন।

গ্রুপ পর্বের পথচলা খুব একটা কঠিন নয় বলে হয়ত প্রথম দিনের অনুশীলনে হাড়-ভাঙা খাটুনির পথে হাঁটেননি তিতে। কাতারের গরমের কারণে খেলোয়াড়দের আরেকটু বেশি বিশ্রাম দেওয়ার ভাবনা থেকে এমন হালকা অনুশীলনও হতে পারে। তারপরও নেইমার, ভিনিসিউদের আয়েশী ভঙ্গীর অনুশীলনের পরতে পরতে প্রায়ই দেখা গেল দারুণসব ঝলক। ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের প্রত্যয়ও।