প্রথমার্ধেই তিন গোল করে রেয়াল মাদ্রিদকে চালকের আসনে বসিয়ে দেন ভিনিসিউস, বিরতির পর একটি গোল করেন রদ্রিগো।
Published : 15 Jan 2024, 01:54 AM
ঘড়ির কাঁটায় তখনও ম্যাচের ১০ মিনিট পূর্ণ হয়নি। তিন মিনিটের মধ্যে দুইবার বার্সেলোনার জালে বল পাঠালেন ভিনিসিউস জুনিয়র। শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে পড়া কাতালান দলটি পারল না আর ম্যাচে ফিরতে। দুই ব্রাজিলিয়ানের নৈপুণ্যে স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করল রেয়াল মাদ্রিদ।
সৌদি আরবের রিয়াদের কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়ামে রোববার রাতে ফাইনালে ৪-১ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল।
প্রথমার্ধে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে রেয়ালের নায়ক ভিনিসিউস। তার দ্বিতীয় গোলে সহায়তা করা রদ্রিগো করেন দলের চতুর্থ গোলটি। শেষ ২০ মিনিট ১০ জন নিয়ে খেলা বার্সেলোনার একমাত্র গোলটি করেন রবের্ত লেভানদোভস্কি।
গত বছর এই রিয়াদেই রেয়ালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের রেকর্ড ১৪তম শিরোপা জিতেছিল বার্সেলোনা। এবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল মাদ্রিদের দলটি, কমাল ব্যবধানও। প্রতিযোগিতাটিতে এটি তাদের ১৩তম শিরোপা।
দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে রেয়ালকেই এগিয়ে রাখা হচ্ছিল এই ম্যাচে। যদিও ম্যাচের আগে বার্সেলোনা কোচ শাভি এর্নান্দেস বলেছিলেন, লড়াই হবে ‘ফিফটি-ফিফটি’। ‘ফেভারিট কেউ নয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন আনচেলত্তিও। তবে মাঠের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত দাপট দেখাল তার দলই।
পুরো ম্যাচে ৪২ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য মোট ১৮টি শট নেয় রেয়াল, যার ৯টি ছিল লক্ষ্যে। বার্সেলোনার ১২ শটের ৭টি লক্ষ্যে ছিল।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ নিয়ে টানা ২১ ম্যাচে অপরাজিত আনচেলত্তির দল, জিতল টানা সাত ম্যাচে। সেমি-ফাইনালে আতলেতিকো মাদ্রিদকে ৫-৩ গোলে হারিয়েছিল তারা। ওই আতলেতিকোর বিপক্ষেই চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত একমাত্র হারের স্বাদ পেয়েছে রেয়াল, গত সেপ্টেম্বরে লা লিগায়।
শুরুতে বল পজেশনে রেখে খেলতে থাকে রেয়াল। প্রথম তিন মিনিটে দুবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতিও ছড়ায় তারা। পঞ্চম মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায় বার্সেলোনা। কাছ থেকে ফেররান তরেসের শট ঠেকান ডিফেন্ডার দানি কারভাহাল। পরের মিনিটে ভিনিসিউসের পাসে দুরূহ কোণ থেকে জুড বেলিংহ্যামের শট আটকে দেন রোনাল্দ আরাউহো।
৭ থেকে ১০- এই তিন মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে রেয়ালকে চালকের আসনে বসিয়ে দেন ভিনিসিউস। দুবারই ‘হাই-লাইন’ ডিফেন্সের চড়া মূল্য দিতে হয় বার্সেলোনাকে।
প্রথমটায় সতীর্থের পাস মাঝমাঠে পান বেলিংহ্যাম। তাকে ঘিরে রেখেছিলেন বার্সেলোনার তিন খেলোয়াড়। এর মাঝ থেকেই ইংলিশ মিডফিল্ডারের বাড়ানো বল ধরে অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিউস, এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে কাটিয়ে গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
গোল করার পর দুই হাত উপরে তুলে লাফিয়ে উঠে নিজের ‘আইডল’ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর মতো ‘সিউ’ উদযাপন করেন ভিনিসিউস। রেয়ালের সাবেক ফরোয়ার্ড রোনালদো এখন খেলেন সৌদি আরবের দল আল নাস্রের হয়ে। দলটির ঘরের মাঠ এই কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়াম।
পরেরবার কারভাহাল নিজেদের অর্ধ থেকে পাস দেন রদ্রিগোকে। ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে তিনি পাস দেন অন্য পাশে স্বদেশি ভিনিসিউসের উদ্দেশে। ছুটে গিয়ে স্লাইডে ফাঁকা জালে বল পাঠান ২৩ বছর বয়সী তারকা। এর মাঝে রদ্রিগোর শট ইনাকি পেনা না ঠেকালে স্কোরলাইন হতে পারত ৩-০!
দ্বাদশ মিনিটে বক্সের সামনে থেকে তরেসের ভলি ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ২১তম মিনিটে আরেকটি সুযোগ পান তিনি। এবার স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডের শট বাইরে যায়। ২৭তম মিনিটে তার শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিন।
৩৩তম মিনিটে চমৎকার গোলে ব্যবধান কমান লেভানদোভস্কি। বাঁ দিক থেকে আলেহান্দ্রো বাল্দের ক্রস হেডে ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার ফেরলঁদ মঁদি। সেই বলেই বক্সের মাথা থেকে জোরাল ভলিতে জাল খুঁজে নেন পোলিশ তারকা। সেমি-ফাইনালে ওসাসুনার বিপক্ষে দলের ২-০ ব্যবধানে জয়েও একটি গোল করেছিলেন তিনি।
পাঁচ মিনিট পরই অবশ্য দুই গোলের লিড পুনরুদ্ধার করেন ভিনিসিউস। সফল স্পট কিকে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি। তাকেই বক্সে আরাউহো ফাউল করায় পেনাল্টি পেয়েছিল রেয়াল।
নিজের আগের ১৫ ক্লাসিকোয় ভিনিসিউসের গোল ছিল কেবল ৩টি, এবার এক ম্যাচে ৩৯ মিনিটের মধ্যেই করলেন ৩টি!
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে একটি সুযোগ পান পেদ্রি। চোট কাটিয়ে ফেরা এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের শট পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়।
ম্যাচে ফিরতে মরিয়া বার্সেলোনা ৬১তম মিনিটে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনে। সের্হি রবের্তো, তরেস ও পেদ্রিকে তুলে ফেরমিন লোপেস, জোয়াও ফেলিক্স ও লামিনে ইয়ামালকে নামান শাভি।
তবে তিন মিনিট পর বার্সেলোনার ঘুরে দাঁড়ানোর আশা আরও কঠিন করে তোলে রেয়াল। দলকে ৪-১ গোলে এগিয়ে নেন রদ্রিগো। ভিনিসিউসের পাস ক্লিয়ার করতে পারেননি ডিফেন্ডার জুল কুন্দে। কাছেই থাকা রদ্রিগো অনায়াসে জাল খুঁজে নেন।
৭১তম মিনিটে আরেকটি ধাক্কা খায় বার্সেলোনা। ভিনিসিউসকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন আরাউহো।
৮১তম মিনিটে বক্সে ঢুকে ফেলিক্সের নেওয়া জোরাল শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন লুনিন। বাকি সময়ে পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি আর কেউ। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই উল্লাসে মাতে রেয়াল শিবির।