দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত কোনো শিরোপা জিততে পারেননি ইংলিশ এই তারকা স্ট্রাইকার।
Published : 06 Apr 2024, 08:53 PM
সেই ২০০৯ সালে শুরু, হ্যারি কেইনের পেশাদার ক্যারিয়ারের পথচলা দেড় দশক হতে চলেছে। দীর্ঘ এই সময়ে অনেক রেকর্ড-কীর্তিতে নাম উঠেছে তার। বহু অর্জনে সমৃদ্ধ করেছেন ক্যারিয়ার। কিন্তু বড় এক আক্ষেপ রয়ে গেছে ইংলিশ তারকা স্ট্রাইকারের। এখন পর্যন্ত যে কোনো শিরোপা জিততে পারেননি তিনি।
টটেনহ্যাম হটস্পারের একাডেমি থেকে ক্লাবটির মূল দলে ২০০৯ সালে অভিষেক হয় কেইনের। ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের কয়েকটি ক্লাবে ধারে খেলার পর টটেনহ্যামেই থিতু হন তিনি। হয়ে ওঠেন দলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন। সেখানেই কাটিয়ে দেন ২০২৩ পর্যন্ত।
ওই সময়ে প্রিমিয়ার লিগে তিনবার পান মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বুট’ (২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০২০-২১ মৌসুমে), একাধিকবার জায়গা করে নেন বর্ষসেরা দলে, ব্যক্তিগত আরও অনেক পুরস্কার পান; কিন্তু দলগত কোনো শিরোপার দেখা পাননি তিনি।
ভাগ্য বদলের আশায়, শিরোপার খোঁজে ইংল্যান্ড ছেড়ে গত বছর জার্মানিতে পাড়ি জমান কেইন; বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে যোগ দেন বায়ার্ন মিউনিখে। সেখানে গিয়েও ভুড়িভুড়ি গোল করছেন তিনি। কিন্তু ‘শিরোপা দুর্ভাগ্য’ যে সেখানেও তাড়া করছে তাকে।
বায়ার্নে যোগ দেওয়ার দিনেই বহুকাঙ্ক্ষিত ট্রফিতে চুমু আঁকতে পারতেন কেইন। ওই দিনই ছিল জার্মান সুপার কাপের ফাইনাল, যে ট্রফি আগের ৭ বছরে ছয়বার জিতেছিল বায়ার্ন। কিন্তু এবার আর পেরে ওঠেনি তারা। মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় তাদের ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা উল্লাস করে লাইপজিগ। বদলি হিসেবে মাঠে নেমে আরও একবার শিরোপায় চুমু আঁকতে না পারার হতাশা সঙ্গী হয় কেইনের।
বায়ার্নের সুযোগ ছিল জার্মান কাপে শিরোপার জন্য লড়াই করার। কিন্তু সেখানেও উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে দলটি। প্রতিযোগিতাটিতে রেকর্ড ২০ বারের চ্যাম্পিয়নরা দ্বিতীয় রাউন্ডেই হেরে যায়, তৃতীয় স্তরের দল জাব্রুকেনের বিপক্ষে।
ব্যর্থতা তাদের ঘিরে ধরেছে বুন্ডেসলিগায়ও। জার্মানির শীর্ষ এই প্রতিযোগিতার রেকর্ড ৩৩ বারের চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন, গত ১১ বারের শিরোপা জয়ী তারা, সেই দলই এবার রীতিমত ধুঁকছে।
একের পর এক হোঁচটে শিরোপা লড়াইয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে তারা। ২৭ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে দুইয়ে আছে দলটি। সমান ম্যাচ খেলে তাদের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট এগিয়ে শীর্ষে বায়ার লেভারকুজেন।
সবশেষ গত সপ্তাহে, বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-০ গোলে হারের পর বায়ার্ন কোচ টমাস টুখেল লিগ শিরোপা ধরে রাখার আশা ছেড়ে দেন।
বায়ার্নের জন্য এখন শিরোপা জয়ের বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে কেবল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছে তারা। শেষ আটে তাদের প্রতিপক্ষ ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল, যারা চলতি মৌসুমে রয়েছে দারুণ ছন্দে। প্রথম লেগে আগামী মঙ্গলবার মুখোমুখি হবে দুই দল।
আর্সেনাল চ্যালেঞ্জ উতরে গেলেও সেমি-ফাইনালে বায়ার্নকে লড়তে হবে আরও শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে। যেখানে তারা পেতে পারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন রেয়াল মাদ্রিদ কিংবা শিরোপাধারী ম্যানচেস্টার সিটিকে।
২০১২ সালের পর এই প্রথম কোনো শিরোপা না জিতেই মৌসুম শেষ করার শঙ্কায় বায়ার্ন। একই সঙ্গে আশঙ্কা জেগেছে কেইনের শিরোপা ছাড়া আরেকটি মৌসুম কাটানোর।
শুধু ক্লাব ক্যারিয়ারেই নয়, জাতীয় দলের হয়েও ভাগ্যকে পাশে পাচ্ছেন না কেইন। সবশেষ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের খুব কাছে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ফাইনালে টাইব্রেকারে তারা হেরে যায় ইতালির বিপক্ষে। ২০১৮ বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনাল খেলা দলটি ২০২২ এর বিশ্ব আসরে ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বাদ পড়ে।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে অবশ্য বরাবরই দারুণ উজ্জ্বল ৩০ বছর বয়সী কেইন। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বায়ার্নের হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচে ৩৭ গোল করেছেন তিনি। গড়েছেন একাধিক ক্লাব রেকর্ড।
আর লিগে তার গোল ২৭ ম্যাচে ৩১টি। বুন্ডেসলিগায় এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ৪১ গোলের রেকর্ডটি থেকে ১০ গোল দূরে তিনি। বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার আগে ২০২০-২১ মৌসুমে কীর্তিটি গড়েছিলেন রবের্ত লেভানদোভস্কি।
টটেনহ্যামে এক যুগের বেশি ক্যারিয়ারে ৪৩৫ ম্যাচ খেলে ২৮০টি গোল করেন কেইন। ক্লাবটির হয়ে এত গোল করতে পারেননি আর কেউ। দুইশ গোলই আছে আর কেবল একজনের।
ইংল্যান্ডের জাতীয় দলেও ৮৯ ম্যাচে তার গোল ৬২টি। দেশটির হয়ে যা সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড।
প্রিমিয়ার লিগে তিনবার গোল্ডেন বুট জয়, টটেনহ্যামের বর্ষসেরা ফুটবলারের স্বীকৃতিও তিনবার, ইংল্যান্ড জাতীয় দলের বর্ষসেরার পুরস্কার দুইবার- এত এত ব্যক্তিগত সাফল্য তার; তারপরও অপ্রাপ্তির শূন্যতাটাই অনেক বড় হয়ে উঠেছে কেইনের ক্যারিয়ারে। শিরোপা জয়ই যে শেষ কথা।
কেউ কেউ বিষয়টিকে এমনভাবে দেখতে শুরু করেছেন, তিনি যেখানে যাচ্ছেন, সেই দলই হারিয়ে ফেলছে সাফল্যের পথ। তাইতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এর নাম দিয়েছেন ‘কেইন-কার্স’ বা ‘কেইন-অভিশাপ।‘