১২০ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের শেষ মুহূর্তে ব্যবধান গড়ে দিলেন তরুণ ফরোয়ার্ড আমাদ দিয়ালো।
Published : 17 Mar 2024, 11:14 PM
নাটকীয়তায় ঠাসা, রোমাঞ্চে ভরা এক লড়াইয়ের সাক্ষী হলো ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই আক্রমণের ঝড় তুলল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে তিন মিনিটের দুই গোলে ঘুরে দাঁড়াল লিভারপুল। ওই ব্যবধান ধরে রেখে দলটি যখন জয়ের পথে, তখনই ইউনাইটেডের গোল। অতিরিক্ত সময়েও হলো গোল-পাল্টা গোল। ১২০ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে শেষ মুহূর্তে ব্যবধান গড়ে দিলেন তরুণ ফরোয়ার্ড আমাদ দিয়ালো। অবিশ্বাস্য জয়ে এফএ কাপের সেমি-ফাইনালে পা রাখল এরিক টেন হাগের দল।
আসরের শেষ কোয়ার্টার-ফাইনালে রোববার ঘরের মাঠে ৪-৩ গোলে জিতেছে ইউনাইটেড।
স্কট ম্যাকটমিনের গোলে ইউনাইটেড এগিয়ে যাওয়ার পর বিরতির আগে পরপর দুবার জালে বল পাঠান লিভারপুলের আলেক্সিস মাক আলিস্তের ও মোহামেদ সালাহ। নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে সমতা টেনে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে টেনে নেন আন্তোনি।
সেখানে হার্ভি এলিয়টের গোলে ফের এগিয়ে যায় লিভারপুল। কিন্তু তাদের জয়ের আশা গুঁড়িয়ে দেয় মার্কাস র্যাশফোর্ড ও দিয়ালোর গোল।
ম্যাচের আগে ‘কে ফেভারিট’ প্রশ্নে অনেকেই এগিয়ে রাখেন লিভারপুলকে। অবশ্য এতে আপত্তি করারও তেমন কারণ ছিল না। মৌসুমের শুরু থেকেই যে ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছে ইউনাইটেড। তবে, এদিন দলটির পারফরম্যান্স ছিল সত্যিই নজরকাড়া।
ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল উপহার দিল চমৎকার পারফরম্যান্স। তাতেই দেখা মিলল এক ক্ল্যাসিক লড়াইয়ের। পরিসংখ্যানেও তা পরিষ্কার। বল দখলে এগিয়ে থাকা লিভারপুল গোলের উদ্দেশ্যে শট নেয় ২৫টি, আর ইউনাইটেড নেয় ২৮টি শট। লক্ষ্যে দুই দলেরই শট ছিল সমান ১১টি করে।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় ইউনাইটেড; কিন্তু ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েও দুর্বল শট নিয়ে হতাশ করেন অ্যারন ওয়ান-বিসাকা। চতুর্থ মিনিটে আবারও স্বাগতিকদের হানা, এবার মার্কাস র্যাশফোর্ডের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ফেরান কুইভিন কেলেহার।
দশম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোল আদায় করে নেয় টেন হাগের দল। র্যাশফোর্ডের পাস পেয়ে আলেহান্দ্রো গারনাচো কোনাকুনি শট নেন, গোলরক্ষক কেলেহার ঝাঁপিয়ে ঠেকালেও দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেননি। তার হাতে লেগে একটু ওপরে ওঠা বল গোলমুখে ফাঁকায় পেয়ে অনায়াসে জালে পাঠান ম্যাকটমিনে।
একের পর এক আক্রমণে প্রথম আধা ঘণ্টায় গোলের উদ্দেশ্যে আটটি শট নিয়ে ছয়টিই লক্ষ্যে রাখে ইউনাইটেড। সমানতালে পাল্টা আক্রমণ করছিল লিভারপুল, যদিও তেমন নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না তারা।
৩৫তম মিনিটে দ্বিগুণ হতে পারতো ব্যবধান; কিন্তু র্যাশফোর্ডের কাটব্যাক পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে ম্যাকটমিনের নেওয়া শট রক্ষণে প্রতিহত হয়। ওখান থেকে ওঠা প্রতি-আক্রমণে লুইস দিয়াসের দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা।
একটু পরই ইউনাইটেডের জালে বল পাঠান লিভারপুল মিডফিল্ডার ওয়াতারু এন্দো। তবে মুহূর্তেই তাদের উল্লাস থেমে যায়, অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান।
কিছুটা সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় ৪৪তম মিনিটে অবশেষে সমতায় ফিরতে পারে লিভারপুল। মাক আলিস্তেরের শট প্রতিপক্ষের একজনের পায়ে লেগে সামান্য দিক পাল্টে ঠিকানা খুঁজে পায়। ওনানা ঝাঁপিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও রুখতে পারেননি।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আবারও ইউনাইটেডের জালে বল পাঠিয়ে উল্লাসে মাতে লিভারপুল। বাঁ দিক থেকে দারউইন নুনেসের কোনাকুনি জোরাল শট দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন ওনানা; কিন্তু বল চলে যায় ছয় গজ বক্সের মুখে সালাহর পায়ে। ঠাণ্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিখুঁত শটে দলকে এগিয়ে নেন মিশরের স্ট্রাইকার।
বিরতির আগে পরপর দুই গোল খেয়ে যেন কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলে ইউনাইটেড। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ২৫ মিনিটে সেভাবে আক্রমণ শাণাতে পারেনি তারা।
৪৭তম মিনিটে তাদের শিবিরে ভীতি ছড়ায় লিভারপুল। নুনেসের পোস্ট ঘেঁষে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন ওনানা। ৬৩তম মিনিটে উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকারের আরেকটি শটও দারুণ নৈপুণ্যে ঠেকিয়ে দেন ক্যামেরুনের গোলরক্ষক।
ব্যবধান ধরে রেখে জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল লিভারপুল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট বাকি থাকতে চমৎকার গোলে চিত্রপট পাল্টে দেন গাসমুস হয়লুনের বদলি নামা আন্তোনি। বক্সে জটলার মধ্যে বল পেয়ে ঘিরে থাকা প্রতিপক্ষের একাধিক খেলোয়াড়ের মধ্যে থেকে ডান পায়ের শটে সমতা টানেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
দুই মিনিট পর আবারও এগিয়ে যেতে পারতো লিভারপুল। ডি-বক্সে ডান দিক থেকে দূরের পোস্টে ক্রস বাড়ান হার্ভি এলিয়ট, বল গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে গিয়ে লাগে পোস্টে।
চার মিনিট যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে ব্যবধান টেনে দিতে পারতেন র্যাশফোর্ড। কিন্তু, তার কোনাকুনি শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চদশ মিনিটে আরও একবার প্রতিপক্ষের দুর্ভাগ্য লিভারপুলের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। তরুণ ইংলিশ মিডফিল্ডার এলিয়টের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ক্রিস্তিয়ান এরিকসেনের পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়।
তবে, এবার আর চুপসে যায়নি ইউনাইটেড। ১১২তম মিনিটে সমতা টেনে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন র্যাশফোর্ড; ম্যাকটমিনের পাস বক্সে পেয়ে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
চলতে থাকে আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ। চার মিনিট পর আবারও দারুণ সুযোগ পান ম্যাকটমিনে; কিন্তু এবার আর লক্ষ্যে শট রাখতে পারেননি স্কটিশ মিডফিল্ডার।
অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিট পেরিয়ে শুরু হলো যোগ করা সময়। সম্ভাব্য টাইব্রেকারের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল লড়াই। আর তখনই প্রতিপক্ষকে স্তব্ধ করে দিলেন আমাদ।
প্রতিপক্ষের একটি কর্নার রুখে দিয়ে প্রতি-আক্রমণে ওঠে ইউনাইটেড। ক্ষিপ্র গতিতে বল পায়ে এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন গারনাচো, এরপর তিনি বল বাড়ান পাশে আমাদকে। ঠাণ্ডা মাথায় বাঁ পায়ের শটে দলকে সেমি-ফাইনালে তোলেন কোত দি ভোয়ার ২১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
গোল করার আনন্দে জার্সি খুলে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন আমাদ।
দিনের আরেক কোয়ার্টার-ফাইনালে লেস্টার সিটিকে ৪-২ গোলে হারায় চেলসি।
আগের দিন, শেষ আটের প্রথম দুই ম্যাচে উলভারহ্যাম্পটন ওয়ানডারার্সকে ৩-২ গোলে হারিয়ে কভেন্ট্রি সিটি ও নিউক্যাসল ইউনাইটেডকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি সেমি-ফাইনালে ওঠে।