উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিপক্ষে জোড়া গোল করা এই ফরোয়ার্ড পিছু ফিরে তাকালেন, শোনালেন সামনের ভাবনাও।
Published : 24 Oct 2024, 07:35 PM
উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরে আড়ালে থাকা তহুরা খাতুন এবার ভারতের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানের জয়ে দুইবার জালের দেখা পেয়েছেন। উঠে এসেছেন পাদপ্রদীপের আলোয়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাক্ষাৎকার দিতে বসে এই ফরোয়ার্ড পিছু ফিরে তাকালেন। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়া, না পাওয়া; দলের ভেতরে চলা বিভেদের স্রোতসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বললেন মন খুলে।
চলমান সাফে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা (২টি) এখন তহুরা। একটি গোল আছে শামসুন্নাহার জুনিয়রের। ব্যক্তিগত লক্ষ্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ছোট বেলার একটা স্মৃতি আওড়ে ২১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড বললেন, নিজেকে মেলে ধরার জেদ তার ছিল সবসময়ই।
ভারতের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জোড়া গোল করলেন…
তহুরা খাতুন: আসলে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের প্রথম ম্যাচটা ড্র হয়েছিল; আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু গোল পাইনি। অনেক সুযোগ এসেছিল, কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি। তবে এটা আমরা মাথায় রাখিনি। যা হওয়ার হয়ে গেছে, প্রথম ম্যাচ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে সবার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস ছিল যে, আমরা…একজন আরেকজনকে বলতেছিলাম, সবাই সবার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব, বাকিটা আল্লাহ জানে।
আমরা চেষ্টা করেছি, প্রথমে প্রান্তির (আফিদা খন্দকার) গোলটা হয়েছে। আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। এরপর ঋতুপর্ণা ক্রস করেছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও ও অনেকগুলো ক্রস করেছিল, কিন্তু সুযোগগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারিনি, তো ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে যদি এমন ক্রস আসে, কাজে লাগানোর একটা চেষ্টা নিজের ভেতরে ছিল। আপনারাও দেখেছেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। গোলকিপার রূপনা (চাকমা) থেকে শুরু করে সবার দলের জয়ে অবদান ছিল। এর মধ্যে ঋতুর (ঋতুপর্ণা) একটা ক্রসে আমি গোল করেছি, এরপর ছোট শামসুন্নাহারের বলটা নামিয়ে দেওয়ার পর আরেকটা করেছি। অনেক ভালো লেগেছে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মরিয়া চেষ্টা করেও আপনারা গোল পাচ্ছিলেন না, ভারতের বিপক্ষে এজন্য কি শুরু থেকে আরও মরিয়া ছিলেন?
তহুরা খাতুন: সবাই-ই তো চেষ্টা করে। কেউ তো আর চায় না, মাঠে নেমে খারাপ খেলতে। সবার মধ্যেই ওই চেষ্টা ছিল, যেভাবেই হোক আমাদের ভারতের বিপক্ষে জিততে হবে কিংবা ড্র করতে হবে। সবাই চেষ্টা করেছে, সবার অনেক অবদান ছিল। প্রথম ম্যাচেও সবাই চেষ্টা কম করেনি, সুযোগও এসেছিল, কিন্তু আমরা সেটা কাজে লাগাতে পারিনি। কাল সুযোগ এসেছে এবং সেটা কাজে লাগাতে পেরেছি।
গত সাফে আপনি আক্রমণভাগে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি, পাদপ্রদীপের আলোতেও ছিলেন না। এবার কী নিজেকে মেলে ধরার তাড়না বেশি ছিল?
তহুরা খাতুন: আসলে আমি যখন খেলা শুরু করি, তখন আমার যে প্রথম কোচ ছিলেন, মফিজ স্যার, জুয়েল ভাই, রাজীব দাদা, কুদ্দুস স্যার, বিশেষ করে মফিজ স্যার ভালো বলতে পারবে…ছোট বেলায় একবার আমার একটা পা অনেকটা কেটে গিয়েছিল, রক্ত বের হচ্ছিল, কিন্তু ওই সময়ও আমি স্যারকে বলেছি, আমি খেলব। খেলার প্রতি আমার অনেক আগ্রহ এবং আত্মবিশ্বাস…নিজের কাছে থাকে।
সবসময় ভাবি, যদি সুযোগ পাই, তাহলে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব, সেটা মাঠে বদলি হিসেবে নামি বা সেরা একাদশে নামি। সবসময় চেষ্টা করি আমার সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার।
তাহলে তহুরা কী ছোটবেলা থেকেই ভীষণ জেদি?
তহুরা খাতুন: জেদি বলতে, আমি মানুষের সাথে জেদ করি না। নিজের সাথে নিজেই জিদ করি। আমি যেটা পারি, সেটা নিয়ে কখনও হাল ছাড়ি না, এরকম আরকি। আমি যে জিনিসটা পারি বা চেষ্টা করলে পারব, সেই চেষ্টাটা করি।
আমরা একটা ছবি দেখেছি, প্রথম গোলের পর আফিদাকে মুখে হাত দিয়ে আদর করছেন মারিয়া মান্দা। অথচ, কদিন ধরে সিনিয়র বনাম জুনিয়র নিয়ে অনেক কথা চাউর হয়েছে।
তহুরা খাতুন: আমি আসলে জানি না, এই বিষয়গুলো কে বলেছে। তবে আমার জানা মতে, সিনিয়রেরা কখনও এ ধরনের কথা বলেনি। জুনিয়ররা কেউ বলতে পারবে না, এরকম কখনও হয়েছে। সিনিয়র খেলোয়াড়রা বাড়িতে গেলে অনেক সময় জুনিয়রদের জন্য রান্না করে খাবার নিয়ে আসে। জুনিয়ররাও নিয়ে আসে। একজন আরেকজনের সাথে রুমে থাকে, যেভাবে মজা করে, দলের ভেতরে এরকম (দ্বন্দ্ব-বিভেদ) কোনো কিছু নেই।
ওই ইস্যুতে কী আপনি বলতে চাচ্ছেন, কোনোভাবে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে?
তহুরা খাতুন: হ্যাঁ, অবশ্যই একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে কোনো কিছুই নেই। এটা সত্যি।
চলতি টুর্নামেন্টে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা আপনি? ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী আপনার?
তহুরা খাতুন: লক্ষ্য বলতে, আমরা যেহেতু গতবারের চ্যাম্পিয়ন, এবারও আমাদের লক্ষ্য থাকবে শিরোপা জেতা। আরও দুইটা ম্যাচ আছে, আমাদের চেষ্টা থাকবে সেমি-ফাইনালটা আগে জেতা। যদি আমরা নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি, ইনশাল্লাহ আমরা জিতব। ফাইনাল তো অবশ্যই আমাদের টার্গেটে আছে।
ব্যক্তিগত লক্ষ্যটাও জানতে চাইছিলাম…
তহুরা খাতুন: আমরা যেহেতু ফরোয়ার্ডে খেলি, আমাদের লক্ষ্য থাকে, যদি সুযোগ আসে, সেটা কাজে লাগানো…ঠাণ্ডা মাথায়।
ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, একটা ঈদে আপনারা বাফুফের ক্যাম্পে ছিলেন, এখন কী মনে হয়, ছোট বেলায় বাড়ি ছেড়ে আসার সেই সাহসী সিদ্ধান্ত…।
তহুরা খাতুন: যখন ক্যাম্পে আসি, আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। ছোটন (গোলাম রব্বানী) স্যার, লিটু (মাহবুবুর রহমান) স্যার, অনন্যা (মাহমুদা আক্তার) ম্যাডাম, উনারা ছিলেন। মা-বাবা যেমন, উনারা আমাদের তেমন করে দেখভাল করতেন। বিশেষ করে ছোটন ও লিটু স্যার, উনাদের নিয়ে আমরা কখনই বলতে পারব না, উনারা আমাদের জন্য কিছু করেননি।
তখন তো খুব ছোট ছিলাম। ডাইনিংয়ে যেতাম। স্যারেরা আপেল, কমলা, কলা এগুলো আমাকে (বেশি করে) দিতেন, যেহেতু আমার ওজন তখন খুব কম ছিল। আসলে স্যারদের কখনও ভুলতে পারব না। আমাদের জন্য তাদের অবদান কম নয়।
ছোট বেলার তহুরা আর আজকের তহুরার মধ্যে পার্থক্য কি?
তহুরা খাতুন: আগে হয়ত অনেক কিছু জানতাম না, বুঝতাম না। এখন অনেক কিছু বুঝি, জানি। অনেক কিছু শিখছি সিনিয়রদের কাছ থেকে, জুনিয়রদের কাছ থেকেও। এগুলোই।
তহুরা কি এই দলের সাবিনা খাতুনের মতো আইকন হতে চায়?
তহুরা খাতুন: সবার মধ্যেই একটা চেষ্টা থাকে (আইকন হওয়ার), জানি না, সেটা হতে পারব কিনা। তবে চেষ্টা করব।