স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে দুইবার জালে বল পাঠিয়েও কোনো গোল পায়নি বেলজিয়াম, এর মধ্যে দ্বিতীয়টি জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্কের।
Published : 18 Jun 2024, 11:01 AM
স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে দুই দফায় বল জালে পাঠিয়ে একটিও গোল পায়নি বেলজিয়াম। এর প্রথমটি নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। এটি নিয়ে আপত্তি থাকার কথা নয় বেলজিয়ামেরও। তবে দ্বিতীয়টি নিয়ে যথেষ্টই আলোচনার খোরাক আছে। এবারের ইউরোর প্রথম বিতর্কও এটি ঘিরেই। হ্যান্ডবল ছিল নাকি ছিল না?
‘ই’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সোমবার স্লোভাকিয়ার কাছে বিস্ময়করভাবে হেরে যায় ফেভারিট বেলজিয়াম। রক্ষণের ভুলে ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই গোল হজম করে বসে তারা। সেই গোলটিই শেষ পর্যন্ত জিতিয়ে দেয় স্লোভাকিয়াকে।
তবে দুই বার স্লোভাকিয়ার জালে বল পাঠান রোমেলু লুকাকু। দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে আমাদু ওনানার কাছ থেকে বল পেয়ে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। রেফারি প্রথমে গোলের বাঁশি বাজান। তবে পরে ভিএআর দেখে গোল বাতিল করেন। পরিষ্কার অফসাইডই ছিল সেটি।
দ্বিতীয়টি ছিল নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার মিনিট চারেক আগে। এবার ভিএআর দেখে রেফারি গোল দেননি বিল্ড-আপে লোইস ওপেন্ডা হ্যান্ডবল করায়।
বদলি হিসেবে মাঠে নামা ফরোয়ার্ডের হাতে বল লাগে পরিষ্কারভাবেই। ফুটবলের নতুন প্রযুক্ত ‘স্নিকো’ ব্যবহার করে সেটি নিশ্চিতও হওয়া যায়। তবে ফুটবলে হাতে বল লাগা মানেই তো হ্যান্ডবল নয়!
ওপেন্ডার হাতে যখন বল লাগে, তখন তিনি গতিময়তায় ছিলেন। স্লোভাক ডিফেন্ডার দেনিস বাবরোর চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে তিনি লুকাকুকে বল বাড়িয়ে দেন।
অনেকের মতেই, এই হ্যান্ডবলের সিদ্ধান্তটি একটু বেশিই কঠিন বা রূঢ় ছিল। ইংলিশ রেডিও বিশ্লেষক ডিন অ্যাশটন তাদেরই একজন।
“সিদ্ধান্তটি ভুল মনে হচ্ছে। আমার মতে, খুব… খুবই ভুল। সে (ওপেন্ডা) লড়াই করছিল প্রতিপক্ষের ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা ডিফেন্ডারের সঙ্গে।”
বেলজিয়ান টিভিতে একইরকম অভিমত জানান রেঞ্জার্সের বেলজিয়ান ফুটবলার সিরিয়েল ডেসার্স।
“আমার মনে হয় না এটা হ্যান্ডবল। কারণ, ওই সুযোগটির ওপর কোনো প্রভাব এটির ছিল না। সিদ্ধান্তটি আমাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক ও হতাশাময়।”
বেলজিয়ামের কোচ ডমিনিকো তেদেস্কো অবশ্য ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এটা নিয়ে কোনোরকমের বিতর্কে জড়াতে চাননি।
“ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর আমি ন্যায্য পরাজিত দল হিসেবেই থাকতে চাই এবং এই প্রসঙ্গ থেকে দূরে থাকতে চাই।”
খেলার আইনে বলা আছে, আক্রমণে থাকা কোনো ফুটবলার গোল করার চেষ্টায় থাকার সময় তার হাতে যদি বল লাগে, সেখানে হাত বা বাহুর অবস্থান যেমনই থাকুক, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, কিংবা যে কোনো অবস্থাই থাকুক, গোলটি বৈধ হবে না।
তবে গতবছর উয়েফা জানায় যে, কোনো বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বা দিক বদলে বল এসে কারও হাতে লাগলে, সেক্ষেত্রে তারা হ্যান্ডবলের নিয়মটি শিথিল করতে চায়। ওপেন্ডার ক্ষেত্রে লম্বা পাস থেকে বল পাওয়ার সময় বল মাঠে বাউন্স খাওয়ার পর তার আঙুলে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। যদিও টিভি রিপ্লে থেকে কোনোভাবেই তা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়নি।
বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লড়াইয়ে ওপেন্ডাকে আটকে রাখার চেষ্টাও করছিলেন বাবরো। এতও হ্যান্ডবল হওয়া নিয়ে সংশয়ের জায়গা বেড়ে যায়।
হ্যান্ডবলের নিয়ম এখনও পর্যন্ত ফুটবলের সবচেয়ে বিতর্কিত প্রসঙ্গগুলির একটি। যুগ যুগ ধরেই নানাসময়ে এটি নিয়ে বিতর্ক, সংশয় ও প্রশ্ন চলে আসছে। ফুটবল অনুসারীদের মধ্যে তো এসব আলোচনা আছেই, কোচ-ফুটবলার ও ফুটবল সংশ্লিষ্টরাও এসব নিয়ে নানা সময়ে নানা অভিমত জানিয়ে আসছেন।
এমনকি উয়েফা সভাপতি আলেকসান্দের চেফেরিন স্বয়ং একবার বলেছিলেন, “হ্যান্ডবল হয়েছে নাকি হয় নি, এটা অনেক সময় গোটা বিশ্বের কেউ বুঝতে পারে না।”