বেলজিয়ামকে স্তব্ধ করে মরক্কোর দুর্দান্ত জয়

২৪ বছর পর বিশ্বকাপে জয়ের স্বাদ পেল মরক্কো।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2022, 02:01 PM
Updated : 27 Nov 2022, 02:01 PM

জিতলেই শেষ ষোলোর টিকেট নিশ্চিত- এমন সমীকরণে ম্যাচ জুড়ে নিজেদের হারিয়ে খুঁজলেন এদেন আজার, কেভিন ডে ব্রুইনেরা। চোট কাটিয়ে শেষ দিকে ফিরলেন বেলজিয়ামের রেকর্ড গোলদাতা রোমেলু লুকাকু। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। দ্বিতীয়ার্ধের দুই গোলে তাদের চমকে দিয়ে অসাধারণ এক জয় তুলে নিল মরক্কো।

আরেকটি অঘটনের সাক্ষী হলো কাতার বিশ্বকাপ। আল থুমামা স্টেডিয়ামে রোববার ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারাল ২২ নম্বরের মরক্কো।

আব্দেলহামিদ সাবিরি দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান বাড়ান জাকারিয়া আবুখলাল। দুজনই বদলি নেমেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে।

দুই যুগ পর বিশ্বকাপে জয়ের স্বাদ পেল আফ্রিকার দেশটি। সবশেষ ১৯৯৮ সালের আসরে স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছিল তারা।

সব মিলিয়ে বিশ্ব আসরে এটি তাদের তৃতীয় জয়। ১৯৮৬ আসরে গ্রুপ পর্বে পর্তুগালকে হারিয়ে শেষ ষোলোয় উঠেছিল তারা, যা এখনও তাদের সেরা সাফল্য।

এবারও তেমন কিছুর সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলো দলটির। ‘এফ গ্রুপে’ ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে তারা। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বেলজিয়াম। একটি করে ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার ১ পয়েন্ট, কানাডার শূন্য।

এ দিন ম্যাচ শুরুর আগ মুহূর্তে একটি ধাক্কা খায় মরক্কো। শুরুতে একাদশে ছিলেন গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। তবে জাতীয় সঙ্গীতের পর কোচের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। ইঙ্গিত করেন চোখে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে তার। পোস্টের দায়িত্ব সামলাতে মাঠে নামেন মুনির এল কাজুই।

প্রথম ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতলেও বেলজিয়ামের সেরাটা দেখা যায়নি সেদিন। মরক্কোর বিপক্ষে বল দখলে আধিপত্য করলেও শুরুতে তাদের আক্রমণে ধার ছিল না। ১৯তম মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নেয় তারা। গোলরক্ষক বরাবর বল মারেন তমা মুনিয়ে।

ক্রোয়েশিয়াকে গোলশূন্য ড্রয়ে রুখে দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা মরক্কো প্রথম সুযোগ পায় ৩৫তম মিনিটে। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে উড়িয়ে মেরে হতাশ করেন পিএসজির ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি।

বিরতির আগে ফ্রি-কিকে বল জালে পাঠান মরক্কোর হাকিম জিয়াশ। তবে ভিএআরের সাহায্যে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।

৫৭তম মিনিটে আরেকটি সুযোগ তৈরি করে মরক্কো। বক্সের বাইরে থেকে ফরোয়ার্ড সোফিয়ান বুফালের বাঁকানো শটে পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায় বল। ৬৫তম মিনিটে বেলজিয়ামের ড্রিস মের্টেন্সের শট ঠেকান গোলরক্ষক মুনির।

৭৩তম মিনিটে বেলজিয়ামকে স্তব্ধ করে এগিয়ে যায় মরক্কো। বাঁ দিকের কর্নার ফ্ল্যাগের কাছাকাছি থেকে সাবিরির ফ্রি-কিক বিপজ্জনক কিছু ছিল না গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার জন্য। সামনে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় থাকায় যেন তালগোল পাকিয়ে ফেলেন তিনি। বাঁক খেয়ে বল আশ্রয় নেয় জালে।

এবারের বিশ্বকাপে সরাসরি ফ্রি-কিকে প্রথম গোল এটি।

আগের দিন বেলজিয়াম কোচ রবের্তো মার্তিনেস জানিয়েছিলেন, এই ম্যাচে লুকাকুর খেলার সম্ভাবনা নেই। তবে দলকে বাঁচাতে ৮১তম মিনিটে নামানো হয় ইন্টার মিলান স্ট্রাইকারকে।

যদিও উল্লেখযোগ্য কিছু করে দেখাতে পারেননি তিনি। বরং যোগ করা সময়ে ব্যবধান বাড়িয়ে বেলজিয়ামের ঘুরে দাঁড়ানোর সব আসা শেষ করে দেয় মরক্কো। ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে একজনের বাধা এড়িয়ে কাটব্যাক করেন জিয়াশ, আর জোরাল শটে বাকিটা সারেন আবুখলাল।

লুকাকু, ডে ব্রুইনে, আজার, কোর্তোয়াদের এই দলকে বলা হয় বেলজিয়ামের ‘সোনালী প্রজন্ম’। তাদের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাব্য শেষ সুযোগ এটি। এখন অবশ্য তাদের সামনে পর্বের বৈতরণী পার হওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রুপের শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া।

অন্যদিকে, মরক্কোর এমন সাফল্যের জন্য কোচ ওয়ালিদ রেগরাগির কথা বলতেই হবে আলাদা করে। গত সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেন তিনি। তারপর থেকে তার কোচিং এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে কোনো গোল হজম করেনি মরক্কো!

বেলজিয়ামের বিপক্ষে চারবারের দেখায় দলটির দ্বিতীয় জয় এটি। দুটিই সবশেষ দুই ম্যাচে। এর আগেরটি যদিও সেই ২০০৮ সালে, প্রীতি ম্যাচে ৪-১ গোলে জিতেছিল তারা। এবারটি নিশ্চয় ওপরে থাকবে।