ফোডেনের জোড়া গোলে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিটির ডার্বি জয়

লিগ টেবিলে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে ব্যবধান ১ পয়েন্টে নামিয়ে আনল পেপ গুয়ার্দিওলার দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2024, 05:32 PM
Updated : 3 March 2024, 05:32 PM

তীব্র সমালোচনার মুখে শুরুতেই দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আশা জাগালেন মার্কাস র‌্যাশফোর্ড। কিন্তু এরপর, দলটির আক্রমণভাগ যেন হারিয়ে গেল। একাধারে আক্রমণ শুরু করল ম্যানচেস্টার সিটি। ফল মিলতেই যা একটু দেরি হলো কেবল। দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ সব গোলে ডার্বি জয়ের উল্লাসে মাতল পেপ গুয়ার্দিওলার দল।

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে রোববার প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমের দ্বিতীয় ম্যানচেস্টার ডার্বি ৩-১ গোলে জিতেছে শিরোপাধারীরা। ফিল ফোডেনের জোড়া গোলের পর যোগ করা সময়ে তাদের তৃতীয় গোলটি করেন হলান্ড।

গত অক্টোবরে আসরে প্রথম দেখায় ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল সিটি। সেদিনও স্কোরলাইনে নাম ছিল এই দুজনের; হলান্ডের জোড়া গোলের পর শেষ দিকে একটি করেছিলেন ফোডেন।

এবারের জয়ে লিগ টেবিলে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে ব্যবধান ১ পয়েন্টে নামিয়ে আনল গুয়ার্দিওলার দল।

প্রথম মিনিটেই ইউনাইটেডের রক্ষণে হানা দেয় সিটি, দ্বিতীয় মিনিটে তারা আদায় করে নেয় কর্নার। দুই মিনিট বাদে আরেকটি আক্রমণে ডি-বক্সে জন স্টোন্স পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করে স্বাগতিকরা, তবে রেফারির সাড়া মেলেনি।

প্রথম পাঁচ মিনিটে প্রতিপক্ষের একচেটিয়া পজেশনের পর ইউনাইটেড আক্রমণ শাণালেও সে যাত্রায় কিছুই করতে পারেনি তারা। তবে অষ্টম মিনিটে দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে অসাধারণ এক গোলে সিটিকে স্তব্ধ করে দেন র‌্যাশফোর্ড।

ডি-বক্সের বাইরে প্রতিপক্ষের একজনের চ্যালেঞ্জের মুখে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কাটব্যাক করেন ব্রুনো ফের্নান্দেস। আর প্রথম ছোঁয়ায় ২৫ গজ দূর থেকে বুলেট গতির শট নেন র‌্যাশফোর্ড, বল ক্রসবারের নিচের অংশে লেগে জালে জড়ায়।

ছয় মিনিট পর দারুণ এক সুযোগ পেয়েও শেষ বাধা ভাঙতে পারেননি ফোডেন। ডি-বক্সে অরক্ষিত এই মিডফিল্ডারের শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন ইউনাইটেড গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা। চার মিনিট পর তিনি ফোডেনের আরেকটি প্রচেষ্টাও রুখে দেন।

গোলের জন্য মরিয়া সিটির টানা আক্রমণের সামনে প্রথমার্ধে বেশ দৃঢ়তায় ঘর সামলে রাখে ইউনাইটেডের রক্ষণভাগ। ওনানাও ছিলেন তৎপর, ৩৩তম মিনিটে রদ্রির শটও ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে দেন তিনি।

গত মৌসুমের রেকর্ড গোলদাতা ও চলতি আসরেও গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে থাকা হলান্ড ৪৫তম মিনিটে যেভাবে সুযোগ নষ্ট করেন, তা অবিশ্বাস্য। ফোডেনের হেড পাস ছয় গজ বক্সে পেয়ে কেবল আলতো একটা টোকার দরকার ছিল; কিন্তু তিনি কিনা বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন। প্রচণ্ড হতাশায় ডাগআউটে মাথায় হাত উঠে যায় কোচ গুয়ার্দিওলার।

ওই একটি গোল বাদে, প্রথম ৪৫ মিনিটের লড়াইয়ে সিটির দাপট কতটা ছিল তার প্রমাণ মেলে পরিসংখ্যানেও। এই সময়ে মোট ১৭টি শট নিয়ে তিনটি লক্ষ্যে রাখে তারা, ১২টি কর্নারও আদায় করে নেয় দলটি; কিন্তু জালের দেখা মেলেনি। বিপরীতে প্রথমার্ধে গোলের উদ্দেশ্যে দুটি শট নিয়ে একটি লক্ষ্যে রাখতে পারে ইউনাইটেড এবং তাতেই গোল।

বিরতির পরও একই ধারায় চলতে থাকে লড়াই। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে ৫৬তম মিনিটে সমতায় ফেরে সিটি। রদ্রির পাস ধরে কিছুটা আড়াআড়ি গিয়ে দূরপাল্লার জোরাল শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ফোডেন।

গোলটি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক তৈরি হতে পারে। এর আগে পাল্টা আক্রমণে ছিল ইউনাইটেড। কাইল ওয়াকারকে পেছনে ফেলে র‌্যাশফোর্ড বল নিয়ন্ত্রণে নিলেও প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে পড়ে যান তিনি, তাতে ফ্রি-কিকের জোরাল আবেদন করে তারা। অবশ্য র‌্যাশফোর্ড খুব সহজেই পড়ে গিয়েছিলেন। ফোডেনের গোলের আক্রমণের সেখান থেকেই শুরু।

প্রতিপক্ষের ওপর প্রবল চাপ ধরে রাখার সুফল ৮০তম মিনিটে ফের পায় সিটি। নায়ক আবার ফোডেন। কেভিন ডে ব্রুইনের পাস ধরে বাঁয়ে হুলিয়ান আলভারেসকে বাড়িয়ে ফোডেন ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন। এরপর ফিরতি পাস ধরে একটু এগিয়ে কোণাকুণি শটে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান ২৩ বছর বয়সী ফুটবলার।

প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ফোডেনের এটা ষষ্ঠ গোল, কোনো একক দলের বিপক্ষে যৌথভাবে তার সর্বোচ্চ; ব্রাইটনের বিপক্ষে সমান ৬ গোল করেছেন ইংলিশ তারকা।

যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন হলান্ড। রদ্রির পাস ডি-বক্সে পেয়ে আসরে ১৮তম গোলটি করেন নরওয়ের তারকা।

সিটির জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৮৪ ম্যাচে ৮০ গোল হলো হলান্ডের, প্রিমিয়ার লিগে ৫৭ ম্যাচে ৫৪টি।

আর শুরুর ওই একমাত্র গোলের মুহূর্তটি ছাড়া প্রায় পুরো ম্যাচেই কোণঠাসা ছিল ইউনাইটেড। দ্বিতীয়ার্ধে তা ছিল আরও বেশি; এই সময়ে গোলের উদ্দেশ্যে একটিও শট নিতে পারেনি এরিক টেন হাগের দল।

যেখানে প্রায় ৭৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে পুরো ম্যাচে মোট ২৭টি শট নিয়ে আটটি লক্ষ্যে রাখে গত তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা।

২৭ ম্যাচে ১৯ জয় ও ৫ ড্রয়ে সিটির পয়েন্ট হলো ৬২। ১ পয়েন্ট বেশি নিয়ে শীর্ষে লিভারপুল।

এক ম্যাচ কম খেলে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আর্সেনাল। ২৭ ম্যাচে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে অ্যাস্টন ভিলা।

এবারের লিগে ইউনাইটেডের এটা ১১তম পরাজয়, গত মৌসুমের চেয়ে এরই মধ্যে যা দুটি বেশি। ১৪ জয় ও দুই ড্রয়ে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছে দলটি।

প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা এর আগে কেবল দুইবার আসরে ১২টি করে ম্যাচ হেরেছে, ওই দুইবারই কোচ ছাঁটাই হয়েছিলেন।