দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নিজেদের ভুলেই জয়ের পথ থেকে ছিটকে যায় ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।
Published : 07 Apr 2024, 10:30 PM
প্রথমার্ধের ছন্নছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বিরতির পর ঘুরে দাঁড়াল দারুণভাবে। জাগাল জয়ের সম্ভাবনাও। শেষ পর্যন্ত যদিও পারল না তারা। ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত খেলা লিভারপুল শেষ দিকে সমতা টেনে একটি পয়েন্ট নিয়ে ফিরল।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রোববার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছে।
লুইস দিয়াসের গোলে লিভারপুল এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সমতা টানেন ব্রুনো ফের্নান্দেস। কবি মেইনুর গোলে এগিয়েও যায় তারা। পরে মোহামেদ সালাহর গোলে হার এড়ায় ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।
বল দখল কিংবা আক্রমণে ম্যাচ জুড়ে আধিপত্য করে লিভারপুল। অসংখ্য সুযোগও পায় তারা; কিন্তু শেষটা সুখকর হয়নি দলটির জন্য। এই ড্রয়ের ফলে শিরোপাভাগ্যও আর রইল না তাদের হাতে। টেবিলের প্রথম তিন দলের মধ্যে পার্থক্য ফের নেমে এলো ১ পয়েন্টে।
৩১ ম্যাচে ২১ জয় ও ৮ ড্রয়ে ৭১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লিভারপুল। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে শীর্ষে আর্সেনাল।
আর ৭০ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে শিরোপাধারী ম্যানচেস্টার সিটি।
মৌসুমজুড়ে ভীষণ অধারাবাহিক ইউনাইটেডের সাম্প্রতিক সময়টা কাটছে খুব খারাপ; লিগে আগের পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে তারা, সবশেষ ম্যাচে চেলসির বিপক্ষে জয়ের দুয়ারে গিয়ে অন্তিম সময়ে দুই গোল খেয়ে হেরে বসে দলটি।
লিভারপুলের বিপক্ষে অবশ্য ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগায় তারা। সতীর্থের থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে কাটিয়ে জালে পাঠান আলেহান্দ্রো গারনাচো। তবে অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান।
পরের মিনিটেই আবার পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে যেতে পারতো লিভারপুল। তবে দমিনিক সোবোসলাইয়ের শট দারুণ ক্ষীপ্রতায় এক হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দেন আন্দ্রে ওনানা।
সেই শুরু, আশাব্যাঞ্জক শুরু করা ইউনাইটেডকে এরপর চেপে ধরে লিভারপুল। একের পর এক আক্রমণের সুফল তারা পায় ২৩তম মিনিটে। কর্নারে উড়ে আসা বল হেডে দূরের পোস্টে পাঠান দারউইন নুনেস, আর ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে দিয়াসের ভলি এক ড্রপে ঠিকানা খুঁজে পায়।
এই গোলে ইউনাইটেডে রক্ষণের দুর্বলতাও ফুটে ওঠে প্রকটভাগে। ডি-বক্সে তাদের অনেক খেলোয়াড় থাকার পরও, নুনেস ও দিয়াসকে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি।
চার মিনিট পর পাল্টা জবাব দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল ইউনাইটেডের সামনে। সতীর্থের ফ্রি কিকে কাসেমিরো হেডে বল বাড়ান গোলমুখে, কিন্তু প্রতিপক্ষের বাধার মুখে প্রয়োজনীয় টোকাটা দিতে পারেননি হ্যারি ম্যাগুইয়ার কিংবা গাসমুস হয়লুন।
প্রথমার্ধের পুরোটা সময়ে প্রতিপক্ষের চাপে ইউনাইটেড কতটা কোণঠাসা ছিল, তা পরিসংখ্যানেও পরিষ্কার। ৫৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে লিভারপুল গোলের জন্য ১৫টি শট নিয়ে চারটি লক্ষ্যে রাখে, সেখানে এরিক টেন হাগের দল কোনো শটই নিতে পারেনি!
বিরতির পরও একইভাবে খেলতে থাকে লিভারপুল। তবে, ৫০তম মিনিটে তাদের ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ পেয়ে যায় ইউনাইটেড।
মাঝমাঠে বল পায়ে নিয়ে সামনে না বাড়িয়ে, প্রতিপক্ষের অবস্থান না দেখে, বাঁ পাশের সতীর্থের উদ্দেশ্যে বাড়ালেন জেরেল কোয়ানসা। কিন্তু তাতে ছিল না যথেষ্ট গতি। মাঝপথে বল ধরেই শট নিলেন ইউনাইটেড অধিনায়ক ফের্নান্দেস, অনেকটা এগিয়ে থাকা গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জড়ায় জালে।
নিজেদের সীমানা থেকে পাসিং ফুটবলে গড়ে তোলা আক্রমণে ৬৭তম মিনিটে দারুণ এক গোলে এগিয়ে যায় ইউনাইটেড। অ্যারন ওয়ান-বিসাকার পাস বক্সে পেয়ে শরীরটাকে ঘুরিয়ে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে দুর্দান্ত বাঁকানো শটে দূরের পোস্ট গোলটি করেন ১৮ বছর বয়সী ইংলিশ মিডফিল্ডার মেইনু।
এগিয়ে গিয়ে আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। ৭৩তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ পায় তারা, তবে বক্সে ভালো পজিশনে বল পেয়েও গোলরক্ষক বরাবর দুর্বল শট নিয়ে হতাশ করেন গারনাচো।
ছয় মিনিট পর মুহূর্তের ব্যবধানে দুটি ভালো সুযোগ নষ্ট হয় লিভারপুলের। দিয়াসের নিচু শট গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা ঝাঁপিয়ে ঠেকানোর পর, আলগা বল পেয়েছিলেন সালাহ; কিন্তু দুরূহ কোণ থেকে উড়িয়ে মারেন তিনি।
৮৪তম মিনিটে সালাহর সফল স্পট কিকে স্বস্তি ফেরে লিভারপুল শিবিরে। তরুণ ইংলিশ মিডফিল্ডার হাভি এলিয়ট ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টিটি পায় সফরকারীরা।
বাকি সময়ে জয়সূচক গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে লিভারপুল। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে পরিষ্কার সুযোগও পায় তারা; কিন্তু ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে উড়িয়ে মারেন দিয়াস।
এতে মূল্যবান দুটি পয়েন্ট এবং শীর্ষে ফেরার সুযোগ হাতছাড়া করার হতাশায় মাঠ ছাড়ল লিভারপুল।