সেমির মঞ্চে এমবাপে-হাকিমির বন্ধুত্ব ‘ভোলার’ লড়াই

পিএসজির এই দুই সতীর্থের মধ্যে রয়েছে দারুণ বন্ধুত্ব।

কিলিয়ান এমবাপে (বামে) ও আশরাফ হাকিমি। 

ক্লাব ফুটবলে পিএসজির হয়ে দুজন খেলেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে ও মরক্কোর আশরাফ হাকিমির মধ্যে গড়ে উঠেছে দারুণ বন্ধুত্বও। তবে বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালের লড়াই তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিপক্ষ শিবিরে। আসছে মাঠের লড়াইয়ে তাই দুজনকে ভুলে যেতে হবে বাইরের সম্পর্কের কথা। লড়তে হবে দেশের স্বপ্ন পূরণের জন্য।

ইন্টার মিলান ছেড়ে ২০২১ সালে পিএসজিতে যোগ দেন হাকিমি। অল্প সময়েই এমবাপের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। একসঙ্গে ছুটি কাটানো, ফ্লাইটে পাশাপাশি বসা, ভিডিও গেমস খেলা - সব মিলিয়ে সতীর্থ ছাপিয়ে তাদের সম্পর্কটা হয়ে গেছে বন্ধু-ভাইয়ের মতো। বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে খবরে এসেছে যে, প্যারিসের ক্লাবটিতে ফরাসি ফরোয়ার্ডের সবচেয়ে কাছের বন্ধু রাইট-ব্যাক হাকিমিই।

বিশ্বকাপে জাতীয় দলের হয়ে মুখোমুখি হলে অভিজ্ঞতাটা কেমন হবে, তা নিয়ে আগে থেকেই তাদের মধ্যে খুনসুটি হয়। গত জানুয়ারিতে কাতার সফরে এসেছিল পিএসজি। ওই সময়ে ক্লাবটির পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বিশ্ব সেরার মঞ্চে ফ্রান্স ও মরক্কোর সম্ভাব্য লড়াই নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন তারা।

এমবাপে বলেন, “মরক্কোর বিপক্ষে লড়াইয়ে আমাকে আমার বন্ধুকে শেষ করে দিতে হবে।” হাসিমুখে হাকিমি জবাব দেন, “আমি তোমাকে কিক মারতে যাচ্ছি।”

মজার ছলে তাদের করা সেই আলাপচারিতা যে সত্যি হয়ে যাবে, ওই সময়ে তা হয়তো এমবাপে বা হাকিমি কারো ভাবনাতেই ছিল না। কারণ? মরক্কো যে বিস্ময়ের পর বিস্ময়, অঘটনের পর অঘটন ঘটিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠে আসবে, বিশ্বকাপের আগে কেই বা ভেবেছিল।

আসর শুরু হতেই সেই সব অভাবনীয় ঘটনার জন্ম দিতে থাকে দলটি। ক্রোয়েশিয়া ও বেলজিয়ামকে পেছনে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নকআউট পর্বে শক্তিশালী স্পেন ও পর্তুগালকে ছিটকে তারা প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে সেমি-ফাইনালে।

নতুন চমকের আশায় এবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফরাসিদের মুখোমুখি হবে তারা। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ১টায়।

কোয়ার্টার-ফাইনালে মরক্কোর জয়ের পর হাকিমিকে অভিনন্দন জানিয়ে দুটি টুইট করেন এমবাপে। একটিতে বন্ধুর সঙ্গে তার ছবি, যা এই বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে তোলা। আরেকটি শুধু ‘আশরাফ হাকিমি’ লিখে এবং সঙ্গে পেঙ্গুইন, হার্ট শেপ ও ক্রাউনের তিনটি ইমোজি দিয়ে।

এই পেঙ্গুইন ইমোজির সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি বিশেষ দিকও। স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে মরক্কোর জয়সূচক পেনাল্টি জালে পাঠিয়ে পেঙ্গুইনের মতো করে উদযাপন করেন হাকিমি। এই একই উদযাপন তিনি পিএসজিতে করে থাকেন এমবাপে ও স্প্যানিশ ডিফেন্ডার সের্হিও রামোসের সঙ্গে।

তবে বুধবারের লড়াইয়ে ব্যক্তিগত সব সম্পর্কের আবেগ পাশে রেখেই এমবাপের বিপক্ষে লড়বেন হাকিমি।

চলতি আসরে এখন পর্যন্ত পাঁচ গোল করা ফরাসি তারকাকে আটকে রাখার মূল দায়িত্ব সামলাতে হবে ২৪ বছর বয়সী হাকিমিকেই। ক্লাব সতীর্থের কঠিন পরীক্ষাই যে তিনি নেবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটি গোল হজম করে জমাট রক্ষণের প্রমাণও দিয়েছে মরক্কো। আর এতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ফুলব্যাক হাকিমির।

শেষ পর্যন্ত এই দুই বন্ধুর লড়াইয়ে কে কেমন করবেন, সেটিই হয়তো ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। নিজ নিজ দলের জন্য তাদের একে অন্যকে একবিন্দু ছাড় না দেওয়ার যুদ্ধ ম্যাচে যোগ করতে পারে বাড়তি রোমাঞ্চ।