ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের ৬৬ বছর আগের কীর্তি ছাপিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আরও কয়েকটি রেকর্ডে নাম লেখালেন স্পেনের লামিনে ইয়ামাল।
Published : 15 Jul 2024, 11:43 AM
ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সবার আগে ডাক পড়ল লামিনে ইয়ামালের। টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ ফুটবলারের পুরস্কার জিতলেন যে তিনিই! ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরি বললেন, ‘বিস্ময়ের কিছু নেই, বরং খুবই অনুমিত।’ সেরা তরুণ ফুটবলার তো বটেই, আসরের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার তাকে দেওয়া হলেও বিস্ময় হয়তো খুব একটা জাগত না। এবারের ইউরোতে তিনি এতটাই আলো ছড়িয়েছেন।
তবে প্রতিনিয়ত বিস্ময় জাগায় তার বয়স। তার স্কিল ও পরিণত পারফরম্যান্স দেখে কে বলবে, মাত্রই ১৭ পূর্ণ করলেন তিনি!
পেশাদার ফুটবল পা রাখার পর থেকেই সবচেয়ে কম বয়সে নানা কিছু করার অনেক রেকর্ড তার ধরা দিয়েছে। তেমন আরও দুটি রেকর্ড গড়লেন তিনি ফাইনালের শুরু ও শেষে। আরও এক দফায় ছাড়িয়ে গেলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে।
সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে যখন মাঠে নেমেছিলেন ইয়ামাল, তখনও রেকর্ড একটি হয়েছিল। বিশ্বকাপ কিংবা ইউরোতে সবচেয়ে কম বয়সে খেলার রেকর্ড গড়েছিলেন পেলেকে ছাপিয়ে। এবার ইউরোর ফাইনালেও তিনি গড়লেন সেই কীর্তি। ইউরো বা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ফাইনাল খেলা ও শিরোপাজয়ী ফুটবলার এখন ইয়ামালই।
১৯৫৮ বিশ্বকাপ ফাইনাল জয়ের দিন পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৯ দিন। ব্রাজিলের ৫-২ গোলের জয়ে সেদিন দুটি গোলও করেছিলেন ওই যুগের বিস্ময় বালক। এবার স্পেনের বিস্ময় বালক ফাইনাল খেললেন ও জিতলেন ১৭ বছর পূর্ণ হওয়ার পরদিনই। গত শনিবার ছিল তার জন্মদিন।
ফাইনালে ইয়ামাল গোল করতে পারেননি। তবে তার দারুণ পাস থেকেই দলের প্রথম গোলটি করে নিকো উইলিয়ামস।
একটি গোল করার পাশাপাশি এই আসরে চারটি গোলে সহায়তা করেছেন ইয়ামাল। ১৯৮০ আসর থেকে এই পরিসংখ্যান রাখা শুরুর পর এক আসরে সবচেয়ে বেশি ‘অ্যাসিস্ট’ করার রেকর্ড এটিই।
একই ইউরোর কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে গোলে অবদান (গোল করা বা করানো) রাখা প্রথম ফুটবলারও তিনিই।
এত রেকর্ড-অর্জন অবশ্য সেভাবে স্পর্শ করছে না ইয়ামালকে। দলের শিরোপা জয়ের উল্লাসেই তিনি বুঁদ। কিশোরসুলভ চপলতায় বললেন, এখন দ্রুত দেশে ফিরতে চান।
“এটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার এবং স্পেনে ফিরে উদযাপন করতে তর সইছে না আমার। এর চেয়ে ভালো জন্মদিনের উপহার আর পেতে পারতাম না আমি। এখন দেশে ফিরতে চাই ও পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে চাই।”
ইয়ামালের পাস থেকে উইলিয়ামসের ওই গোলের পর ইংল্যান্ডের হয়ে দারুণ গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান কোল পালমার। তবে ৮৬তম মিনিটে মিকেল ওইয়ারসাবালের গোল আনন্দে ভাসায় স্পেনকে।
দলের এই মানসিকতার কথা ম্যাচ শেষে আলাদা করেই বললেন ইয়ামাল।
“ওরা সমতা ফেরানোর পর অনেক চাপ তৈরি করেছে। তবে জানি না, এই দলটা কী দিয়ে তৈরি! আমরা সবসময়ই ফিরে আসি দারুণভাবে।”
ইয়ামাল মুগ্ধ সতীর্থদের মানসিকতায়, আর তাকে দেখে মুগ্ধ সবাই। মাত্র সাত বছর বয়সে বার্সেলোনার একাডেমিতে পা রাখেন তিনি। প্রতিভার ঝলক দিয়ে সেখানে সবার চোখ ধাঁধিয়ে দেন দ্রুতই। বার্সেলোনার মূল দলে অভিষেক হয়ে যায় স্রেফ ১৫ বছর বয়সে। ১৬ বছর বয়সে গত মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ খেলে ফেলেন ৫০টি!
এখন এই ১৭ বছর বয়সে তিনি ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন। মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি প্রতিটি দিনই। কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের কণ্ঠে ফুটে উঠল যেন গোটা ফুটবল বিশ্বের কথাই, “আমরা একজন জিনিয়াসকে দেখেছি।”
পেলের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ায় ইয়ামালকে অভিনন্দন জানিয়ে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেছে দা পেলে ফাউন্ডেশন।