সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়ী সাগরিকার চোখে এখন আরও বড় স্বপ্নের আঁকিবুকি।
Published : 18 Feb 2024, 06:30 PM
পরিবার নিয়ে জানতে চাইলে সাগরিকার ঝটপট উত্তর, “আমরা আসলে মধ্যবিত্ত পরিবার। বড় ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার, কিন্তু হতে পারেনি। এখন কাজ করে। তার আয়েই চলে আমাদের সংসার।” এই কথাগুলো বলতে অনেকের মধ্যে কাজ করে জড়তা, কিন্তু সাগরিকা যে মোটেই তাদের মতো সাধারণ মেয়ে নন!
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১৮ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড খুলে দিলেন মনের আগল। শোনালেন আগামী দিনের স্বপ্ন। বললেন, কখনেই ‘সাধারণ মেয়ে’ হতে চাননি তিনি।
লক্ষ্য ছিল ফুটবলার হওয়ার এবং অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সে স্বপ্ন সত্যি করেছেন তিনি। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পাশাপাশি সাগরিকা জিতে নিয়েছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার; সামনের দিনগুলোতেও উপহার দিতে চান দ্যুতিময় ফুটবল।
একসঙ্গে দুটি স্বীকৃতি পেলেন, কেমন লাগছে। এটাই কি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো স্মৃতি?
সাগরিকা: অনেক ভালো লাগছে একই সাথে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়ে। তবে এটাই সবচেয়ে ভালো স্মৃতি কি না…ঠিক তা নয়। আগামীতে তো আরও অনেক ভালো স্মৃতি আসতে পারে। তবে এটাও ভালো লাগছে। অনেক ভালো লাগছে।
যখন ফুটবলে এসেছিলেন, তখন কি মনে হয়েছিল এভাবেই বাজিমাত করবেন?
সাগরিকা: না, এটা কখনই ভাবিনি। তবে ইচ্ছা ছিল সুযোগ পেলে এমন কিছু করব। তবে সত্যি বলতে, এত কিছু, এত দ্রুত আমার জীবনে ঘটে যাবে…এমনটা ভাবিনি। যা পেয়েছি, যেভাবে খেলেছি, তার স্বীকৃতি পেয়েছি। ভবিষ্যতে চেষ্টা করব আরও ভালো খেলতে।
নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জোড়া গোলের পর কি আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল?
সাগরিকা: বয়সভিত্তিক এই পর্যায়ে (অনূর্ধ্ব-১৯) এটাই আমার প্রথম টুর্নামেন্ট। এটা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে আগ্রহ বেশি ছিল। প্রথম ম্যাচে গোল পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল অনেক। তখন মনে হয়েছিল, যদি প্রথম ম্যাচে গোল করতে পারি, তাহলে কেন দ্বিতীয় ম্যাচে পারব না।
টুর্নামেন্টে একই সাথে দুটি ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের স্বীকৃতি সামনের দিনগুলোর জন্য কতটুকু চাপের, কতটুকু অনুপ্রেরণার?
সাগরিকা: চাপ তো আছেই। সামনে আমাকে সিনিয়দের সাথে লড়াই করতে হবে, যাতে তাদের মতো আমিও জাতীয় দলে নিয়মিত খেলতে পারি। এবারের প্রাপ্তিতেই বেশি খুশি হলে চলবে না। ভবিষ্যতে আরও বেশি কিছু পেতে হলে আমাকে আরও ভালো খেলতে হবে; আরও পরিশ্রম করতে হবে। দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে।
জাতীয় দলের আক্রমণভাগে সাবিনা খাতুন খেলে চলেছেন। আছেন কৃষ্ণা রানী সরকারসহ আরও অনেকে। সিরাত জাহান স্বপ্না চলে গেছেন। আগামীতে এদের জায়গা নিতে পারবেন?
সাগরিকা: (হাসি) আপুরা এই পজিশনে খেলে জাতীয় দলে, সেটা ঠিকাছে। কিন্তু আমি মনে করি, আমিও যদি আপুদের মতো ভালো খেলতে পারি, তাহলে আমিও জাতীয় দলে আক্রমণভাগে খেলার সুযোগ পাব। তাদের জায়গা পূরণ করতে পারব কিনা এটা আসলে নির্ভর করবে আমার খেলার ওপর। আপুদের যদি পছন্দের খেলোয়াড় হতে পারি পারফরম্যান্স দিয়ে, তাহলে কোচেরাই আমাকে বাছাই করে নিবেন, ওদের জায়গা পূরণ করতে পারব না। তবে আগের চেয়ে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে। এতটুকুতে হবে না (সামনের দিনগুলোতে)।
লিগে তো সাবিনার গোলের সেঞ্চুরি আছে। তাকে ছাপিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য আছে কি?
সাগরিকা: সবার দোয়া থাকলে আর আমার পরিশ্রম থাকলে অবশ্যই পারব। তবে এজন্য পরিশ্রম করতে হবে। সেটা করতে হলে অবশ্যই আমাকে ফিটনেস ধরে রাখতে হবে। ফিটনেস ঠিক রাখতে না পারলে তো খেলা চালিয়ে যেতে পারব না। অবশ্য লিগে এখনও কোনো দলে যোগ দেইনি। জানি না কোনটাতে খেলব। (গত লিগে এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হয়ে খেলে ১০ গোল করেছিলেন সাগরিকা)।
এবার নিজেকে নিয়ে, পরিবার নিয়ে বলুন…
সাগরিকা: ক্লাস দশম শ্রেণিতে পড়ি আমাদের ওখানে (ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে) বলিদারা উচ্চ বিদ্যালয়ে। আমরা দুই-ভাই বোন। আমি ছোট, ভাইয়া বড়। ভাইয়া আগে পড়াশোনা করত, এখন করে না। আমরা আসলে মধ্যবিত্ত পরিবার, ভাইয়ার অনেক শখ ছিল ক্রিকেটার হওয়ার, কিন্তু পারেনি। এখন সে কাজ করে। তার আয় থেকে আমাদের পরিবারের খরচ চলে।
আপনি ফুটবলার হতে চাইলেন কিভাবে? চোটসহ নানা কারণেই অনেক মেয়ে তো ফুটবলার হতে চায় না, ঘরকুনো, সাধারণ মেয়ে হয়ে থাকতে চায়…
সাগরিকা: আমার উঠে আসার পথটা খুব কঠিন ছিল। অনেক কথা শুনতে হয়েছে। বাবাও ফুটবল খেলতে দিতে চাইনি, কিন্তু আমি ফুটবলারই হতে চেয়েছি। অনেক মেয়ে খেলতে চাই না, কিন্তু আমি খেলতে চেয়েছি। আমার ফুটবলার হওয়ার শখই ছিল, সেটা হতে পেরেছি, এজন্যই ভালো লাগে। আমাদের ওখানে অনেক গরীব মেয়েরা আছে। তাদের যদি সহযোগিতা করা যায়, তাহলে তারাও আমার মতো উঠে আসার পথ পাবে।