দলের রক্ষণাত্মক কৌশল সফল হওয়ার পর গর্বিত কোচ কার্লো আনচেলত্তি বললেন, ম্যানচেস্টার সিটিকে তাদের মাঠে হারাতে অন্য আর কোনো পথ ছিল না।
Published : 18 Apr 2024, 11:36 AM
ম্যাচ শুরুর আগে সম্ভাবনায় অনেক অনেক এগিয়ে ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যাচজুড়ে অসংখ্যবারই মনে হয়েছে, জয়টা তাদের কেবল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলটা যে রেয়াল মাদ্রিদ! হারার আগে তারা হারে না, শেষের আগে হাল ছাড়ে না। নিজেদের কৌশলে আস্থা রেখে, দাঁতে দাঁত চেপে চোয়ালবদ্ধ লড়াই করে শেষ পর্যন্ত আরও একবার সফল ইউরোপের রাজারা। কোচ কার্লো আনচেলত্তিও তাই উচ্ছ্বসিত ও গর্বিত।
রেয়ার মাদ্রিদ কোচের সেই গর্বের অনেকটা জুড়েই আছে দলের কৌশলে সফল হওয়ার স্বস্তি। ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে রেয়াল কখনও জিততে পারেননি। শক্তি-সামর্থ্য-ছন্দ, সব দিক থেকে পেপ গুয়ার্দিওলার দল ফেভারিট ছিল এবারও। তাদেরকে দমিয়ে রাখতে এ দিন পুরোপুরি রক্ষণাত্মক খেলার পথ বেছে নেন তিনি।
কৌশলটা বিপজ্জনক ছিল। সিটি যেভাবে স্রোতের মতো আক্রমণ করে, তাতে রক্ষণ দেয়াল ভেঙে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। সেই ঝুঁকিটা নিয়েই শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে রেয়াল। ম্যাচের ৬৮ শতাংশ সময় বল ছিল ম্যানচেস্টার সিটির কাছে। ম্যাচে মোট ১৮টি কর্নার পায় তারা। অবিশ্বাস্যভাবে, রেয়াল কর্নার আদায় করতে পারে কেবল ১টি। সেটিও ম্যাচে ১০৬তম মিনিটে। সিটি গোলে শট নেয় ৩৩টি, লক্ষ্যে ছিল ৯টি। রেয়াল গোলে শট নিতে পারে কেবল ৮টি। লক্ষ্যে ছিল ৩টি। কিন্তু ম্যাচে প্রথম গোল করে আনচেলত্তির দলই। রক্ষণেও নিজেদের কাজটা তারা ঠিকঠাক করে যায় শেষ পর্যন্ত।
ম্যাচ শেষে তৃপ্তি আর গর্ব নিয়ে আনচেলত্তি বললেন, এই সিটিকে তাদের মাঠে হারাতে রক্ষণাত্মক খেলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় আর মনে ধরেনি তার।
“এই ধরনের বড় ম্যাচে যখন দল যখন নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দেয় ও সবকিছু ত্যাগ করে, তা ভালোবাসি আমি। আমার বিশ্বাস, ম্যানচেস্টার সিটিকে এখানে হারাতে অন্য আর কোনো উপায় ছিল না।”
“একটাই পথ ছিল এখান থেকে জিতে আসার, নিজেদের সুযোগ কাজে লাগানো, আমরা তা করেছি শুরুতে এবং এরপর রক্ষণ ভালোভাবে সামলানো। এই সিটির বিপক্ষে আর কোনো পথ নেই। আমরা যা করেছি, তাতে আমি গর্বিত।”
এতটা নিচে নেমে রক্ষণের পরিকল্পনা অবশ্য প্রাথমিকভাবে ছিল না আনচেলত্তির। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয় তার দল। ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ানোর পর জয় নিয়ে আর সংশয় ছিল না বলেই দাবি রেয়াল কোচের।
“আমরা শুরুটা করেছিলাম ভালো, গোল করে ফেলি শুরুর দিকেই। কিন্তু এরপরই খেলাটা বদলে যায়। ওরা প্রবল চাপে ফেলে আমাদের। এতটা নিচে নেমে রক্ষণ সামলানোর পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। তবে এটি তো বড় ম্যাচ, এরকম পরিস্থিতি আসতেই পারে এবং তখন লড়াই করা জরুরি।”
“পেনাল্টি শুটআউটে যখন ম্যাচ গড়াল, আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে আমরা যাব পরের ধাপে। পরিশ্রম দিয়ে হোক বা ত্যাগ দিয়ে বা যে কোনোভাবে, জয়টাই আসল।”
পরিস্থিতি, ইতিহাস, প্রতিপক্ষ এবং আরও অনেক কিছু বিরুদ্ধ থাকার পরও শেষ পর্যন্ত জয়ী দলটার রেয়াল মাদ্রিদ। আনচেলত্তির মতে, এসব ম্যাচই এই ক্লাবের বিশেষত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক।
“আমরা রক্ষণ খুব, খুব ভালোভাবে সামলেছি আজকে। লড়াইটা ছিল স্রেফ টিকে থাকার। মাদ্রিদ এরকমই এক ক্লাব, যখন মনে হয় কোনো উপায় নেই, তখনই আমরা কোনো একটি পথ খুঁজে নেই।”
“আগেও অনেকবার আমরা এটা দেখেছি রেয়াল মাদ্রিদের ক্ষেত্রে… এই জার্সি, এই ব্যাজ এটিই কিছু একটা বের করে আনে ভেতর থেকে। কেউ যা ভাবতে পারে না, তেমন কিছুই করে দেখায় এই ক্লাব।”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সফলতম ক্লাবের ১৫তম শিরোপা জয়ের অভিযানে সেমি-ফাইনালের প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখ।