১৯৫৮ বিশ্বকাপ: ব্রাজিলের অপেক্ষার অবসান

সুইডেন আসর দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল।

ইকবাল শাহরিয়ারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2022, 04:44 PM
Updated : 10 Nov 2022, 04:44 PM

আট বছরে কত পরিবর্তন। ১৯৫০ আসরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না স্বাগতিক হওয়ার জন্য আগ্রহী কোনো দেশ। ১৯৫৮ আসর আয়োজনের জন্য চারটি দেশ জানায় আগ্রহের কথা। ফিফা কংগ্রেসে ভোটাভুটিতে জিতে আয়োজনের সুযোগ পায় ইউরোপের দেশ সুইডেন।

ষষ্ঠ আসরেও মূলে পর্বে অংশ নেয় ১৬ দেশ। এর মধ্যে সরাসরি খেলার সুযোগ পায় স্বাগতিক সুইডেন ও শিরোপাধারী পশ্চিম জার্মানি। ৮ থেকে ২৯ জুনের টুর্নামেন্টে বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসে বাকি ১৪ দেশ।   

সুইডেন, অস্ট্রিয়া, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, যুগোস্লাভিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, হাঙ্গেরি, পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স ও চেকোস্লোভাকিয়া- এই ১২ দল ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব করে। লাতিন আমেরিকা থেকে আসে তিন দেশ- ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে। এই দুই মহাদেশের বাইরে সুযোগ পায় কেবল উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো। 

নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এই টুর্নামেন্ট দিয়ে প্রথমবার খেলে বিশ্বমঞ্চে। 

গ্রুপ পর্ব 

চারটি গ্রুপে চারটি করে দল অংশ নেয়। গতবারের মতো কোনো বাছাই, অবাছাই ছিল না এবার। গ্রুপের প্রতিটি দল রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে খেলে পরস্পরের বিপক্ষে। 

গ্রুপ-১: পশ্চিম জার্মানি, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, চেকোস্লোভাকিয়া

গ্রুপ-২: ফ্রান্স, যুগোস্লাভিয়া, পারাগুয়ে, স্কটল্যান্ড

গ্রুপ-৩: সুইডেন, ওয়েলস, হাঙ্গেরি, মেক্সিকো

গ্রুপ-৪: ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন, অস্ট্রিয়া 

গ্রুপ-১ থেকে এক জয় ও দুই ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে যায় পশ্চিম জার্মানি। একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে অন্য একটি জায়গার জন্য লড়াইয়ে নামে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও চেকোস্লোভাকিয়া। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো প্লে-অফে ২-১ গোলে জিতে পশ্চিম জার্মানির সঙ্গী হয় নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। একমাত্র জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থেকে আসর শেষ করে আর্জেন্টিনা। 

গ্রুপ-২ থেকে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে ফ্রান্স ও যুগোস্লাভিয়া। দুই দলেরই পয়েন্ট ছিল ৪। ফ্রান্স জেতে দুই ম্যাচে, গোল পার্থক্যে এগিয়ে থেকে তারাই হয় গ্রুপ সেরা। যুগোস্লাভিয়ার এক জয়ের পাশে ছিল দুটি ড্র।   

একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয় প্যারাগুয়ে। একটি ড্রয়ে কেবল ১ পয়েন্ট পায় স্কটল্যান্ড।  

এই গ্রুপের ৬ ম্যাচে হয় ৩১ গোল! ৯ জুন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন ফ্রান্সের জুস্ত ফঁতেইন। প্রথম পর্বে তিনি করেন ৬ গোল। 

গ্রুপ-৩ থেকে শেষ আটে যায় সুইডেন ও ওয়েলস। দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় সুইডেন। তিন ড্রয়ে ৩ পয়েন্ট পায় ওয়েলস, একটি করে জয় ও ড্রয়ে হাঙ্গেরিরও পয়েন্ট হয় ৩। প্লে-অফ ম্যাচে ২-১ গোলে তাদের হারিয়ে টুর্নামেন্টে টিকে থাকে ওয়েলস। ১ পয়েন্ট নিয়ে বিদায় নেয় মেক্সিকো। 

গ্রুপ-৪ থেকে কোয়ার্টার-ফাইনালের যায় ব্রাজিল ও ইংল্যান্ড। দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় ব্রাজিল। তিন ড্রয়ে ৩ পয়েন্ট পায় ইংল্যান্ড, একটি করে জয় ও ড্রয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নেরও পয়েন্ট হয় ৩। প্লে অফ ম্যাচে ১-০ গোলে জিতে পরের ধাপে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১ মাত্র পয়েন্ট পেয়ে তলানিতে থেকে আসর শেষ করে অস্ট্রিয়া। 

কোয়ার্টার-ফাইনাল 

শেষ আটে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-ওয়েলস, ফ্রান্স-নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, সুইডেন- সোভিয়েত ইউনিয়ন, পশ্চিম জার্মানি- যুগোস্লাভিয়া। 

ওয়েলসকে ১-০ গোলে হারিয়ে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। এই ম্যাচ দিয়েই নিজের আগমণীবার্তা দেন ফুটবলের মহানায়ক, তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে। সেদিন ১৭ বছরের তরুণই করেছিলেন ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি। 

ফঁতেইনের জোড়া গোলে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডকে ৪-০ গোলে হারায় ফ্রান্স। সোভিয়েত ইউনিয়কে ২-০ গোলে হারায় সুইডেন। আর যুগোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতে পশ্চিম জার্মানি। 

সেমি-ফাইনাল 

২৪ জুন পেলের হ্যাটট্রিকে সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সকে ৫-২ গোলে হারায় ব্রাজিল। তিন আসরের মধ্য দ্বিতীয়বার দলটি যায় ফাইনালে। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে যায় সুইডেন। 

২৬ জুন তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ফঁতেইনের হ্যাটট্রিকে পশ্চিম জার্মানিকে ৬-৩ গোলে হারায় ফ্রান্স। সুইডেনে করা ফঁতেইনের ১৩ গোল এখনও এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড হয়ে টিকে আছে। 

ফাইনাল 

২৯ জুন, ১৯৫৮। ৫০ হাজার দর্শক উপস্থিতিতে শুরু হয় সুইডেন ও ব্রাজিলের শিরোপার লড়াই। ম্যাচের শুরুতেই স্বাগতিকদের এগিয়ে নেন নিলস এরিক লিদহোম। ভাভার জোড়া গোলে প্রথমার্ধেই এগিয়ে যায় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া গোল করে ব্যবধান আরও বাড়ান পেলে। এছাড়া অধিনায়ক মারিও জাগালো করেন এক গোল। স্বাগতিকদের হয়ে এক গোল শোধ করেন আগনা সিমন্সন। 

এক নজরে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ 

·        স্বাগতিকঃ সুইডেন

·        চ্যাম্পিয়নঃ ব্রাজিল

·        রানার আপঃ সুইডেন

·        মোট ম্যাচঃ ৩৫

·        মোট গোলঃ ১২৬

·        গোল গড়ঃ ৩.৬

·        সর্বোচ্চ গোলদাতাঃ  জুস্ত ফঁতেইন (ফ্রান্স)-১৩ গোল

·        সেরা খেলোয়াড়ঃ দিদি (ব্রাজিল) [আন অফিসিয়াল]