মেসি-এমবাপে-নেইমারের নৈপুণ্যে পিএসজির জয়

ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাকাবি খাইফাকে হারিয়েছে ক্রিস্তফ গালতিয়েরের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2022, 09:00 PM
Updated : 14 Sept 2022, 09:00 PM

ইসরায়েলের চ্যাম্পিয়ন ম্যাকাবি খাইফা হাজির হলো প্রবল চ্যালেঞ্জ নিয়ে। ইউরোপ সেরার মঞ্চে পুরোটা সময় পিএসজির বিরুদ্ধে লড়াই করে গেল সমানে-সমানে। কিন্তু পেরে উঠল না আক্রমণত্রয়ী লিওনেল মেসি, নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে। অ্যাওয়ে ম্যাচে জয়ের খরা কাটাল ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বুধবার রাতে ‘এইচ’ গ্রুপের ম্যাচে ৩-১ গোলে জিতেছে ক্রিস্তফ গালতিয়েরের দল।

জারুন শিরির গোলে পিছিয়ে পড়ার পর মেসির রেকর্ড গড়া গোলে সমতা ফেরায় পিএসজি। পরে আর্জেন্টাইন তারকার পাস থেকেই এমবাপের গোলে এগিয়ে যায় দলটি। শেষ দিকে জালের দেখা পান নেইমারও।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে টানা পাঁচ ম্যাচে জয়শূন্য থাকার পর জয়ের দেখা পেল পিএসজি। টানা ১০ অ্যাওয়ে ম্যাচে জাল অক্ষত রাখতে ব্যর্থ দলটি জিতল অনেক কষ্টে।

সুযোগ কম আসেনি ৪৪ শতাংশ সময় বল দখলে রাখা খাইফার। গোলের জন্য তারা নেয় ১৩ শট, যার পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। চমৎকার সব সেভে সেগুলোকে জালে যেতে দেননি পিএসজি গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মা। পিএসজির ১৬ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে, এর তিনটি যায় জালে।

নিজেদের ইতিহাসে কেবল তৃতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরার মঞ্চে খেলা খাইফা শুরু থেকে লড়াই করে সমান তালে। মেসি-নেইমার-এমবাপেদের ঠেকিয়ে রাখতে খেলতে থাকে বাড়তি পরিশ্রম করে।

গোলের জন্য প্রথম শট নেয় স্বাগতিকরাই। দশম মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে আবু ফানির বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন পিএসজি গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মা।  

পরের মিনিটে নুনো মেন্দেসের দারুণ থ্রু বলে সুবর্ণ সুযোগ আসে এমবাপের সামনে। কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও তার শরীরেই শট নেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড।

পঞ্চদশ মিনিটে নেইমার বল হারালে সুযোগ এসে যায় খাইফার সামনে। ফ্রানৎজি পিরতের শট মার্কিনিয়োসের গায়ে লেগে চলে যাচ্ছিল দূরের পোস্ট দিয়ে। ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান দোন্নারুম্মা।

৯ মিনিট পর আর বাঁচাতে পারেননি তিনি। মার্কো ভেরাত্তি বল হারালে পেয়ে যান ডোলেভ হাজিজিয়া। তার দুর্দান্ত ক্রসে জারুন শিরির ভলি জড়ায় জালে। কিছুই করার ছিল না দোন্নারুম্মার।

প্রতিপক্ষের রক্ষণে গিয়ে ভুগছিল পিএসজি। বারবার বল হারাচ্ছিলেন এমবাপে। তবে ৩৭তম মিনিটে সমতা ফেরানো গোলে বড় অবদান তারই।

এমবাপেকে বল বাড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যান মেসি। শুরুতে শট নেওয়ার কথা ভাবলেও প্রতিপক্ষের বাধার মুখে পারেননি ফরাসি ফরোয়ার্ড। পরে পায়ের কারিকুরিতে এগিয়ে বাইলাইন থেকে চেষ্টা করেন মেসিকে খুঁজে নেওয়ার।

কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা খাইফার ফরাসি ডিফেন্ডার ডিলান বাতুবিনসিকার পায়ে লেগে যায় মেসির কাছেই। বাঁ পায়ের আড়াআড়ি শটে বাকিটা সারেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’ অর জয়ী।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি মেসির ১২৬তম গোল। সঙ্গে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গোল করলেন টানা ১৮ আসরে এবং গড়লেন ৩৯টি ভিন্ন দলের বিপক্ষে গোলের রেকর্ড।

দলীয় একটি রেকর্ড স্পর্শ করেছে পিএসজি। রিয়াল মাদ্রিদের পর প্রথম দল হিসেবে ইউরোপ সেরার মঞ্চে গ্রুপ পর্বে টানা ৪০ ম্যাচে অন্তত একটি করে গোল গোল করেছে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।

বিরতির আগে এগিয়েও যেতে পারত পিএসজি। মেসির কর্নারে হেড একটুর জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মার্কিনিয়োস। পরের মিনিটে শেরির শট ঠেকিয়ে স্বাগতিদের এগিয়ে যেতে দেননি দোন্নারুম্মা।

৬৩তম মিনিটে নেইমারের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের ভেতর থেকে শট নেন মেসি। ঝাঁপিয়ে কোনোমতে ব্যর্থ করে দেন স্বাগতিক গোলরক্ষক। পরের মিনিটে মেসির আরেক শট ঠিক মতো ফেরাতে পারেননি তিনি, তবে গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন শন গোল্ডবার্গ।

পিএসজির একের পর এক আক্রমণের সুফল মেলে ৬৮তম মিনিটে। দুর্দান্ত এক পাসে এমবাপেকে খুঁজে নেন মেসি। প্রথম স্পর্শে দূরের পোস্ট ঘেঁষে বল ঠিকানায় পাঠান ফরাসি ফরোয়ার্ড। ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি খাইফা গোলরক্ষক।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজির হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডে এদিনসন কাভানির সঙ্গে চূড়ায় বসলেন এমবাপে। দুই জনেরই গোল ৩০টি।

আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে জমা ওঠা ম্যাচে পিএসজির নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করেন নেইমার। ৮৮তম মিনিটে ভেরাত্তির উঁচু করে বাড়ানো বল পেয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে পাঠান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।

ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতাটিতে পিএসজির হয়ে এই প্রথম একই ম্যাচে গোল পেলেন মেসি, এমবাপে ও নেইমার।

টানা দ্বিতীয় জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে পিএসজি। গ্রুপের অন্য ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে ইউভেন্তুসকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বেনফিকা। পর্তুগিজ দলটিও পেয়েছে টানা দ্বিতীয় জয়।